ঘুরে আসুন সিলেটের নতুন জলাবন বড় জুরি-ছোট জুরি
সূর্য অস্ত যাওয়ার তখনও বেশ খানিকটা বাকি। পাখির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। ডাহুক, কানাবক, ঘুঘু, মাছরাঙা, বালিহাঁসসহ নাম না জানা বিচিত্র সব পাখির কলরব। দিনের আলো নিভে যাওয়ার পর ভেসে আসে শেয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক। একেবারে লাগোয়া বড় জুরি ও ছোট জুরি হাওরকে প্রকৃতি সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার করগ্রামের হাওর যেন আরেক জলাবন রাতারগুল। নতুন করে পরিচিতি পাওয়া এই জলাবন এরই মধ্যে পর্যটকদের নজরে এসেছে।
শতবর্ষী অগণিত হিজল, কড়ই গাছের আঁকাবাঁকা শাখার মতো বনের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে পুটিজুরী নদী। বর্ষায় চারদিকে অথৈ পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল, করচ, বরুণ, শেওড়াসহ দেশি পানিবান্ধব নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি। গাছের মধ্যে আবার হিজলের সংখ্যাই বেশি। নদীতে রয়েছে হরেক রকমের মাছের রাজত্ব। সাপ, বিচ্ছু, কচ্ছপ, গুইসাপসহ রয়েছে উভচর প্রাণী। পাশে ঘন ইকড় আর খাগ-ছনের ঝোপে শেয়ালের ছোটাছুটি। সন্ধ্যা নামলে নেউল ও বনবিড়াল বেরিয়ে পড়ছে খাবারের নেশায়।
শুস্ক মৌসুমে পানি নেমে গেলে সবুজে ছেয়ে থাকে পুরো এলাকা। সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি তেল-গ্যাসের জন্য পরিচিত। শ্রীপুর, সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র, লাল শাপলার রাজ্য, হরিপুরের গ্যাসকূপ, নীল জলের সারী নদী, লালাখাল চা বাগানের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হন পর্যটকরা। এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে করগ্রামের বড় জুরি ও ছোট জুরি। চলতি মৌসুমে এই জলাবনে অনেক পর্যটকের পা পড়েছে। স্থানীয় কামাল আহমদ জানান, যখন সময় পাই তখন কিছু সময় বনটিতে ঘুরতে আসি। এখানকার প্রকৃতি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
করগ্রামের নাছির রাসেল, আবদুল কুদ্দুছ, সফিকুল, শাহজালাল ভূঁইয়া ইমনসহ অনেকের মতে, এই হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য জলাবন রাতারগুলকেও হার মানায়। এ দুটি হাওর ঘুরে আসা প্রবাসী সুলেমান বলেন, বাড়িতে এসে বন্ধুদের নিয়ে দেখে এসেছি। বর্ষায় এলে আরও ভালো লাগত। সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রধান সমন্বকারী আবদুল হাই আল-হাদী জানান, বড় জুরি ও ছোট জুরি দুটিকে যদি পর্যটনের আওতাভুক্ত করা হয়, তাহলে পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়বে। তবে তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষারও আহ্বান জানান।
প্রায় দুই হাজার একর আয়তনের বড় জুরি ও ছোট জুরি হাওর সরকারি মালিকানায় রয়েছে। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পূর্ব পাশে হওয়ায় জাফলং, শ্রীপুর, লাল শাপলার রাজ্য এবং লালাখালে ঘুরতে আসা পর্যটকরা সহজেই ঘুরে যেতে পারবেন। তবে কোনোভাবেই যেন এটি মানুষের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত না হয়, এ আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তারা মনে করেন, পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠলে এই হাওরের প্রকৃতি ও প্রাণীকুল ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাতারগুলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এমন ঝুঁকিতে পড়েছে।
বর্ষা মৌসুমে সিলেট-তামাবিল সড়কের হেমু করিসের ব্রিজ বা দামড়ী ব্রিজ থেকে নৌকায় ঘণ্টা খানেক সময় পূর্ব দিকে এবং শুকনো মৌসুমে দরবস্ত বাজার থেকে কানাইঘাট রাস্তা দিয়ে করগ্রাম রাস্তা ধরে ২০ থেকে ২৫ মিনিটেই পৌঁছা যায় হাওর দুটিতে।