জীবন যাত্রা

যে “ভালো” কাজগুলো করলে নষ্ট হয়ে যাবে আপনাদের সম্পর্ক

যে “ভালো” কাজগুলো করলে নষ্ট হয়ে যাবে আপনাদের সম্পর্ক

তিটি মানুষ যেমন আলাদা, তেমনি প্রতিটি ভালোবাসার সম্পর্কেও থাকে স্বকীয়তা। কিন্তু আমাদের মাঝে থাকা অনেক পুরনো ধ্যানধারণার কারণে আমরা ভালো মনে করে কিছু কাজ করে থাকি যেগুলো আসলে সম্পর্কের জন্য ভীষণ খারাপ।

ভালোবাসার মানুষের সাথে সম্পর্কে কী করতে হবে, কী না করতে হবে এ ব্যাপারে আমাদের শিখিয়ে দেবার কেউ নেই। স্কুলে এ ব্যাপারে শেখানো হয় না, বাবা-মায়ের সম্পর্ক দেখেও আসলে খুব একটা বোঝা যায় না। এ কারণে প্রচলিত কিছু “নিয়ম” আমরা মেনে চলি। কিন্তু এমন কিছু রীতি আছে যেগুলো আসলে উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি করে। এ কারণে অনেকের সম্পর্কেই থাকে অস্বাস্থ্যকর একটা ধাঁচ। বর্তমান সময়ে মনস্তত্ববিদেরা গবেষণা করে দেখছেন, বেশ কিছু রীতি আছে যেগুলো আমাদের বাদ দেওয়াই ভালো এবং এগুলোর বদলে কী করা যেতে পারে সেগুলোও জানা যায় তাদের থেকে। সাধারণত আমরা যাকে “রোমান্টিক” বলে মনে করি এমনই কিছু অভ্যাস আসলে আমাদের বাদ দেবার সময়ে হয়ে এসেছে।

১) হিসেব রাখা
ভাবছে, কিসের হিসাব?এটা হলো ভুলের হিসাব। সঙ্গী অতীতে কি ভুল করেছেন, কী করে আপনাকে কষ্ট দিয়েছেন তার হিসাব রাখেন আপনি। এরপর ঝগড়ার সময়ে এই কথা টেনে আনেন। বিগত মাসে/বছরে কে কয়টা ভুল করলো, এমন একটা হিসাব যদি আপনাদের মাঝে থেকে থাকে তবে এখনই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন এর চিন্তা। আপনার মনে হতে পারে, আমার অমুক বন্ধুও তো তার প্রেমিক/স্বামির সাথে এমন হিসেব রেখে চলে তবে আমি করলে দোষ কি? জেনে রাখুন, সবাই করছে বলেই কাজটি ঠিক এমন চিন্তা ভুল। অতীতের ভুলের জন্য কেন আপনি সঙ্গীকে ক্রমাগত কষ্ট দিয়ে যাবেন? শুধু তাই নয়, তার ভুলটাকে মনে রাখতে রাখতে আপনার মনটাই বিষিয়ে উঠছে, তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না?

২) হেঁয়ালি করা
নিজের কোনো কথা বা ইচ্ছাকে সরাসরি না বলে হেঁয়ালি করে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। তার কোনো কাজ আপনার ভালো লাগলো না, আপনি তা সরাসরি না বলে উল্টো এটাসেটা করে তার মেজাজ খারাপ করে দিলেন। এমনভাবে দুজনের মাঝে যোগাযোগের ঘাটতি তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, আপনাদের মাঝে যদি বোঝাপড়া ভালো থাকে তবে এভাবে হেঁয়ালি করার কোনো দরকারই পড়ে না। তাই এমন কাজ না করে বরং দুজনের মাঝে আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

৩) সম্পর্ক ভাঙ্গার হুমকি
“তুমি ওই কাজ আবার করলে কিন্তু আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো না”- কী, চেনা চেনা লাগছে কথাটা? অনেকেই সঙ্গীকে বশে আনার জন্য সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেয়। সম্পর্কটাকে এভাবে ব্যবহার করা ভীষণ অন্যায়। সঙ্গীর কোনো কাজ পছন্দ না হলে, বা তার থেকে কিছু চাইলে আপনি সরাসরি বলুন। দুজনের মাঝে ঝগড়া হতেই পারে, কিন্তু নিজের ফায়দার জন্য এভাবে সম্পর্কটাকে টেনে আনবেন না।

৪) নিজের আবেগের জন্য সঙ্গীকে দোষারোপ
ধরুন আপনার দিনটা খুব খারাপ যাচ্ছে। আপনি চাইছেন সঙ্গী আপনাকে সময় দিক। কিন্তু তিনিও অনেক ব্যস্ত, আপনাকে কোনোভাবেই সময় দিতে পারছেন না। এমন সময়ে কী করবেন? বেশিরভাগ মানুষই আচ্ছামত সঙ্গীর ওপর ঝাল ঝাড়েন। সঙ্গীকে বলেন তার জন্যই দিনটা এমন খারাপ যাচ্ছে। এমনটা করা কিন্তু খুব স্বার্থপরতার লক্ষণ। আপনার দিন খারাপ যাবার দায় তাকে নিতে হবে কেন? নিজের আবেগের ভার নিজেই নিন। তারা যদি আপনার মন ভালো করতে পারে, আপনাকে সময় দিতে পারে ভালো, না দিতে পারলেও দোষের কিছুই নেই তা মনে রাখুন।

৫) রোমান্টিক ঈর্ষা
প্রেমিক যখন অন্য এক সুন্দরীর দিকে তাকায়, তার প্রশংসা করে, নিজের সুন্দরী বান্ধবীর সাথে কথা বলে তখন ঈর্ষায় জ্বলে যান অনেক নারী। তেমনিভাবে প্রেমিকা যদি তার ছেলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়, তাদের সাথে এখানে ওখানে ঘুরতে যায়, হাসাহাসি করে তাহলেও ঈর্ষায় পুড়ে যান পুরুষ। এখানেই ব্যাপারটা থেমে যায় না, বরং এ ব্যাপারটা নিয়ে পরে সঙ্গীর সাথে ভীষণ মনোমালিন্য করেন তারা। “অমুক বন্ধুর সাথে এতো হেসে কথা বলবে না, অমুক মেয়ের সাথে এতো ঘুরতে যাওয়া কিসের” এমন কথাগুলো শুনতে পাওয়া যায় সবসময়েই। শুনে রাখুন, সঙ্গীর জীবন এভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা কখনো সফল হয় না। বরং এর ফল হয় মারাত্মক। অযথা এমন ড্রামা না করে সঙ্গীর ওপর আস্থা রাখুন। তিনি যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন তবে এক ডজন নারী/পুরুষ বন্ধু থাকলেও আওনার চিন্তার কিছু নেই।

৬) সমস্যা ঠিক করতে উপহার
সম্পর্কে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু সেই সমস্যা ঠিক করতে উভয় পক্ষের মাঝে সমঝোতা দরকার। এর বদলে সমস্যাটাকে ধামাচাপা দিতে আপনি সঙ্গীকে বাইরে খেতে নিয়ে গেলেন, কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেলেন, কিনে দিলেন দামি কিছু জিনিস। এতে সাময়িকভাবে তিনি চুপ থাকলেও সমস্যাটার আসলে কোনো সমাধান হলো না। এই কাজ বারবার করতে থাকলে সমস্যার পাহাড় জমে যাবে আপনাদের মাঝে আর একটা সময়ে সেই পাহাড় আপনারই ওপর ধ্বসে পড়বে।

মূল: 6 toxic relationship habits most people think are healthy, Mark Manson, Business insider

আরও পড়ুন ::

Back to top button