রাজ্য

হটস্পট হাওড়া থেকে এসেছেন, তাই প্রসব যন্ত্রণা দেখেও ফিরিয়ে দিল এনআরএস! ঘরেই প্রসব, মৃত সদ্যোজাত

হটস্পট হাওড়া থেকে এসেছেন, তাই প্রসব যন্ত্রণা দেখেও ফিরিয়ে দিল এনআরএস! ঘরেই প্রসব, মৃত সদ্যোজাত

 

করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউন সর্বত্র। চিহ্নিত করা হচ্ছে হটস্পট। কিন্তু তার খেসারত যে এভাবে দিতে হবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি হাওড়ার তরুণী! অভিযোগ, আসন্নপ্রসবা সেই তরুণীকে ঢুকতেই দেয়নি এনআরএস-এর প্রসূতি বিভাগ! বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে সেখানেই প্রসব হয়, মৃত্যু হয় সদ্যোজাতের। অমানবিকতার চরম অভিযোগ উঠল চিকিত্‍সকদের বিরুদ্ধে! ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্য ভবন।

এনআরএস সূত্রের খবর, শনিবার গাইনি এমার্জেন্সির ছ’নম্বর ইউনিটে যাঁরা ডিউটিতে ছিলেন, তাঁদের তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হতে পারে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকালই হাওড়াকে করোনা সংক্রমণের রেড জোন বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজও নবান্নে বৈঠক করে মুখ্যসচিব জানান, হাওড়া নিয়ে যতটা সম্ভব কড়া নজরদারি রাখছেন তাঁরা।

সেই হাওড়া থেকেই আজ, শনিবার এনআরএস-এ গিয়েছিলেন আসন্নপ্রসবা তরুণী। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হাওড়ায় বাড়ি শুনে নাকি নাকি প্রসূতি বিভাগে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি তাঁকে! রাত ন’টায় বাড়ি ফিরে অন্য হাসপাতালে যাবেন হবলে ঠিক করেন, কিন্তু তখনই প্রসব হয়ে যায় সন্তান, মারাও যায় সেই সদ্যোজাত।

তরুণীর পরিবারের দাবি, তাঁরা হাতজোড় করে অনুরোধ করেন তরুণীকে দ্রুত ভর্তি নেওয়ার জন্য। অভিযোগ, তাঁদের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যেতে বলা হয়। অনেক অনুরোধের পরেও ভর্তি করানো হয়নি তরুণীকে। উল্টে অভিযোগ, গাইনি বিভাগের ইমারজেন্সির দায়িত্বে থাকা চিকিত্‍সকদের মধ্যে থেকে কেউ সাদা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখানে লিখে সই করে দিন যে আপনাদের রোগী এবং তার যে সন্তান জন্মাবে তাদের করোনা হলে হাসপাতাল দায়ী নয়।’

এখানেই শেষ নয়। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, উপস্থিত চিকিত্‍সকরা আরও বললেন, ‘বাচ্চা জন্মানোর পরে ১৪ দিন আপনারা কেউ আসতে পারবেন না। আমরা মা ও বাচ্চাকে আইসোলেশনে রেখে দেব, কারণ আপনারা হাওড়া থেকে এসেছেন।’ ওই আইসোলেশন কোনও চিকিত্‍সা হয় না- এমনটা বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

তরুণী জানান, তিনি এই পরিস্থিতিতে কেঁদেও ফেলেন। বারবার অনুনয় করেন পেটের সন্তানের জন্য অন্তত তাঁকে ভর্তি নিতে। তাঁর অভিযোগ, এই সময়ে কিছু চিকিত্‍সক রাজি হলেও, একদল চিকিত্‍সক কিছুতেই রাজি হন না, উল্টে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘হাওড়া রেড জোন। আমরা কিছুতেই এই রিস্ক নেব না। যে কোনও কেউ বললেও নেব না।’

তরুণীর দাবি, তিনি বারবার বলেছেন তাঁর কোনও উপসর্গই নেই। তাঁর সন্তানের জন্ম দেওয়া বেশি জরুরি, কিন্তু কেউ কোনও কথাই শুনতে চাননি। শেষমেশ প্রসব যন্ত্রণা নিয়েই এনআরএস থেকে ফিরে যান হাওড়ার বাসিন্দা ওই তরুণী। অন্য চিকিত্‍সকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য হাসপাতালে যাবেন বলে প্রস্তুতিও নেন। গাড়িও ডাকা হয়।

এই সবটাতেই সময় লাগে, লকডাউনের কারণে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আচমকা প্রসব হয়ে যায় তরুণীর। সদ্যোজাতকে বাঁচানো যায়নি। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখার্জী জানান, তিনি ঘটনার কথা শুনেছেন। অভিযোগ পেয়েছেন। কথা বলেছেন প্রসূতি বিভাগের প্রধানের সঙ্গে। কারা আজ সন্ধ্যায় এমার্জেন্সির দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের নামের তালিকাও চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘এমন ভাবে কোনও আসন্নপ্রসবাকে ফেরানো যায় না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে অভিযুক্ত চিকিত্‍সকদের বিরুদ্ধে।’

সুত্র: THE WALL

আরও পড়ুন ::

Back to top button