করোনা ভাইরাসে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুর হার সর্বাধিক : কেন্দ্রীয় টিম
কলকাতায় দু’সপ্তাহ থাকার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো আন্তঃমন্ত্রক টিম আজ সোমবার দিল্লি ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দিয়ে তীব্র অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন ওই কেন্দ্রীয় টিমের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। চিঠিতে তিনি বলেছেন, আমরা দেখেছি ৩০ এপ্রিল রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যু এ বার থেকে দৈনন্দিন পরিসংখ্যানে স্থান পাবে। স্বচ্ছতা বজায় রাখার উদ্দেশে এটা বড় পদক্ষেপ ঠিকই।
কিন্তু এর থেকে আর একটা বড় ছবি পাওয়া যাচ্ছে। তা হল, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে ৮১৬ টি কোভিড পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ১০৫ জন। যার অর্থ পশ্চিমবঙ্গে কোভিডে মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ। যা গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই চড়া মৃত্যুর হার স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে যে পশ্চিমবঙ্গে টেস্টিং কম হচ্ছে এবং নজরদারিও অতিশয় দুর্বল। এখানেই থেমে থাকেনি কেন্দ্রীয় টিম।
তাদের স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ হল, পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে কত জন আক্রান্ত হয়েছেন বা কতজন মারা গিয়েছেন তা নিয়ে অসঙ্গতি ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। গত ৩০ তারিখের বুলেটিনে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গে ৫৪২ টি অ্যাকটিভ কেস রয়েছে, ১৩৯ জন চিকিত্সার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ৩৩ জন মারা গিয়েছেন। অর্থাত্ মোট ৭৪৪টি কেস। সে দিনই আবার রাজ্য সরকারের তরফে স্বাস্থ্য দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কেন্দ্রকে একটি চিঠিতে জানিয়েছেন, ওই দিন পর্যন্ত মোট ৯৩১টি পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছে।
অর্থাত্ পরিষ্কার ১৮৭টি কেসের তফাত্ হচ্ছে। ৩০ তারিখ বিকেলে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল আরও ৭২ জন কোভিড আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে যাঁদের মধ্যে কোমর্বিডিটি ছিল। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানের প্রতিফলন বুলেটিনে ছিল না। আবার ১ এবং ২ মে রাজ্য সরকার যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে তাতে মোট পজিটিভ কেস বা মৃত্যুর সংখ্যা ছিল না। কমিটির কথায়, পরিসংখ্যান প্রকাশের ক্ষেত্রে রাজ্য স্বচ্ছতা বজায় রাখবে, সেটাই বাঞ্ছনীয়।
মুখ্যসচিবকে দেওয়া চিঠিতে কেন্দ্রীয় টিম এমনকি এও বলেছে যে, রাজ্য সরকার হাসপাতালগুলিতে আরও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করুক। দরকার হলে অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য তাদের ভাতা দেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা যে সঠিক ভাবে সরকার জানাচ্ছে না সেই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ তো রয়েছেই।
সরকারি ও বেসরকারি একাংশ চিকিত্সকেরও অভিযোগ তাই। তার উপর মুর্শিদাবাদের সরকারি হাসপাতালের একটি বিজ্ঞপ্তি দেখেও অনেকে আতঙ্কিত। তাতে আবার বলা হয়েছে, মৃত্যুর কারণ হিসাবে কোভিড লেখা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে ধারনা বদ্ধমূল হয়েছে যে সরকার তথ্য গোপন করছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সংকটের সময়ে কোনও রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে যদি মানুষের এমন ধারনা তৈরি হয় তা বড় উদ্বেগের বিষয় বইকি।
কারণ, এতে সরকারের উপর মানুষের আস্থা টলে যাবে তা নয়। মানুষ নিজের এবং প্রিয়জনদের কথা ভেবে বিপন্ন বোধ করতে পারে। কেন্দ্রীয় টিমের পর্যবেক্ষণ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে এখনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যসচিব সাংবাদিক বৈঠক করলে এর জবাব তিনি দেন কিনা সেটা দেখার। তবে একটা বিষয় তাত্পর্যপূর্ণ।
তা হল, কেন্দ্রীয় টিম মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধেও প্রকারান্তরে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন। টিমের প্রধান তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষ সচিব অপূর্ব চন্দ্র বলেছেন, আমি আপনাকে সাতটি আর বিভিন্ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ৪ টি চিঠি লিখেছি। কোনও জবাব পাইনি। আমাদের এটাই মনে হচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় টিমের বিরোধিতা করার মানসিকতা নিয়ে চলছিল। দেশের অন্য রাজ্যেও কেন্দ্রীয় টিম গিয়েছে। কোনও রাজ্যে এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি।
সুত্র: THE WALL