রাজ্য

রাজ্যে আসছে ১০৫টি স্পেশাল ট্রেন রাজ্যে, প্রকাশ হল তালিকাও

রাজ্যে আসছে ১০৫টি স্পেশাল ট্রেন রাজ্যে, প্রকাশ হল তালিকাও

 

ওয়েবডেস্ক : ভিন্‌রাজ্যে আটকে থাকাদের ফেরানোর জন্য আরও ১০৫টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নিজেই টুইট করে জানালেন সে কথা। কবে কোন রাজ্যের কোন শহর থেকে পশ্চিমবঙ্গের কোন শহরের জন্য ট্রেন ছাড়ছে, তার তালিকাও প্রকাশ করে দেওয়া হল রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ৬ মিনিটে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ”আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, আমাদের রাজ্যের যাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে রয়েছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চাইছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য আমরা অতিরিক্ত ১০৫টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি।

‘ মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন যে, আগামী দিনগুলিতে এই ট্রেনগুলি দেশের নানা প্রান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গের লোকজনকে নিয়ে রওনা হয়ে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছবে।

মুখ্যমন্ত্রী নিজের টুইটেই রাজ্য সরকারের একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করেছেন। কবে কোন রাজ্যের কোন শহর থেকে পশ্চিমবঙ্গের কোন শহরের জন্য ট্রেন ছাড়বে, তার বিশদ বিবরণ সেই লিঙ্কে রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফেও বিশেষ ট্রেনের কথা জানানো হয়েছে। এ রাজ্যের বাসিন্দারা অন্য যে সব রাজ্যে আটকে রয়েছেন, সেই সব রাজ্যের সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই এই ট্রেনগুলি চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।

যে বিশেষ ট্রেনগুলি ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে এসেছে, সেগুলি ছাড়াও এই অতিরিক্ত ১০৫টি ট্রেনের বন্দোবস্ত হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক, তীর্থযাত্রী, পর্যটক-সহ যাঁরাই রাজ্যের বাইরে গিয়ে লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছেন এবং ফিরতে চাইছেন, তাঁদের সকলের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়ানো হচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের আশ্বাস। সেই সংখ্যাটা ঠিক কত, তা অবশ্য রাজ্য সরকারের তরফে এখনও জানানো হয়নি।

বাইরে আটকে থাকাদের ফেরানোর বিষয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই যিনি সওয়াল করছেন, বহরমপুরের সেই সাংসদ তথা লোকসভায় প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর দফতরও কোনও সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি। ফলে এই অতিরিক্ত ১০৫টি ট্রেন চললেই রাজ্যে ফিরতে ইচ্ছুক সকলের ফেরার ব্যবস্থা হয়ে যাবে, নাকি এর পরেও আরও বিশেষ ট্রেন চালানোর প্রয়োজন হবে, তা এখনই পুরোপুরি স্পষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু ভিনরাজ্যে আটকে থাকা লোকজনের একটা বিরাট অংশ বাংলায় দ্রুত ফিরতে যে রকম ব্যগ্র, তাতে এই ১০৫টি বিশেষ ট্রেন আপাতত অনেকটাই সুরাহা করবে বলে রাজ্য সরকার মনে করছে।

পরিযায়ী শ্রমিক-সহ যাঁরা লকডাউনের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে রয়েছেন, তাঁদের ফেরানো নিয়ে বিতর্ক গত কয়েক দিন ধরে ক্রমশ বাড়ছিল। বুধবার বিকেল পর্যন্ত মোট ৭টি বিশেষ ট্রেন পরিযায়ীদের নিয়ে বাংলায় ফিরেছে। কিন্তু এই সংখ্যা যথেষ্ট নয় বলে বিরোধী দলগুলি বার বার অভিযোগ করছিল। তার মাঝেই অধীর চৌধুরী তোপ দাগেন রাজ্যের বিরুদ্ধে।

তিনি জানান রেলমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে, রাজ্যকে ট্রেন দিতে রেল প্রস্তুত, কিন্তু রাজ্য সরকার নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। রাজ্যের এই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে অধীর জানান। তার কয়েক দিন পরেই অমিত শাহের চিঠি চলে আসে নবান্নে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনিচ্ছা রয়েছে বলে সে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়।

অনবরত তোপের মুখে পাল্টা মুখ খোলে রাজ্যও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় রাজ্যের তরফে। তৃণমূলের তরফেও সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে অমিত শাহকে আক্রমণ করা হয়। রাজ্যের বিরুদ্ধে অমিত যে অভিযোগ তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়। সে বিতর্ক বেশ কয়েক দিন ধরে চলতে থাকে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতর বা মন্ত্রকের তরফ থেকে টুইট-পাল্টা টুইটও চলতে থাকে।

রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল দাবি করেন, তাঁর মন্ত্রকের হাতে যথেষ্ট সংখ্যক ট্রেন থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রেন চাইছে না। উত্তরপ্রদেশ ইতিমধ্যেই ৩০০-র বেশি ট্রেন ঢুকেছে, বিহারে ঢুকেছে ১৭০টি, জানান রেলমন্ত্রী। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কেন এখনও পর্যন্ত মাত্র ৭টি ট্রেন নিল? প্রশ্ন তোলেন গয়াল।

বুধবার বিকেল পর্যন্ত ক’টা ট্রেন পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে, সেই হিসেব দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে রাজ্য সরকার বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল যে, নবান্ন নিষ্ক্রিয় ছিল না। ইতিমধ্যেই রেলের সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় সেরে ১০৫টি বিশেষ ট্রেন সূচি তৈরি করা হয়ে গিয়েছে।

সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

আরও পড়ুন ::

Back to top button