ঝাড়গ্রাম

বেলপাহাড়ির প্রবীণ বাসিন্দা ও তাঁর মেয়ের তৎপরতায় বিরল প্রজাতির ক্যামেলিয়নকে জঙ্গলে ফেরাল বনদপ্তর

বেলপাহাড়ির প্রবীণ বাসিন্দা ও তাঁর মেয়ের তৎপরতায় বিরল প্রজাতির ক্যামেলিয়নকে জঙ্গলে ফেরাল বনদপ্তর

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: গাছের ডালে বসেছিল সবুজ রঙের বিরল প্রজাতির সরীসৃপ ‘ক্যামেলিয়ন’। বৃহস্পতিবার সকালে বাজার করে বাড়ি ফেরার সময় বাগানের লেবু গাছে ক্যামেলিয়নটিকে দেখে অবাক হয়ে যান বেলপাহাড়ির প্রবীণ বাসিন্দা পবিত্র মহন্ত। সঙ্গে সঙ্গে পবিত্রবাবু তাঁর মেয়ে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী পারমিতাকে ডেকে দেখান অদ্ভুতদর্শন সরীসৃপটিকে। বিষয়টি জানাজানি হতেই আশেপাশের বাসিন্দারাও ক্যামেলিয়নটিকে দেখার জন্য চলে আসেন। পাড়ার কয়েকজন কিশোর সরীসৃপটিকে পোষার জন্য নিয়ে যেতে চায়। পারমিতা অবশ্য জানিয়ে দেন, বন্যপ্রাণকে এভাবে আটকে রাখা অনুচিত। এই বিরল প্রজাতির সরীসৃপটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বন দফতরকে খবর দেন তিনি।

ঝাড়গ্রাম জেলার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী পারমিতা মহন্ত পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি জানালেন, ক্যামেলিয়ন প্রকৃতির বিস্ময়ও বলা যায়। এরা লম্বায় হয় এক ফুটের কাছাকাছি। খুব সহজে রং পরিবর্তন করতে পারে। লম্বা লেজের সাহায্যে ক্যামেলিয়ন কোনো কিছুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে পারে। পায়ের মাথায় তীক্ষ্ণ সুঁচালো আঙুলের মতো আছে। ওগুলোর সাহায্যে গাছের বাকল আঁকড়ে ধরতে পারে। লেজের সাহায্যে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরে এরা। পা দিয়ে অন্য শাখা ধরে ঝুলে থাকতে পারে। ক্যামেলিয়ন ধীরগতির এবং অলস। এরা শিকারের খোঁজে বের হয় না। শিকার তাদের নাগালের ভেতর না আসা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে। গাছের ডালে তারা স্থির হয়ে বসে থাকে। কারণ তাদের কোনো তাড়া নেই। পোকামাকড় ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ক্যামেলিয়নকে দেখে না। কারণ সে আশপাশের রংয়ের সঙ্গে তার রং মিশিয়ে ফেলে। সে নড়ে না। পোকামাকড় ও পতঙ্গ কাছে এলেই ক্যামেলিয়ন খুব দ্রুত তার আঠালো জিহ্বাটি ছুড়ে দিয়ে শিকারকে ধরে মুখে পুরে নেয়। তারপর সে আগের মতো আবার অপেক্ষা করতে থাকে।

এদিন ক্যামেলিয়নটিকে গাছ থেকে উদ্ধার করে পবিত্রবাবু ঘরের ভিতর ঝুড়ি চাপা দিয়ে রাখেন। বিকেলে বন বিভাগের কর্মীরা পবিত্রবাবুর বাড়িতে গিয়ে ক্যামেলিয়নটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরে বন দপ্তরের উদ্যোগে গভীর জঙ্গলে সরীসৃপটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পারমিতা বলেন, ‘‘বাবা এদিন প্রথমে ক্যামেলিয়নটিকে প্রথমে দেখতে পান। আমাদের পাড়ার বাসিন্দারা সবাই খুবই সচেতন। পাড়ার ছোট ছেলেরা ক্যামেলিয়নটিকে পোষার জন্য আব্দার করলেও তাদের যখন বোঝাই যে সেটিকে ছেড়ে দিতে হবে, তখন তারা কিন্তু কেউই আপত্তি করেনি।’’ পবিত্রবাবু বলেন, ‘‘বনকর্মীদের থেকে জানলাম, লকডাউনের ফলে দূষণ কমছে। তাই বন্যপ্রাণেরাও লোকালয়ে চলে আসছে। বেলপাহাড়ি এলাকার কাছেই রয়েছে জঙ্গল। সেখান থেকেই সম্ভবত সরীসৃপটি চলে এসেছিল বলে মনে করছেন বনকর্মীরা।’’ বাবা ও মেয়ের সচেতনতামূলক এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বনকর্মীরা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button