ঝাড়গ্রাম

ঝাড়গ্রামের গভীর জঙ্গলে পড়েছিলেন পাঁচ রাত, নিখোঁজ প্রৌঢ়কে উদ্ধার করল পুলিশ

ঝাড়গ্রামের গভীর জঙ্গলে পড়েছিলেন পাঁচ রাত, নিখোঁজ প্রৌঢ়কে উদ্ধার করল পুলিশ

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: একেবারে গল্পের মত! ৫ রাত জঙ্গলের গভীরে খাবার ও পানীয় জল ছাড়াই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে জিতলেন ৬০ ছুই ছুই নয়ন দাস। ঝাড়গ্রাম শহরের এই প্রৌঢ়কে খুঁজে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও বনদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে শুক্রবার দুপুরে খুঁজে পাওয়া গেল নিখোঁজ নয়নকে। একেবারে টানটান রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের মত ঘটনা ঘটেছে নয়নকে ঘিরে।

ছা-পোষা নয়ন ঝাড়গ্রাম শহরের সত্যবান পল্লী এলাকার বাসিন্দা। লকডাউনের আগে ঠিকাদারের অধীনে নির্মাণ সংস্থার শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরে। লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন। অবশেষে প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড় করে গত ১৬ মার্চ ঠিকাদারের ব্যবস্থা করে দেওয়া গাড়িতে করে আরও দুই শ্রমিকের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাঁর এক জগদীশ মল্লিক গত ১৭ মে নয়নের পরিবারকে জানিয়েছিলেন, ঝাড়গ্রামের জঙ্গল পথ দিয়ে আসার সময় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন নয়ন। জগদীশ জানিয়েছিলেন, ঠিকাদারের ঠিক করে দেওয়া গাড়িটি ১৬ মে গভীর রাতে লোধাশুলির কাছে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। রাত হয়ে যাওয়ায় ঝাড়গ্রামে যাওয়ার কোনও যানবাহন পাননি নোয়নেরা।

শেষ পর্যন্ত হেঁটে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জগদীশ, নয়ন ও তাঁদের আর এক সঙ্গী গণেশ মাহাতো। হাঁটতে হাঁটতে রবিবার ভোর হয়ে গিয়েছিল। দিনের আলোর ফোটার পরে তাঁরা তিনজন হাজির হয়ে গিয়েছিলেন বরিয়ার জঙ্গল লাগোয়া ক্যানেল পাড় এলাকায়। সেইসময় একটি বুনো হাতির সামনে পড়ে যান তাঁরা। হাতি দেখে গণেশ ছুটে পালিয়ে যান। জগদীশ ও নয়নও ছুটছিলেন। এমন সময় নয়নের আর্তনাদে জগদীশ পিছন ফিরে দেখেন, পায়ে চোট পেয়ে মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন নয়ন। নয়নের উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। তৃষ্ণার্ত নয়নকে বোতলের শেষ জলটুকু খাইয়ে ঝাড়গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন জগদীশ। পরে গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে নয়নকে আর খুঁজে পাননি জগদীশ। এরপরই নয়নের পরিবারকে ঘটনাটি জানান জগদীশ। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও নয়নকে খুঁজে না পাওয়ায় তাঁর ছোট ছেলে সৈকত দাস ঝাড়গ্রাম থানায় গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপরই বরিয়ার জঙ্গলে তল্লাশির সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। জঙ্গল এলাকার রুট চেনার জন্য বনদপ্তরের সাহায্য চাওয়া হয়।

পুলিশ ও বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের একটি যৌথ দল শুক্রবার সকাল থেকে জঙ্গলে তল্লাশি চালায়। দুপুরে গভীর জঙ্গলের ভিতরে অর্ধমৃত অবস্থায় নয়নকে পাওয়া যায়। জল-জল বলে গোঙাচ্ছিলেন নয়ন। তাঁকে জল খাইয়ে পুলিশের গাড়িতে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়ন এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাতি, নেকড়ের মতো শ্বাপদ সঙ্কুল পাঁচটা রাত কীভাবে নয়ন কাটালেন তা নিয়ে এলাকায় জোর আলোচনা চলছে।
গভীর জঙ্গলে জখম হয়ে হারিয়ে যাওয়া নয়নের বেঁচে ফেরার ঘটনাটি প্রমাণ করল, ‘রাখে হরি, মারে কে!’

আরও পড়ুন ::

Back to top button