ঝাড়গ্রাম

ঢাকের বায়না নেই, পথের ধারে ফল বেচেন ঢাকীর মা

ঢাকের বায়না নেই, পথের ধারে ফল বেচেন ঢাকীর মা

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: পুজো-পার্বণে এক সময় স্বামীর ঢাকের তালে কাঁসর বাজাতেন ভারতী মিদ্যা। ঝাড়গ্রামের নকাট গ্রামের ভারতী এখন সংসার চালাতে রাস্তার ধারে বসে ফল বেচেন। ঢাকীদের কদর কমছে। তাই ঢাকী-পরিবারের ভারতীর মতো অনেকেই সংসার চালাতে হয় দিনমজুরি করছেন, নয়তো রাস্তার ধারে সব্জি কিংবা ফল বিক্রি করছেন।

ভারতীর স্বামী স্বামী লথু মিদ্যা প্রয়াত হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। লথুর ঢাকের বোলের কদর ছিল। পুজোয় ঢাক বাজানোর বায়না আসতো দূরদূরান্ত থেকে। ভারতীর ছেলে বরুণও বাবার মতোই ঢাকী। কিন্তু এবার লকডাউনে পুজো-পার্বণ কার্যত হচ্ছে না। তাই এবার গাজন, মনসা পুজো, শীতলা পুজোয় ঢাক বাজানোর ডাক আসেনি। ভারতীর জমিজমা নেই। আগে স্বামী ঢাক বাজিয়ে সংসার চলাতেন। বাবার মতো বরুণও ঢাক বাজিয়ে সংসার চালান। আর বাকি সময়টা জঙ্গলের ছাতু এনে বাজারে বিক্রি করতেন। ভাল দাম মিলত। ঢাকীদের সুদিন আর নেই। জঙ্গলের ছাতুও এখন বেশি মেলে না। ফার্মের মাশরুম বাজার দখল করছে।

তাই বরুণ করেন দিনমজুরির কাজ। আর ভারতী রাস্তার ধারে ফল বেচেন। লকডাউন বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই। ভরদুপুরে চড়া রোদে ছাতা মাথায় খদ্দেরকে ফল বেচার ফাঁকে ভারতী জানালেন তাঁর আশঙ্কার কথা। এবার বিশ্বকর্মা, দুর্গা ও কালী পুজোয় তাঁর ছেলে বরুণ ঢাক বাজানোর বায়না পাবেন কি-না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ভারতী। তিনি জানালেন, ফল কিনে শহরের রাস্তার ধারে বসে বিক্রি করেন। এতে লাভ হয় সামান্যই। বেঁচে থাকার জন্য পারিবারিক পরম্পরা আর ধরে রাখতে পারছেন না ভারতীর পরিবার। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে, গ্রামীণ এলাকার ঐতিহ্য। ভারতী বলেন, ‘‘এখন তো অনেকে পুজোয় মোবাইল ফোনে ঢাকের বাজনা দিয়েই কাজ সারেন। এভাবে চললে ঢাকীদের চলবে কী করে! আগে যেটুকু ঢাক বাজানোর বায়না আসতো, এবার করোনার জন্য সেটাও অনিশ্চিত।’’ খদ্দেরকে আম ওজন করে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন ভারতী।

আরও পড়ুন ::

Back to top button