জীবন যাত্রা

শিশু-কিশোরদের মানসিকতায় ঘরবন্দীর নেতিবাচক প্রভাব

শিশু-কিশোরদের মানসিকতায় ঘরবন্দীর নেতিবাচক প্রভাব

লকডাউনে টানা ঘরবন্দী থাকা শিশু-কিশোর মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অভিভাবকদের পাশাপাশি এই কথা মনরোগ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন।

কলকাতার এই সময় এক প্রতিবেদনে জানায়, শিশু-কিশোরদের অনেকেরই পড়াশোনায় মন বসছে না একদম। কারো কারো ঘুম অনিয়মিত। কেউ বা আবার হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে অন্যদের ওপর চড়াও হচ্ছে। খাবারদাবার ছুড়ে ফেলছে বা বাড়ির লোকজনকে আঁচড়ে-কামড়ে দিচ্ছে!

সম্প্রতি একটি সংস্থার সমীক্ষায় শিশু-কিশোরদের এই নেতিবাচক ছবির অনেকটা উঠে এসেছে। কলকাতার স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের (এসএইচআইআরসি) তরফে ২৫০ জন শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত একটি সমীক্ষা চালানো হয়।

সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার অদিতি দে জানান, মূলত কথা বলা ও শোনার সমস্যা রয়েছে, অটিজম বা সেরিব্রাল পলসি আছে, এমন ২৫০ জন পড়ুয়ার মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়। তিনি বলেন, “এই সমস্যাগুলো যে শুধু এই বিশেষ ধরনের কচিকাঁচাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, এমনটা নয়। অন্য শিশু-কিশোরদের মধ্যেও কমবেশি এই ধরনের প্রভাব বৈশিষ্ট্য এখন থাকা স্বাভাবিক।”

সমীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের যে সব প্রশ্ন করা হয়েছিল, তার মধ্যে আছে; তারা কি জানে কেন বাড়িবন্দী থাকতে হচ্ছে? বাড়িতে থাকতে কি কোনো সমস্যা হচ্ছে? কীভাবে সময় কাটছে? লকডাউনে ঘুমের অভ্যাসে কি বদল হয়েছে? ভয় বা আতঙ্কের কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে? চারপাশের কোনো কিছু কষ্ট দিচ্ছে? ক্ষুধার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন এসেছে? পড়াশোনা বা অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে কি সমস্যা হচ্ছে?

এই সব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা বা আশপাশের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন। ৩৪ শতাংশের মধ্যে টানা ঘরবন্দী থাকতে থাকতে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। অনেক শিশু-কিশোরই বলেছে, বাইরে খেলতে যাওয়া বা স্কুলে যাওয়ার ব্যাপার না-থাকায় ঘুম অনিয়মিত হচ্ছে। কেউ বেশি ঘুমাচ্ছে, কারো ঘুমের সময়টাই বদলে গেছে। সংস্থার কর্মকর্তা অমৃতা মিটারের বক্তব্য, লকডাউন সার্বিকভাবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেই একটা বড় প্রভাব ফেলছে।

তবে শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সৌমিত্রশঙ্কর দত্ত বলেন, “সার্বিক যা পরিস্থিতি, তাতে তো প্রাপ্তবয়স্করাই ভীত। সেখানে শিশুরাও ভয় পাবে, চিন্তা করবে, সেটা স্বাভাবিক। তবে যেটা উচিত, সেটা হলো- এই ভয় কাটাতে তাদের মতো করে বয়সোপযোগী ভাষায় করোনা ও বর্তমান পরিস্থিতি তাদের বোঝানো দরকার। তাদের কাছে ব্যাখ্যা করা দরকার যে, করোনা ছোঁয়াচে, সেই জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে এতে মৃত্যুভয় খুব বেশি, এমনটাও নয়।”

আরও বলেন, “সাধারণভাবে মনে হয়, শিশু-কিশোরদের একাংশ আতঙ্কগ্রস্ত হবে, অটিজম বা সেরিব্রাল পলসির সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যাটা একটু বেশি। তবে এটা স্থায়ী হয়ে গেড়ে বসবে, এমনটা নাও হতে পারে।”

এই অবস্থায় সন্তান হঠাৎ রেগে গেলে বা উত্তেজিত হয়ে পড়লে মা-বাবার উচিত পাল্টা রাগ না দেখিয়ে তাকে ভালোবাসা দেওয়া ও বোঝানো। এ কথাও বলছেন সৌমিত্র।

আরও পড়ুন ::

Back to top button