শিক্ষা

যেভাবে তৈরি করবেন ভাল এবং আকর্ষণীয় সিভি

যেভাবে তৈরি করবেন ভাল এবং আকর্ষণীয় সিভি

 

ওয়েবডেস্ক :: চাকরির বাজারে যা দিয়েই প্রথম পরিচয় তৈরি হয় তার নাম হলো কারিকুলাম ভিটা বা সিভি। কী ভাবে তৈরি করবে একটা সিভি, কী রাখবে, কী বাদ দেবে। জেনে নিন কয়েকটা টিপস। আর এই টিপসগুলো দিয়েছেন একজন সফল ব্যক্তি।

নিজে বানাও: নিজের সিভি নিজে তৈরি করো। ইন্টারনেটে সিভি-র প্রচুর নমুনা পাওয়া যায়। বন্ধুবান্ধবদেরও হয়তো সিভি তৈরি করা আছে। এগুলো দেখতে পারো, কিন্তু কোনওটাই নকল কোরো না।

যতটুকু প্রয়োজন: সিভি বেশি বড় না করাই ভাল। বড়জোর দু’পাতা। এখন কম্পিউটারেই সবাই সিভি তৈরি করে। পুরোটা একটাই ফন্টে লেখো। আর পরিচিত কোনও ফন্ট ব্যবহার করো। যেমন, এরিয়াল, টাইম্‌স নিউ রোমান বা ক্যালিব্রি ইত্যাদি। পয়েন্ট সাইজ বারো বা চোদ্দ রাখো। যথেষ্ট মার্জিন ছাড়ো, এবং দুটো লাইনের মাঝখানে বেশ খানিকটা করে ব্যবধান রেখো। কোনও রকম অলংকরণ কিন্তু সিভি-তে চলে না।

‘ভুল’ নয়: ইংরেজিতেই সিভি লেখা হয়। ভাষা সরল রাখো, যাতে পড়তে ভাল লাগে। যতটুকু দরকার, সেইটুকু তথ্যই দাও। হোয়াটসঅ্যাপ বা এসএমএস-এ যে ধরনের ইংরেজি লিখে এসেছ, সেটা কিন্তু ভুলেও এখানে ব্যবহার কোরো না। যেহেতু সিভির মাধ্যমেই নিয়োগকর্তারা তোমাকে প্রথম চিনবেন, তাই

আরও পড়ুন : জানেন কি, আপনার মেজাজেই লুকিয়ে রয়েছে আসল রোগ?

নিজের সম্পর্কে যখন কিছু বলবে, তখন এমন কথাই লেখো, যেটা পড়ে তোমার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হতে পারে। বাক্য গঠন, বানান ভুলের বিষয়ে সতর্ক থেকো। লেখা হয়ে গেলে কোনও শিক্ষক বা যাঁরা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের দেখিয়ে নাও। তাতে লেখায় কোনও গলদ থাকলে, ধরা পড়ে যাবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: যখন শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখছ, তখন সম্প্রতি যে পরীক্ষায় পাশ করেছ সেটা দিয়ে শুরু করে ক্রমপর্যায়ে বোর্ডের পরীক্ষা পর্যন্ত লেখো। ভাল হয়, এগুলোকে এক একটা বুলেট পয়েন্ট করে লিখলে। বৃত্তি, পুরস্কার বা শিক্ষাগত কোনও সম্মান পেয়ে থাকলে সেটা দিতে ভুলো না। আবার কোথাও কোনও সেমিনার বা ওয়ার্কশপে যোগ দিয়ে কোনও সার্টিফিকেট পেয়ে থাকলে, সেটার প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করবে। সঙ্গে এই সব ক্ষেত্রে তোমার

সাফল্যের কথাও সংক্ষেপে লিখে দিয়ো। লেখার সময় কেবল প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রি এবং প্রাপ্ত নম্বর লেখা যথেষ্ট না-ও হতে পারে। কোন কোন বিষয়ে পড়াশোনা করেছ, তা উল্লেখ করা যদি প্রাসঙ্গিক হয়, অবশ্যই লিখতে হবে। কোনও ক্ষেত্রে ডিসার্টেশন দিয়ে, প্রোজেক্ট করে বা স্পেশাল পেপার লিখে থাকলে তার উল্লেখ কোরো। হতেই পারে, কম্পিউটার সংক্রান্ত বা কোনও বিদেশি ভাষায় স্বল্পমেয়াদের কোর্স করেছ, কিন্তু তার কোনও ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট পাওনি।

আরও পড়ুন : জাপানে বন্যা-ভূমিধসে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু

তা হলেও কী বিষয় এবং সেটা কত দিন পড়েছ, তার উল্লেখ থাকা ভাল। অধিকাংশ সংস্থাই কেবল ফাইনাল পরীক্ষার ভাল ফল দেখতে চায় না, বরং ভাল ফলের ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। প্রয়োজনে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সাফল্যের কিছু কিছু জায়গা বোল্ড বা আইটালিক করে হাইলাইট করে দিতে পারো, যাতে সেটা ইন্টারভিউয়ারের নজরে পড়ে। পুরো বাক্য হাইলাইট করার দরকার নেই।

অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ: অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ফ্রেশারদের সুযোগ দেয়। তাই কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে অসুবিধে কিছু নেই। তবে এর মধ্যে যদি কোনও কোর্স বা ইন্টার্নশিপ করে থাকো, সেটার তথ্যও এখানে দেবে। আর যারা আগে চাকরি করেছ, তাদের পরিষ্কার করে লিখতে হবে, কোন সংস্থায় কাজ করতে, কত বছর করেছ, কী ধরনের প্রোজেক্ট-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলে, কী পদে ছিলে ইত্যাদি। একটা টেবিল আকারে তথ্যগুলো সাজাও। এখানেও শিক্ষাগত যোগ্যতার মতোই শেষ যে চাকরিটা করেছ, সেটাই প্রথমে রেখো। আগের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং তার সাফল্য সম্পর্কে লেখার সময় ‘আই’, ‘মি’ বা ‘মাই’ ব্যবহার কোরো না।

‘আই ওয়াজ দি এরিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ম্যানেজার অব এক্স ডিভিশন…’ না লিখে বলো, ‘হেলপ্ড দ্য কম্পানি ইন সেভিং ওয়াই ক্রোরস অব রুপিজ ইন এক্স ডিভিশন অ্যাজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ম্যানেজার’। চেষ্টা করবে এমন ভাবে বাক্যটা লিখতে, যা দেখে মনে হয় তুমি আত্মবিশ্বাসী। প্রয়োজনে ‘accomplished’, ‘developed’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করো। আজকাল এমনিতেই ‘লিডারশিপ’ ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই কোনও ছোট দল বা কোনও ছোট প্রোজেক্টেও তোমার টিম লিডারশিপ-এর অভিজ্ঞতা থাকলে, সেটা উল্লেখ করতে ভুলো না।

আরও পড়ুন :মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে স্বজনপোষণ কী আগেও ছিল? জানালেন ৯০-এর দশকের সব শিল্পীরা !

সতর্ক থাকো: ফ্রেশার হিসেবে যখন ‘কেরিয়ার অবজেকটিভ স্টেটমেন্ট’ লিখবে, তখন আগামী পাঁচ বছরে তুমি কী করবে, নিজেকে কতটা উন্নত করবে বা কী ধরনের টার্গেট বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করবে, সেটা লেখো। তাই বলে, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হতে চাই’— এমন উক্তি না করাই বাঞ্ছনীয়। নিজের পরিকল্পনা মতো যে ভাবে কেরিয়ারটা গড়তে চাও, সেটাই তুলে ধরো কেরিয়ার অবজেকটিভ স্টেটমেন্ট-এ।

রেফারেন্স: তোমার যোগ্যতা সম্পর্কে জানাতে পারেন, এমন কয়েক জনের নাম ‘রেফারেন্স’ হিসেবে উল্লেখ করতে পারো। সিভি-র শেষে তাঁদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেল উল্লেখ করো। তবে, তার আগে অবশ্যই এঁদের সঙ্গে কথা বলে নিও, তাঁরা তোমার বিষয়ে রেফারেন্স দিতে আগ্রহী কি না।

যোগাযোগ: সিভিতে তোমার কনট্যাক্ট ডিটেল্স যেন পরিষ্কার করে থাকে— নাম, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেল ইত্যাদি। এখানে যে ই-মেল আই-ডি দেবে, সেটা যেন খুব উদ্ভট কিছু না হয়। কলেজে অনেকে এমন ধরনের মেল আই-ডি ব্যবহার করে। কিন্তু যেহেতু তুমি চাকরির জন্য আবেদন করতে যাচ্ছ, তাই তার জন্য কোনও অফিশিয়াল মেল আই-ডি থাকাই ভাল।

আরও পড়ুন : আমার শরীর চড়া দামে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল প্রযোজক

একাধিক: সিভি নানা ভাবে লেখা যায়। কোনও বেসরকারি সংস্থায় আবেদন করতে হলে তোমাকে এক ধরনের সিভি জমা দিতে হবে। এই সিভি কিন্তু কোনও অলাভজনক সংস্থায় জমা দেওয়া যাবে না। সেখানে ধরনটা হবে অন্য। এই সব সিভিতে তোমার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার যাবতীয় তথ্য অপরিবর্তিত থাকবে ঠিকই, শুধু তথ্য পরিবেশনটা সংস্থা অনুযায়ী পালটে যাবে। যে কাজের জন্য আবেদন করছ, যে সংস্থায় আবেদন করছ, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবেই সিভি লিখতে বোসো। কাজের সংস্থার খুঁটিনাটি যত স্পষ্ট হবে, তোমার সিভি লেখাও তত কার্যকর হবে।

এক্সপার্ট কমেন্ট: ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে সিভি তৈরি করা সবচেয়ে কঠিন। কারণ কর্মদক্ষতার কোনও প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ নেই। আর আজকাল সবাই এত নম্বর পায় যে নম্বর দিয়ে নজর কাড়া খুব মুশকিল। অথচ, এই সিভি-কেই চট করে চোখে পড়াতে হবে ভিড়ের মাঝে। নিয়োগকারী মূলত দেখতে চান এক জন ফ্রেশারের অ্যাটিটিউড। তাই সেই বিষয়গুলি উল্লেখ করা প্রয়োজন, যাতে কাজের ক্ষেত্রে দরকারি বিষয়ের আভাস পাওয়া যায়— যেমন, টিমওয়ার্ক (ফেস্ট বা ইভেন্ট আয়োজন করা), নিজেকে প্রকাশ করতে পারা (ডিবেট), ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button