আন্তর্জাতিক

চীনের কাছ থেকে সস্তায় প্লেন কিনে বিপাকে নেপাল

চীনের কাছ থেকে সস্তায় প্লেন কিনে বিপাকে নেপাল

২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে দু’টি পৃথক বিশেষজ্ঞ দল চীন গিয়েছিল বিশেষ কয়েকটি মডেলের প্লেনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে। বাংলাদেশি দলটি দেশে ফিরে ওই প্লেনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী প্রতিবেদন দিলেও উল্টো পথে যায় নেপাল। চীনের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধায় মোট ছয়টি প্লেন কিনে নেয় তারা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে শেষপর্যন্ত। ঠিকঠাক ব্যবহার করতে না পেরে সেই প্লেনগুলো চিরতরে বসিয়ে রাখার ঘোষণা দিয়েছে নেপাল।

নেপালের প্রভাবশালী গণমাধ্যম কাঠমাণ্ডু পোস্ট জানিয়েছে, চীনের কাছ থেকে কেনা ১৭ সিটের ওয়াই১২ই এবং ৫৬ সিটের এমএ৬০ প্লেন আর না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল এয়ারলাইনস করপোরেশন। আগামী ১৬ জুলাই থেকে আর উড়বে না সেগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত খরচ সামলাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল। কারণ এই প্লেনগুলো পরিচালনা ও বীমার খরচ বাবদ অন্তত ২০০ কোটি নেপালি রুপি ক্ষতি হয়ে গেছে তাদের।

আরও পড়ুন : করোনা গোপন করেছিল চিন, বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন পালিয়ে যাওয়া হংকংয়ের এই বিজ্ঞানী

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০১২ সালে চীনের বিমান শিল্প করপোরেশনের সঙ্গে দু’টি এমএ৬০ ও চারটি ওয়াই১২ই কেনার চুক্তি হয় নেপাল এয়ারলাইনসের। চুক্তি অনুসারে, মাত্র ৩৭২ কোটি নেপালি রুপির বিনিময়ে ও চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে বিশেষ ঋণ সুবিধায় তিনটি ওয়াই১২ই ও একটি এমএ৬০ প্লেন কেনে নেপাল। এরসঙ্গে আরও একটি করে ওয়াই১২ই ও এমএ৬০ প্লেন উপহার বা ফ্রি দেয় চীন।

এ ঘটনাকে সেসময় নেপালের ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক বলে উদযাপন করা হয়। তবে, প্লেনগুলোর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশের যে আশা করেছিল তারা, তা আর হয়ে ওঠেনি। কারণ, চীনা প্লেন ওড়ানোর মতো যথেষ্ট দক্ষ পাইলট ছিল না তাদের। আর এতদিনে পর্যাপ্ত পাইলট তৈরিও করতে পারেনি নেপালি কর্তৃপক্ষ। ফলে কেনার ছয় বছর পরেও একবারের জন্যেও আকাশে ওড়ানো যায়নি একটি এমএ৬০ প্লেন।

ওয়াই১২ই উড়লেও সেগুলো নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। গত মার্চে এমনই একটি প্লেন নেপালগুঞ্জ বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়েছিল। এর জন্য পাইলটকে দায়ী করে বরখাস্তও করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্লেনের একটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও পাইলট সেটিকে ভুলভাবে ল্যান্ড করিয়েছেন। তবে তদন্তকারীরা ওয়াই১২ই প্লেনের কার্যক্ষমতা নিয়েও সন্দেহপ্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন : শুধু শিশুদের জন্য টিকা তৈরি করছে রাশিয়া

এসবের তিন মাস পরেই ওয়াই১২ই ও এমএম৬০ প্লেনগুলো আর না ওড়ানোর ঘোষণা দিল নেপাল। যদিও অনেকের মতে, দোষ চীনা প্লেনগুলোর চেয়ে নেপাল এয়ারলাইনস করপোরেশনের ব্যবস্থাপনাতেই বেশি।

প্লেন কেনার চুক্তি অনুসারে নেপাল সরকারকে বাৎসরিক ১ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হবে এবং সার্ভিস চার্জ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ দিতে হবে মোট ঋণের ০.৪ শতাংশ। বিপরীতে, নেপাল এয়ারলাইনসের কাছ থেকে বছরে আট শতাংশ সুদ নেবে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।

২০১২ সালের চুক্তি অনুসারে নেপালকে সাত বছরের কিস্তি ও সুদে ছাড় দিলেও ২০ বছরের মধ্যেই চীনের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button