আদিবাসীদের ভালবাসার টানেই জঙ্গলমহলে আসেন, জানালেন শুভেন্দু
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: আদিবাসীদের ভালবাসার টানেই বারে বারে জঙ্গলমহলে আসেন বলে জানালেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার ঝাড়গ্রামের পিয়ালগেড়িয়া ফুটবল মাঠে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের এক অনুষ্ঠানে এসে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সহজ-সরল আদিবাসীরা আন্তরিকতা আর ভালবাসা যাঁকে দেন, তাঁকে অন্তর থেকেই দেন। এর প্রত্যক্ষ ছোঁয়া আমি পেয়েছি। তাই আমি আদিবাসী মূলবাসীদের সামাজিক কর্মসূচিতে বারে বারে আসি।’’
পিয়ালগেড়িয়া বাচড়া বায়ার ক্লাবের সহযোগিতায় ও বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঞ্চে অনুষ্ঠানের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকারের দাবিতে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপন’। এদিন বিকেলে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছন শুভেন্দু। আয়োজকেরা তাঁকে মাথায় সবুজ পাগড়ি পরিয়ে হাতে তীর-ধনুক তুলে দিয়ে সংবর্ধনা জানান।
[ আরও পড়ুন : ১০১ ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিজেই বানাবে ভারত, আমদানি বন্ধের ঘোষণা ]
অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘হিংসা, দ্বেষ, খুনোখুনি থেকে জঙ্গলমহলকে দূরে রাখতে হবে। জঙ্গলমহলের শান্তিকে আমরা ধরে রাখব। যাতে জঙ্গলমহলের কোনও মানুষকে অনাথ না হয়ে যেতে হয়, খুন না হয়ে যেতে হয়। এটাই আমাদের আবেদন। সমগ্র আদিবাসী সমাজ যারা মূলবাসী, তাদের শিক্ষা তাদের সংস্কৃতি তাদের এগিয়ে যাওয়া বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান তাদের ভাল রাখার যে সংগ্রাম শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ঝাড়গ্রাম নয়, গোটা ভারতবর্ষ, গোটা পৃথিবীব্যাপী এই সংগ্রামে আপনাদের বন্ধু হিসেবে আপনাদের সেবক হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী ছিল, আছে, থাকবে।’’
[ আরও পড়ুন : রাম মন্দিরে থাকবে ২১০০ কেজির অষ্টধাতুর ঘণ্টা, সৃজনে সহায়ক মুসলিম কারিগররাও ]
পরিবহনমন্ত্রীর কথায়, আমার বিরাট কিছু ক্ষমতা নেই। যেটুকু ক্ষমতা থাকে তা দিয়ে আদিবাসী ভাইবোনদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। ঝাড়গ্রামের তিরন্দাজ মণিকা সরেনকে জিজ্ঞেস করবেন, চাকরি চেয়েছিল। কন্টাই কো-অপারটিভ ব্যাঙ্ক কলকাতা শাখায় চাকরি দিয়েছি। পুরুলিয়ার ফুটবলার কলকাতার মাঠ কাঁপায় লক্ষ্মী মাণ্ডি অভাবের কথা জানিয়েছিল।
বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কে লিখিত পরীক্ষায় লক্ষ্মী কোয়ালিফাই করেছে। লক্ষ্মীকে আমরা চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাইকে সাহায্য করার মতো ক্ষমতা উপরওয়ালা আমাকে দেননি। তবে যেটুকু সাধ্য আছে তা নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াব। জঙ্গলমহলকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, বিগত দিনে গোটা ঝাড়গ্রাম এলাকা পায়ে হেঁটে, মোটরবইকে ঘুরে আপনাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছি।
[ আরও পড়ুন : পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীকেই দেখতে চান ৯১ শতাংশ মানুষ, বলছে সমীক্ষা ]
বাদনা পরব, টুসু পরব, করম পুজোর মতো আদিবাসী ও কুড়মি সমাজের অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। ২০১২ সালে ঝাড়গ্রামে ঝুমুর মেলা শুরু করেছিলাম। আপনাদের অভাব আছে, দারিদ্র আছে। কিন্তু আপনাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে বারে বারে আসি। শুভেন্দু জানান, লকডাউনের সময়ে ঝাড়গ্রাম জেলার তিন হাজার একশো লোধা পবিরারকে খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক ও সাবান দিয়েছিলেন তিনি।
পুরুলিয়ায় চার হাজার আটশো পরিবার ও বাঁকুড়া জেলায় পাঁচ হাজার পরিবারকে লকডাউন পর্বে তিনি খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। শুভেন্দু জানান, ঝাড়গ্রামে স্বেচ্ছাসেবকেরা লোধা-শবরদের বাড়িতে সেই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিলেন। পুরুলিয়ায় রামকৃষ্ণ মিশনকে দিয়ে এবং বাঁকুড়ায় কুড়মি সেনাদের দিয়ে সেই ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনো হয়েছিল বলে জানান শুভেন্দু।
তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার বিরাট কিছু নয়। এটা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আশা করব আগামী দিনে আমাদের সম্পর্কের বাঁধন আরও মজবুত হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে জঙ্গলমহলের শান্তিকে রক্ষা করব।’’ এদিন শুভেন্দুর উদ্যোগে ৫০টি আদিবাসী ক্লাবকে খেলাধুলোর সামগ্রী ও ১০টি আদিবাসী লোকসংস্কৃতি সংস্থাকে ধামসা-মাদল দেওয়া হয়।
[ আরও পড়ুন : লেবাননের তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদের পদত্যাগ ]
এই পরিষেবা প্রদান প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এটা আপনাদের পাশে থাকার আমার ছোট্ট প্রয়াস।’’ এদিন অনুষ্ঠানে আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন দশরথ হেমব্রম, গোপাল মুর্মু, অনুপ মুর্মুদের মতো অনেকেই। এ ছাড়া তৃণমূলের জেলা পরিবহণ নেতা গৌরাঙ্গ প্রধান, সমাজসেবী স্নেহাশিস ভকত।