আন্তর্জাতিক

আবারো পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’, গত বছরের চেয়ে ভয়াবহ

আবারো পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’, গত বছরের চেয়ে ভয়াবহ

গত বছরের আগস্টের এ সময়টায় দাউদাউ করে জ্বলছিল ব্রাজিলের আমাজন রেইনফরেস্ট। টানা কয়েক মাস অসংখ্য দাবানলে জ্বলছিল গোটা বনাঞ্চল। গাছপালা, বন সম্পদসহ লাখ লাখ প্রাণি আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল। ঝলসে গিয়েছিল ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে পরিচিত আমাজনের বিস্তীর্ণ অংশ। বছর ঘুরতেই আবারো একই চিত্র। আবারও হুমকির মুখে পরিবেশের ভারসাম্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে আরো বেশি খারাপ হতে যাচ্ছে আমাজনে এ বছরের দাবানল পরিস্থিতি।

চলতি বছর দাবানল মৌসুমের শুরুতেই অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ায় উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি বলেছিলেন, আমাজনে দাবানল বাড়ার যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, সেগুলো সত্যি নয়। কিন্তু, তাঁর সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে আমাজনে দাবানল বেড়েছে।

গত জুন ও জুলাই মাসে আমাজনে দাবানলের সংখ্যা গত বছরের জুন-জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল। চলতি মাসেও গত বছরের আগস্টের তুলনায় বেশি দাবানল সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আমাজন রেইনফরেস্ট বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. মিশেল কালামান্দীন জানান, কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ব্রাজিলের অংশে পড়া আমাজনের ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি অঞ্চল পুড়ে গেছে।

গত বছর প্রথম আমাজন অগ্নিকাণ্ডের কথা সামনে এনেছিল ব্রাজিলের ‘ন্যাশনাল স্পেস এজেন্সি’। এ বছরও তাদের প্রকাশ করা ছবিতেই ধরা পড়েছে দাবানল। এতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি জ্বলছে আমাজন। শুধু ব্রাজিলেই ছয় হাজার ৮০৩টি অঞ্চল জ্বলছে আগুনে।

আরও পড়ুন : হারিকেন লরা’র তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রে নিহত বেড়ে ১৪

আশঙ্কা করা হচ্ছে, আমাজনের দাবানল আরো বাড়বে। হাতের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি। গত বছরের পরও এবার আবার কীভাবে এতটা আগুন ছড়াল, তা নিয়ে ধন্দে অনেকেই। চিরহরিৎ অরণ্য আমাজনে প্রতিবছর এত আগুন কী করে লাগছে, প্রশ্ন সেটাই।

আমাজন বনাঞ্চলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি দাবানল হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও জমি পুড়িয়ে চাষবাস করেন। তা থেকেও অনেক সময় আগুন লাগে। কিন্তু গত বছর তা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, মুনাফার জন্য কাঠব্যবসায়ীদের অবাধ ছাড় দেওয়ায় এই কাণ্ড ঘটেছে। জমিমাফিয়া ও খনিমাফিয়াদেরও উৎপাত বেড়েছে।

তবে গত বছরের অগ্নিকাণ্ডের পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপও তৈরি হয়েছিল। তারপরও আবারো পুড়ছে আমাজন।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় আমাজনের ভূমিকা অনন্য। শুধু ব্রাজিল নয়, আমাজন অবস্থান করছে পেরু (১৩ শতাংশ), কলম্বিয়া (১০ শতাংশ), ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গিয়ানা, সুরিনাম, ফ্রান্স গায়ানা দেশ মিলে। তবে আমাজনের ৬০ শতাংশ বনভূমি ব্রাজিলের অন্তর্গত। পঞ্চান্ন হাজার বর্গ কিলোমিটার স্থানজুড়ে অবস্থান করা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টি অরণ্য আমাজন পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে এবং এক-চতুর্থাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। এ কারণে আমাজন অরণ্যকে বলা হয় ‘বিশ্বের ফুসফুস’।

 

আরও পড়ুন ::

Back to top button