মতামত

দুর্বল বাইডেনকে দিয়ে কি ট্রাম্পকে হারানো সম্ভব?

দুর্বল বাইডেনকে দিয়ে কি ট্রাম্পকে হারানো সম্ভব?

শিতাংশু গুহ, ৩১শে আগষ্ট ২০২০, নিউইয়র্ক :: রিপাবলিকান এবং ডেমক্রেট কনভেনশন শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী বাতাস এখন তুঙ্গে থাকার কথা, কিন্ত এখনো তা নয়। কারণ কোভিড-১৯। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ বা ‘লেবার-ডে’ উইকএন্ডের পর হয়তো ঝড় বইবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা তোয়াক্কা না করে বড়বড় সমাবেশ করছেন। প্রতিদ্ধন্ধী জো বাইডেন নির্বাচনী মাঠে নেই? ডেমক্রেট নেতা-কর্মীরা এতে উদ্বিগ্ন। বাইডেন ক্যাম্পেইন তাই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘লেবার-ডে’ সপ্তাহান্তের পর তাঁরা মাঠে নামছেন। ট্রাম্প আক্রমণাত্মক খেলছেন। বাইডেন এখনো ডিফেন্সিভ।

ডেমক্রেট সম্মেলন সাদামাটা ছিলো, তাই রিপাবলিকানরা বলেছিলেন যে, তারা কনভেনশন কাকে বলে তা দেখাবেন, কনভেনশনের সমাপ্তি দিবসে, অর্থাৎ ট্রাম্পের মনোনয়ন গ্রহণ ভাষণের দিন তাঁরা তা দেখিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের বিশাল মিলনায়তনে হাজারো মার্কিন পতাকা ঝলমলে ষ্টেজে ট্রাম্পের ভাষণের সময় হলভর্তি গন্যমান্য অতিথি উপস্থিত ছিলেন। মুহুর্মুহু করতালিতে বারবার হলঘর উচ্ছলিত হয়। ডেমোক্রেটরা এজন্যে বলেছেন, রিপাবলিকান কনভেনশন দেখে মনে হয়, দেশে করোনা নাই? বাইডেনের ভাষণের সময় কেউ উপস্থিত ছিলেন না, সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, মানবতার ইতিহাসে আমেরিকা গ্রেটেষ্ট কান্ট্রি। আমরা ভীতুর জাতি নই, বরং দুর্বার সাহসী। বিশ্বে কেউ আমাদের সমকক্ষ নয়। তিনি বলেন, জয়ী হলে আগামী চার বছরে আমেরিকাকে আরো নিরাপদ, শক্তিশালী দেশ গড়ে তুলবো এবং গর্বিত জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবো। ট্রাম্প আরো বলেছেন যে, নির্বাচিত হলে তিনি চীনের পেছন ছাড়বেন না? ডেমক্রেটরা চীনের ব্যাপারে সোচ্চার নন, যদিও আমেরিকানরা কোবিড-১৯’র জন্যে চীনকে দায়ী করছে। বাইডেন ডেমক্রেট সম্মেলনে বলেছিলেন, জয়ী হলে আমি প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমেরিকা, আমেরিকান জনগণ ও জাতিকে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য হুমকী থেকে রক্ষা করবো।

আরও পড়ুন : ‘ট্রাম্প সহিংসতা থামাতে পারবে না’

রিপাবলিকান সম্মেলনে ট্রাম্প পত্নী মেলোনিয়া ট্রাম্প বলেছেন, আমি আমার স্বামীকে চিনি, তিনি আমেরিকাকে ভালোবাসেন। তিনি স্বামীর জন্যে আরো চার বছর সময় চান এবং দেশরক্ষার দায়িত্ব দেয়ার আহবান জানান। মেলোনিয়া বলেন, আমার স্বামী প্রথম দিন থেকে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এবং ‘আমেরিকা ফার্ষ্ট’ অঙ্গীকার রক্ষায় তিনি সবকিছু করবেন। ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প বলেছেন, আমার বাবা একবার অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়েছেন, আবারো ঘোড়াবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও বলেছেন, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে সন্ত্রাসীরা খুশি হবে?

ডেমক্রেটরা প্রশ্ন করেন, এটি রিপাবলিকান কনভেনশন না ট্রাম্প কনভেনশন? উল্লেখ্য যে, সম্মেলনের চার রাত্রে প্রতিদিন ট্রাম্প ফ্যামিলির একজন ভাষণ দেন। সোমবার সম্মেলনের প্রথম রাতে ট্রাম্প পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও তাঁর মেয়েবন্ধু কিম্বার্লি গুইলফয়েল; দ্বিতীয় রাতে ফার্স্টলেডী মেলেনিয়া ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প, টিফাইনি ট্রাম্প ভাষণ দেন্। এরিক ট্রাম্পের পত্নী লারা ট্রাম্প বুধবার ভাষণ দেন এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তাঁর পিতা প্রেসডিন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরিচয় করিয়ে দেন্। ২০১৬-তে কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, ওবামা-বাইডেন ৮ বছরে যা করতে পারেননি, আমার বাবা মাত্র ৪ বছরে তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাইডেন ও রেডিক্যাল লেফট আমাদের বাক-স্বাধীনতা খর্ব করতে চান।

পূর্বাহ্নে ট্রাম্প অটো ওয়ার্কারদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাইডেনকে ভোট দিলে বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা হবে এবং চাকুরীর বাজার সংকুচিত হবে। নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানী বলেছেন, বাইডেন যদি কোনভাবে জিতে যায়, তাহলে নিউইয়র্কের সর্বস্তরে সন্ত্রাস, লুটপাট, ডাকাতি, খুন বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়বে। সাউথ ক্যারোলিনার দুই টার্মের গভর্নর, জাতিসংঘের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিকি হ্যালী বলেছেন, সমাজতন্ত্র আমেরিকার উল্টো। আমেরিকা রেসিষ্ট কান্ট্রি বলে যাঁরা সমালোচনা করেন তাঁদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে নিকি হ্যালি বলেন, আমি ভারতীয় বংশোদ্ভূত, আমার বাবা পাগড়ী এবং মা শাড়ি পড়তেন। সাদা-কালো বিশ্বে আমি ছিলাম ব্রাউন।

ট্রাম্প পূর্বাহ্নে বলেছেন, ডেমক্রেটরা করোনা নিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন। কনভেনশনে ভালো কভারেজ দেয়ার তিনি সিএনএন’র প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্পের ভাষণের সময় কেন জানি ভারতের বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদী এবং ডঃ মনমোহন সিং-এর কথা স্মরণে আসে। ট্রাম্প ও মোদী দু’জনে একাই একশ’, সবার কথা শুনেন, সিদ্ধান্ত নেন নিজে। পক্ষান্তরে ডঃ মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কোন আলোচনায় ছিলেন না, কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না, সব আপনাআপনি হতো বা অন্যরা সিদ্ধান্ত নিতো। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলেও কি তাই হবে? বাইডেনকে কি দুর্বল মনে হয়না? ওবামা বা বিল ক্লিন্টন কিন্তু দুর্বল ছিলেন না। ডেমক্রেট প্রার্থী ভালো হলে ট্রাম্প হয়তো পরাজিত হতেন, দুর্বল বাইডেন দিয়ে সেটা কি সম্ভব হবে?

এরপরও ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেটগুলোতে ডেমক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বিভিন্ন জরিপে এগিয়ে রয়েছেন। উইস্কন্সিনে বাইডেন ৭পয়েন্টে এগিয়ে, ২০১৬-তে ট্রাম্প এ ষ্টেট জিতেছিলেন। আগেরবার ট্রাম্প ফ্লোরিডাতে জয় পান, এবার ৬পয়েন্ট পিছিয়ে। আরিজোনাতে গত ৭০ বছরে মাত্র একবার ডেমক্রেটরা জিতেছিলো, এবার সমান-সমান। নর্থ ক্যারোলিনায় গত ১০টি নির্বাচনে ৯টি রিপাবলিকানরা জিতেছেন, এবার সমান-সমান। টেক্সাসে দুই প্রার্থীর ব্যবধান মাত্র ৫%। এ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে বাঘে-মহিষে লড়াই হবে? উল্লেখ্য, বাণিজ্য ও মেডিকেয়ার প্রশ্নে ইতিমধ্যে বাইডেন-কমলা হ্যারিস মতপার্থক্য স্পষ্ট হচ্ছে।

 

লেখক : শিতাংশু গুহ

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। West Bengal News 24-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আরও পড়ুন ::

Back to top button