আন্তর্জাতিক

আমেরিকার বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারীতে চীনা ছাত্রছাত্রীরা

আমেরিকার বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারীতে চীনা ছাত্রছাত্রীরা

চীন-মার্কিন ক্রমবর্ধমান বৈরিতার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পড়তে যাওয়া লাখ লাখ চীনা ছাত্রছাত্রীকে। দেশটির বিমানবন্দরগুলোতে এসব শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তি পাচারকারী হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশে ফেরার সময় তাদের ওপর শ্যেন দৃষ্টি রাখছে মার্কিন প্রশাসন।

সাধারণ নিয়মে কারো ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার জন্য মার্কিন নিরাপত্তা কর্মীদের আদালত থেকে সমন আনতে হয়, কিন্তু বিমানবন্দর ব্যতিক্রম। সীমান্ত রক্ষীদের মনে ‘যথেষ্ট সন্দেহের’ উদ্রেক হলেই তারা যে কোনো যাত্রীর ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করতে পারে। আর এই সুযোগটিই তারা ব্যবহার করছে চীনা ছাত্রছাত্রীদের উপর।

বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঝাং। তাকে হঠাৎ বোর্ডিং ডেস্কে তলব করা হলে তিনি ভেবেছিলেন রুটিন নিরাপত্তার জন্যই ডাকা হচ্ছে তাকে। কিন্তু গিয়ে দেখলেন দুজন সশস্ত্র সীমান্ত এজেন্ট পুলিশ তার জন্য অপেক্ষা করছে। দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি।

ছাব্বিশ বছর-বয়স্ক পিএইচডি ছাত্র ঝাং যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে এক বছরের জন্য একটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করতে এসেছিলেন। দেশে ফেরার আগে দু’ঘণ্টা ধরে তাকে যেভাবে জেরার মুখোমুখি হতে হয় তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। মার্কিন পুলিশ বের করার চেষ্টা করছিল তার সাথে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানে নারী সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা

চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি)র বৃত্তি নিয়ে কেউ পড়তে গেলেই এখন আমেরিকাতে তাদের গভীর সন্দেহের মুখে পড়েতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১৫ জন চীনা শিক্ষার্থীর সাথে চুক্তির মাঝপথে বাতিল করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় চার লাখের মত চীনা শিক্ষার্থীর অস্বস্তি দিনকে দিন বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে শত্রুতার পারদ যত চড়ছে, তারা মনে করছেন তাদের প্রত্যেককেই এখন সন্দেহভাজন চর হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর পরিচালক ক্রিস্টোফার রে সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেছেন, তারা এখন প্রতি ১০ ঘণ্টায় এমন অন্তত একটি সম্ভাব্য গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা খুঁজে পাচ্ছেন যার সাথে চীনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

জুলাইতে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে চীনা কনসুলেট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়ার সময় মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ওই কনসুলেটটি একটি ‘গুপ্তচরবৃত্তির সেন্টারে’ পরিণত হয়েছে।

বহু চীনা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ব্যবহারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে গিয়ে মার্কিন গোয়েন্দারা পরীক্ষা করে দেখছেন। অনেক সময় সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে তা ফেরত দেওয়া হচ্ছেনা।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের আইনের অপব্যবহার করে ‘মনগড়া সব অভিযোগে চীনা ছাত্রদের জেরা করছে, গ্রেপ্তার করছে।’ তবে চীনা গবেষকদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির সাম্প্রতিক কিছু অভিযোগের তদন্তে সন্দেহের পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

গত আগস্টে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ বছরের চীনা ভিজিটিং গবেষক হাই ঝাও উকে শিকাগোর বিমানবন্দরে ফ্লাইটে ওঠার আগে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, বিমানবন্দরে রুটিন নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় ওই চীনা গবেষকের ল্যাপটপে কিছু ‘সফটওয়ার কোড’ পাওয়া যায় যেটা রাখার বৈধতা তার ছিল না। তার বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়েছে, ওই সফটওয়ার কোড গোপন সামরিক বিষয়ক।

আরও পড়ুন : ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে আটকে পড়া দেড় শতাধিক মানুষ উদ্ধার

গত মাসে এমন একজন অভিযুক্ত চীনা গবেষক গ্রেপ্তার এড়াতে সানফ্রানসিসকোতে চীনা কনসুলেটে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেক ঘটনায়, একজন চীনা গবেষকের বিরুদ্ধে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ নষ্ট করার অভিযোগে ওঠে। তদন্ত চলার সময় প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ডেভিড স্টিলওয়েল বলেছেন, যারা সত্যিকার লেখাপড়া করতে আসেন তাদের জন্য আমেরিকার ‘দরজা এখনো খোলা। কিন্তু আপনি যদি ছাত্রের ছদ্মবেশে আসেন, তাহলে তো আমাদেরকে রক্ষা করতেই হবে।’

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা কমে গেছে। এর ফলে চাপের মধ্যে পড়লেও হাজার হাজার চীনা ছাত্রছাত্রী দেশে ফিরতে পারছেন না।

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন ::

Back to top button