ঝাড়গ্রাম

ঝাড়গ্রামের রাজার পুজো শুরু, সাবেক প্রথায় দেবীর কল্পারম্ভ ও অধিবাস

ঝাড়গ্রামের রাজার পুজো শুরু, সাবেক প্রথায় দেবীর কল্পারম্ভ ও অধিবাস

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: দেবীপক্ষের আগেই দেবী দুর্গার বোধন গড়-ঝাড়গ্রামের রাজার পুজোয়! চারশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই প্রথা। সেই জৌলুস আর নেই, তবে ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজ পরিবারের দেবী পুজোর নির্ঘন্টের পরিবর্তন হয় না কখনও। মহালয়ার আগে কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে মঙ্গলঘট স্থাপন করে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস শুরু হয়ে যায় পিতৃপক্ষে।

পুরনো আমলে রাজার গড় ঝাড়গ্রাম হল এখনকার ঝাড়গ্রাম শহরের পুরতন ঝাড়গ্রাম এলাকা। এখানেই রয়েছে রাজ বংশের কুলদেবী সাবিত্রীর মন্দির। মন্দিরের ভিতরে পৃথক চণ্ডীমণ্ডপে দুর্গাপুজোটি হয় পটে। আগে প্রাচীন পটটি ছিল শালপাতার ঝালরের উপর আঁকা। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন পটটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন চণ্ডীমণ্ডপের দেওয়ালে চিত্রিত পটে দেবীর পুজো হয়। দেবীর নাম ‘পটেশ্বরী’। শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে শুরু হল পুজো। চলবে বিজয়া দশমী পর্যন্ত।

রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেল, মল্লদেব বংশের আদিপুরুষ রাজা সর্বেশ্বর এই পুজোর সূচনা করেন। । পটে পুজো হওয়ার কারণ নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে রাজ পরিবারের সদস্য জয়দীপ মল্লদেব বলেন, “কুলদেবী সাবিত্রীর নিত্যপুজো হয় দুর্গামন্ত্রে। রাজ বংশের কুলদেবী থাকায় দুর্গাপুজো হয় পটে।” লোক সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “মল্লদেব বংশের কুলদেবী সাবিত্রীর কোনও মূর্তি নেই।

আরও পড়ুন : কারাগারে ধর্ষণের ভয় দেখানোর অভিযোগ রিয়ার

মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীর একগুচ্ছ কেশরাশিকে পুজো করা হয়। সম্ভবত, সেই কারণেই দুর্গাপুজোটিও হয় পটে।” তিনি জানালেন, জীতাষ্টমী তিথিতে রাজ পরিবারের সমৃদ্ধি ও প্রজাদের মঙ্গলকামনায় রাজবাড়িতে জীমূতবাহন অর্থাৎ ইন্দ্রের পুজো হয়। এর পাশাপাশি, শক্তিলাভের কামনায় জীতাষ্টমীর পর দিন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অস্ত্র পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়।

সাবেক প্রথা মেনে বৃহস্পতিবার জীতাষ্টমীর রাতে রাজবাড়ি থেকে মঙ্গলঘট নিয়ে আসা হয়েছে চণ্ডীমণ্ডপে। শুক্রবার কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে রাজ পরিবারের একটি প্রাচীন খড়্গকে এনে শুরু হয়েছে অস্ত্র পুজো। কথিত আছে, ওই খড়্গ দিয়ে বর্গি হামলা ঠেকিয়েছিলেন সর্বেশ্বরের পুত্র রাজা বিক্রম-মল্ল-উগাল ষণ্ডদেব।

রাজ পুরোহিত পার্থসারথি ঘোষাল বলেন, “রাজ পরিবারের কুলাচার অনুযায়ী, এ দিন থেকে দেবীর নবমাদি কল্পারম্ভ এবং অধিবাস শুরু হয়েছে। বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দেবীর ষোড়শোপচারে পুজো ও চণ্ডী-হোম হবে।” জয়দীপবাবু বলেন, “রাজ পরিবারের এই দুর্গাপুজোটি ঝাড়গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন পুজো।”
ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছে। অতীতের সাক্ষী হয়ে প্রতি বছর পূজিতা হন পটেশ্বরী।

 

আরও পড়ুন ::

Back to top button