ঝাড়গ্রাম

চিল্কিগড়ের ঐতিহ্যের কনক দুর্গার ‘গঞ্জভোগে’ হংসডিম্ব

চিল্কিগড়ের ঐতিহ্যের কনক দুর্গার 'গঞ্জভোগে' হংসডিম্ব

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: অন্নভোগ, খিচুড়ি, পঞ্চব্যঞ্জন তো আছেই, চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরে দেবী দুর্গার ভোগে দেওয়া হয় হাঁসের ডিমও! শুধু দুর্গাপুজোর সময় নয়, নিত্যপুজোয় দেবীর অন্নভোগের সময় রোজ দেওয়া হয় একটি করে হাঁসের ডিম। মনের ইচ্ছা পূরণের জন্যও দেবীকে হাঁসের ডিম দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। দুর্গাপুজোর চারদিনেও একই নিয়মে হয় পুজো। হাঁসের ডিমের ভোগকে বলা হয় ‘গঞ্জভোগ’।

পূজারী আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গী, গৌতম ষড়ঙ্গী-রা জানালেন, অন্য দিনের মতো শারদীয় দুর্গাপুজোর দিনগুলিতেও ষোড়শোপচারে দেবীর পুজো হয়। নৈবেদ্যে ফলমিষ্টি থাকে। দুপুরে অন্নভোগে ঘি-ভাত, খিচুড়ি, পঞ্চব্যঞ্জন, পায়েস, হাঁসের ডিম ও মাছ দেওয়া হয়। গঞ্জভোগে সেদ্ধ হাঁসের ডিম তন্ত্রমতে শোধন করে অন্নভোগের মাঝে দেবীকে নিবেদন করা হয়।

সপ্তমী থেকে নবমী তিনদিনই দেবীর গঞ্জভোগে অন্ন, পঞ্চব্যঞ্জন, পায়েস, মাছ, হাঁসের ডিম থাকে। নবমীর দুপুরে হয় কালো পাঁঠার মাংসের বিরাম ভোগ। মন্দিরে প্রাঙ্গণে পাঁঠা, ভেড়া ও মোষ বলি হয়। তবে বলির মাংসের ভোগ দেবীকে দেওয়া হয় না।

কনকদুর্গা রক্তমুখী। তাই নিত্য আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। নীলসরস্বতী রূপী দেবীর সন্তুষ্টি বিধানে হাঁসের ডিমের ভোগ দেওয়ার প্রথাটি কয়েকশো বছর ধরে চলে আসছে। কালিকা পুরাণমতে ও তন্ত্রমতের মিশেলে দেবীর পুজো হয়।

আরও পড়ুন : যে কথা শুনে জেলের ভেতর কান্নায় ভেঙে পড়লেন রিয়া!

১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দের শারদীয় শুক্ল সপ্তমীর দিনে তৎকালীন জামবনি পরগনার সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দেবী কনকদুর্গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পাটরাণী গোবিন্দমণির হাতের কঙ্কণ দিয়ে দেবীর বিগ্রহ তৈরি হয়েছিল। মূল সোনার বিগ্রহ বহু বছর আগে চুরি গিয়েছে। পরে অষ্টধাতুর মূর্তিও চুরি হয়ে যায়। এখন অষ্টধাতুর বিগ্রহে দেবীর পুজো হয়। দেবী অশ্ববহিনী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, নীলবস্ত্র পরিহিতা। নিয়মিত আমিষ ভোগ দেওয়া হয়।

পরে সামন্তরাজা গোপীনাথের দৌহিত্র কমলাকান্ত ধবলদেব চিল্কিগড়ের রাজা হন। রাজা কমলাকান্তের উত্তরসূরিরা এখন মন্দিরের সেবাইতের দায়িত্বে। মন্দিরের প্রথম পূজরী ছিলেন রামচন্দ্র ষড়ঙ্গী। রামচন্দ্রের উত্তরসূরি আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গী ও তাঁর সন্তানরা এখন দেবীর নিত্যপুজো ও বিশেষ পুজো করেন। মন্দির চত্বরের নিয়ন্ত্রণ অবশ্য রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন পুজো পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন রাজপরিবারের সদস্যরা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button