মতামত

ইতিহাসপ্রেমী বাঙালির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র কৃষ্ণনগর

ইতিহাসপ্রেমী বাঙালির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র কৃষ্ণনগর
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি

বর্তমান যুগে পৌরাণিক ঘটনা তেমনটাই হয়তো প্রাসঙ্গিক নয়, কিন্তু ইতিহাস আজও কথা বলে। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনে যা ঘটেছিল তারা হয়তো আজ বাস্তবে নেই, কিন্তু তাদের সেই ঘটনা আজও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। বর্তমান যুগে এমন অনেক মহান ব্যক্তিত্ব আছে ,যাদের ইতিহাস অতীত কালের নতুন প্রজন্ম ও দেখে যেতে পারবে । তেমনি এক ঘটনার সাক্ষী ও উদাহরণ হয়তো আমি নিজেই।সেই রাজাও নেই৷ সেই বিদূষকও নেই৷ শুধু ইতিহাস আছে৷ তারই পুনরাবৃত্তি হল প্রায় ২৮০ বছর পর৷ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বংশধরের মুখোমুখি হলেন বিদূষক গোপাল ভাঁড়ের বংশধর৷কলকাতা বইমেলায় ২০১৪ সালে৷ উত্তর পুরুষের হাত ধরে দুই ঐতিহাসিক চরিত্র আরও জীবন্ত হয়ে উঠল৷হুগলির খানাকুল থেকে গোপাল ভাঁড়কে নিজের রাজসভায় বিদূষক করে এনেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়৷ গোপাল ভাঁড় মানেই তো হাসির ফোয়ারা।আমি নিজে শৈশবে বাংলার এই রসিকের গল্পে বুঁদ হয়েছি, বুঁদ হননি এমন সংখ্যা মেলা ভার।কিন্তু কে এই গোপাল ভাঁড়। তিনিই কি শুধুই গল্পের এক চরিত্র? না তার বাস্তব অস্তিত্ব ছিল? এ নিয়ে লেখালেখিও কম হয়নি।তবে কলকাতা বইমেলার পর থেকেই আমার মনের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্র রাজবাড়ীর উপলব্ধির ঘটনা আখি কেটে গিয়েছিল।

ইচ্ছা থাকলেও সেই সময় উপায় হয়ে ওঠেনি, কৃষ্ণচন্দ্র রাজবাড়ীর দেখা বা কৃষ্ণনগরের যাওয়ার মত সামর্থ্য হয়ে ওঠেন। আমার জীবনের বহু লেখা কলেজ স্ট্রিটে দিতাম,সেই লেখা কোনো নিয়ে প্রকাশ করেনি। অথচ আমার লেখা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। এমনই ঘটনা ঘটেছে আমার নিজের লেখা অনেক অন্য লেখক এর নামে বই বেরিয়েছে। তবে দাস পাবলিকেশন এর হাত ধরে আমার একটি বই প্রকাশ হয়েছিল শিক্ষার উপরে ইংরেজি স্টুডেন্ট কম্পজিশন গ্রামার। সেই সময় নদীয়া জেলায় বইমেলা শুরু হয়, দাস পাবলিকেশন এর মালিক সমীর দাসের হাত ধরে আমি বইমেলাতে পৌঁছায় নবদ্বীপ ধামে।সেখান থেকে বই দিতে হাজির হয়েছিলাম শ্রীচৈতন্যদেব ও পরম গুরু প্রভুপাদের পাদস্পর্শে ধন্য পুণ্যভূমি মায়াপুরে।

ঐদিন সন্ধ্যায় ইসকন মন্দির প্রাঙ্গণে বসে ম্যাপ সার্চ করতে গিয়ে হঠাৎই দেখতে পেলাম খুব কাছেই রাজার শহর ‘কৃষ্ণনগর’ অবস্থিত। ব্যস! আর দেরি করলাম না।পরদিন তথা ২৯ শে এপ্রিল কি মার্চ হবে খুব ভোরেই মঙ্গল আরতি দেখেই বন্ধু ঋতম ও ভাই সৌম্যদীপকে নিয়ে ভাগিরথীর স্নিগ্ধ পরিবেশে সকালের নিষ্কলুষ,পবিত্র হাওয়া উপভোগ করতে করতে অজানা-অদেখা ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে চাক্ষুষ করার অনুসন্ধিৎসা নিয়ে রওনা দিলাম কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে।রাজবাটীতে গিয়ে বাইরে থেকে রাজবাড়ির অতুলনীয়া স্থাপত্য ও অসাধারণ শিল্পকর্মকে চাক্ষুষ করলাম।আমার অভ্যাসবশত সেখানে গিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষ ও রাজদরবারের প্রহরীদের থেকে রাজবাটীর ইতিহাস সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করলাম।সেই সামান্য অনুসন্ধান থেকে যা কিছু খুঁজে পেলাম তাই আপন মনের মাধুকী মিশিয়ে এই লেখায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম।নদিয়ার নদী জলঙ্গি ছিল একসময় নদিয়ার প্রধান বাণিজ্য পথ। ব্রিটিশ শাসকেরা নদীর বাঁক ছেঁটে বাণিজ্যপথ আরও প্রশস্ত করতে নদীর মৃত্যুর পথটাই বেশ কিছুটা প্রশস্ত করে দিয়েছিল।

ইতিহাসপ্রেমী বাঙালির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র কৃষ্ণনগর

মানুষের লোভ আর প্রশাসকের উদাসীনতা এই দুইয়ে মিলে একটু একটু করে হারিয়ে যেতে বসে জলঙ্গি নদী। ১৫১০ সালে চৈতন্যদেব তাঁর সন্ন্যাস গ্রহণের বারো দিনের মাথায় ফিরেছেন শান্তিপুরে। খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ পাগলের মত ছুটে এসেছিলেন তাঁকে দেখতে, সেখানেই নদীর ঘাটে লোকে লোকারণ্য। নৌকা না পেয়ে সাঁতরে, ভেলা তৈরি করে যে যে ভাবে পারেছেন, নদী পার হয়েছিলেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে লিখছেন এই নদীর কথা। করিমপুরের উত্তরের চর মধুবনায় উপন্ন হয়ে নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে গঙ্গায় মিশেছে জলঙ্গি নদী।

কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজ নদিয়া জেলার প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কলেজ অতীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকলেও বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, সশস্ত্র বিপ্লবে এই মহাবিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এই কলেজের অনেক ছাত্র ছাত্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, মনমোহন ঘোষ, লালমোহন ঘোষ, প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্ত, হেমচন্দ্র বাগচী, তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ সান্যাল, প্রমথনাথ বসু প্রমুখ।

এই মহাবিদ্যালয়ের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন বিশিষ্ট শেক্সপিয়ার বিশেষজ্ঞ, প্রেসিডেন্সি কলেজের অন্যতম অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি.এল. রিচার্ডসন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে স্যার রোপার লেথব্রিজ, উমেশচন্দ্র দত্ত, জ্যোতিভূষণ ভাদুড়ী, রাখালরাজ বিশ্বাস, সতীশ চন্দ্র দে, রামতনু লাহিড়ী, পন্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার, সুবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত, মুহম্মদ আবদুল হাই, কবি বিষ্ণু দে, সুধীর চক্রবর্তী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।১৮৫৬ সালে সারস্বত চর্চ্চার কেন্দ্র রূপে গড়ে কৃষ্ণনগরে গড়ে ওঠে সাধারন গ্রন্থাগার। সেটিও দেখে নিতে পারেন। আর চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন কৃষ্ণনগর পৌরসভা।

ব্রিটিশ আমলে ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই পৌরসভা। কৃষ্ণনগরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য জিনিস হল এখানকার সরভাজার ও সরপুরিয়ার শোনা যায়, এই দুই মিষ্টি আবিষ্কার করেছিলেন কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত শিল্পী অধরচন্দ্র দাস। রেসিপি গোপন রাখতে এই দুই মিষ্টি তৈরির সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখতেন তিনি।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মভিটেও এই কৃষ্ণনগর। একটু কষ্ট করে সন্ধান করতে হবে তাঁর। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কবির বাড়ি। শুধু কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুরগামী রেললাইনের পাশে কবির বাড়ির প্রবেশ পথের দু’টি তোরণ কোনও রকমে দাঁড়িয়ে আছে। বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়েরও জন্মস্থান এই জায়গা।সাহিত্য-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের মিলনতীর্থ এই শহর আজও ইতিহাসপ্রেমী বাঙালির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র।কৃষ্ণনগরের রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই বৈচিত্র্যময়। আর সেই ইতিহাসে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ভূমিকা বিশ্ব দরবারে। খুব কাকতালীয় আর খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে এই রাজবাড়ি একাধারে বাংলার পরাধীনতা আবার স্বাধীনতা দুই ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। ইতিহাসের পাতা একটু উল্টালেই তা দেখা যাবে।বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নানান তথ্য পরিবেশন করা আছে। তবে সেটাকে আমি আজ সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারলাম না ।কিন্তু কিছুটা হলেও আমার কলমে লিপিবদ্ধ করে যেতে চাচ্ছি আমার ভাষাতে।

ইতিহাসপ্রেমী বাঙালির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র কৃষ্ণনগর

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বারো ভুঁইয়া দমনে, বিশেষ করে বাংলা বিজয়ে মানসিংহকে সাহায্য করার জন্য পুরস্কার হিসাবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ভবানন্দ মজুমদার সম্মান লাভ করেন এবং সঙ্গে পান নদিয়া, সুলতানপুর, মারুপদহ, মহৎপুর, লেপা, কাশিমপুরের মতো ২৪টি পরগনা। তাঁকেই বলা হয় নদিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা৷ প্রথমে বাগোয়ান গ্রামে রাজধানী স্থাপন করেন ভবানন্দ, পরে ভবানন্দের পৌত্র রাঘব রায় মাটিয়ারি থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে আসেন ‘রেবতী’ গ্রামে৷ জনশ্রুতি, কৃষ্ণের অগ্রজ বলরামের স্ত্রী রেবতীর নাম অনুসারেই ওই গ্রামের নামকরণ হয় রেবতী পরে লোকমুখে তা ‘রেউই’ হয়ে যায়৷ রাঘব রায়ের পুত্র রুদ্র রায় ছিলেন পরম কৃষ্ণভক্ত৷ তিনি শ্রীকৃষ্ণের নামানুসারে রেউই গ্রামের নামকরণ করেন ‘কৃষ্ণনগর’৷

তিনি ঢাকা থেকে আলাল বক্স নামে এক স্থপতিকে আনিয়ে চকবাড়ি, কাছারিবাড়ি, হাতিশালা, আস্তাবল, নহবৎখানা এবং পঙ্খ অলঙ্কৃত দুর্গাদালান এসব নির্মান করান। রুদ্র রায়ের প্রপৌত্র কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৭২৮ সালে নদিয়ার রাজা হন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। তাঁর রাজত্বকালেই ফুলে ফেঁপে ওঠে রাজ্য। তাঁর আমলকে ‘নদীয়ার স্বর্ণযুগ’ বলা হয়৷সে সময়ে রাজ্যের পরগনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ টি আর রাজ্যের পরিধি হয় ৮৫০ ক্রোশ। ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায় ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর মাঠে, ইংরেজদের কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে।

আর দেশের সেই পরাধীনতার লজ্জাজনক ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাম। ১৭৫৬ সালে আলিবর্দি খাঁ-র মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসনে বসলেন তাঁরই দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলা। অল্প বয়সে রাজকর্ম হাতে পেয়ে আর বয়সের দোষে রাজকর্মচারীদের চক্ষুশূল হলেন সিরাজ। জগৎ শেঠের নেতৃত্বে সিরাজকে সরানোর চক্রান্ত শুরু হল। সেই দলে সামিল হয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রও। শোনা যায়, ব্রিটিশ সরকারকে পত্রযোগে পরামর্শদান করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশকে সৈন্য দিয়েও সাহায্য করা হয়েছিল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকেই। যার পরিণাম হল পলাশীর প্রান্তরে সিরাজবাহিনী পরাস্ত আর তারপর মীরজাফরের পুত্র মীরণের তত্ত্বাবধানে সিরাজহত্যা।

এখান থেকেই শুরু হল ২১০ বছর অন্ধকারময় শৃঙ্খলের ইতিহাস।ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা, সেই দুর্গাপুজোয় ছড়িয়েছিল এই বাংলাতে, কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ী পূজা কেন্দ্র করে তেমনি তথ্য বহু ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া গেছে। কথাগুলো না লিখলে আজকে লেখা টি হয়তো সম্পূর্ণ হবেনা। ন sদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরে গোটা বাংলায় দুর্গা পুজো চালু হয়েছিল। আর কৃষ্ণনগরে তাঁর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোও দেখবার মতো। রাজতন্ত্র অনেক আগে উঠে গেলেও এই রাজবাড়ির ঐতিহ্যের পুজো দেখতে এখনও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা ভিড় জমান।

এবার ষষ্ঠী থেকেই রাজবাড়ির পুজোর খুঁটিনাটি দেখতে উঁকি দেওয়া শুরু হয়েছে। কামানের তোপ দেগে সন্ধি পুজো , নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে বিসর্জনের বার্তা রানিমার কাছে পৌঁছে দেওয়ার রীতি বন্ধ হয়ে গেলেও ন’দিন ধরে হোমের আগুন একটানা জ্বালিয়ে রাখা, ‘যাত্রা মঙ্গল’, ‘শত্রুবধ’ ইত্যাদির মতো পুজোরীতি এখনও ধরে রেখেছেন পুজো বাড়ির উত্তরসূরীরা। পুজোর ক’দিন দেবীর প্রসাদ, ভোগ ইত্যাদিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিবেদন করার রীতিও চালু আছে আজও। এই রাজবাড়ির বর্তমান বংশের বধূ অমৃতা রায় বলেন,’ঘরের মেয়ে কৈলাশের এত দূরের পথ ভেঙে বাপের বাড়ি আসছেন বলে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন তাই সপ্তমীতে হালকা খাবার দেওয়া হয় তাঁকে।

সপ্তমীতে সাত রকমের ভাজা দেওয়া হয়। আলুভাজা, পটলভাজা, বেগুনভাজা, উচ্ছেভাজা, কুমড়োভাজা, শাকভাজা, কাঁচকলা ভাজা দেওয়া হয় থালায়। অন্নভোগ, খিচুড়িভোগের সঙ্গে লাবরা, চচ্চরি, আমড়া চাটনি, মিষ্টি। রীতি মেনে অষ্টমীতে আট পদের ভাজা, ছানার ডালনা, আলু ফুলকপি তরকারি, সহ ৫ রকম তরকারি,ডাল, লুচি পোলাও,আমের চাটনি,পায়েস মিষ্টি। নবমীতে ন’রকমের ভাজা। অন্নভোগের সঙ্গে ইলিশ, পার্শে ,রুই মাছ ভাজা আর ৫ রকম তরকারি, পোলাও, মিষ্টি। দশমীতে দেবী ফিরে যাবেন বলে ফের সতর্ক হতে হয় রাজরাজেশ্বরীর দুর্গার ভোগ নিয়ে। দশমীতে দই চিড়ে আর অন্ন ভোগের সঙ্গে শিঙ্গি মাছের ঝোল। দুটোই দেওয়া হয়,শরীর বুঝে যেটা উনি খাবেন খেতে পারেন।

ফল ফলারি ভোগ রোজই নিবেদন করা হয় চারদিন। অমৃতা বলেন, ‘কৃষ্ণচন্দ্র দুর্গা পুজোকে গোটা বাংলায় ব্যাপক ছড়িয়েছিলেন। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে সুনাম রয়েছে কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের৷ মাটিও এখানে কথা বলে। মাটির পুতুলের পাশাপাশি প্লাস্টার অফ প্যারিসের পুতুলও বেশ জনপ্রিয় হ্যতে উঠেছে৷ শিল্পীদের আঙুলের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে এখানকার পুতুল। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও তার কদর যথেষ্ট। সাধারণ মানুষ কিংবা মনীষীদের অবিকল প্রতিকৃতি নিখুঁতভাবে তৈরি করতে পারেন ঘূর্ণির মৃৎশিল্পীরাই৷ প্রতিটি মাটির পুতুলে মুখের চামড়ার ভাঁজ,কালো চুলের মাঝে পাকা চুল কিংবা চোখের মনি যে ভাবে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা তা দেখার। দেশ বিদেশ থেকে অনেকেই আসেন ঘূর্ণির পুতুলপট্টিতে৷ এখানে রয়েছে পুতুলের সাজানো সংসার। কৃষ্ণনগর শহরের প্রান্তে করিমপুরগামী রাজ্য সড়কের পাশে এই পুতুলপট্টি৷ ১৮৫১ সালে লণ্ডনে ‘এগজিবিশন অব দ্য ওয়ার্কস অফ ইন্ডাস্ট্রিজ অফ অল নেশনস’ প্রদর্শনীতে স্থান পায় ঘূর্ণির শিল্পী শ্রীরাম পালের শিল্পকর্ম।

সেই শুরু, তারপর থেকে আজও সেই ইতিহাসের ব্যতিক্রম হয় নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বারবার নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন ঘূর্ণির।এসব কথাগুলো আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের কাছে ইতিহাস বহন করে চলছে কৃষ্ণনগরের মাটিতে নয় বাংলার বুকে। তাই আমরা গর্ব করে বলতে পারি ,কৃষ্ণনগর নগরের উপকণ্ঠের এই রাজবাড়ি অতীত ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ডানদিকে এগোলেই বিশাল মাঠ। মাঠ শুরু হচ্ছে চকবাড়ি থেকে। এক সময় এখানে একটা মেয়েদের স্কুল ছিল। মহারানি জ্যোতির্ময়ীর নামে সেই স্কুলের নামকরণ করা হয় মহারানি জ্যোতির্ময়ী বালিকা বিদ্যালয়। এখন অবশ্য পোড়ো বাড়ি হয়েই পড়ে রয়েছে । চকবাড়ি থেকে কিছুটা এগোলেই নহবতখানা। শ্যাওলামাখা পাঁচিলের গা বেয়ে নোনা জলের ধারা, আর ঘুঘুর বসবাস সেখানে। নহবতখানার পাশেই রাজবাড়ির পুকুর। সেই পুকুরও প্রায় মৃত্যুশয্যায়। তবু এখনও এই পুকুরের তাৎপর্য আছে ষোলো আনা। এখনও রাজবাড়ির ঠাকুর ভাসান হয় নিজস্ব এই পুকুরের ঘাটেই।

দুর্গাপুজো আর জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় দলে দলে মানুষ আসেন সেই শোভাযাত্রা দেখতে। নহবতখানাকে বাঁয়ে রেখে এগোলে ডান হাতে পড়বে নাটমন্দির।পঙ্খের কাজ করা এই নাটমন্দির দেখলে এখনও চোখ ফরানো যায় না। আর নাটমন্দিরের বাঁহাতে রাজবাড়ির মূল ফটক। নাটমন্দিরের ভিতর দিয়েও সাজানো সরু পথ রয়েছে মূল রাজবাড়ির দিকে। তবে সেই পথ একেবারেই পরিবারের লোকেদের ব্যবহারের জন্য। বছরের কয়েকটি বিশেষ তিথিতে সাধারণের জন্য খোলা থাকে এই নাটমন্দির। যেমন একটা হল বারোদোলের মেলা। এছাড়া দুর্গা পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো তো আছেই। বারোদোল বসে চৈত্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে।

চলে টানা এক মাস। মোটামুটি ভাবে রংদোলের পর এক মাসের মাথায় এই মেলা শুরু হয়। তবে এই মেলায় আমার কোনদিন আসা হয়নি। যতটুকু তথ্য খুঁজে পেয়েছিলাম মেলা সম্পর্কে সেটুকু বেলা বলাও আমাকে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। রাজবাড়ি সম্পর্কে বলতে গিয়ে পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে।কৃষ্ণচন্দ্র রায় মহা সমারোহে এই পারিবারিক দুর্গাপুজো কথা। তিনিই প্রথম সর্বসাধারণের মধ্যে দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন যা পরবর্তী কালে সর্বজনীন পুজোর পরিচিতি পায়। রাজবাড়ির দুর্গার প্রচলিত নাম রাজরাজেশ্বরীর। এখানে তিনি যুদ্ধের বেশে সজ্জিত। প্রচলিত ডাকের সাজের চেয়ে আলাদা। একে বলা হয় ‘বেদেনি ডাক’।

মুর্শিদাবাদের নবাব কর না দেওয়ার অভিযোগে বন্দি করে রেখেছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে। নবমীর দিন শেষবেলায় কৃষ্ণচন্দ্রকে মুক্তি দিলেন নবাব। বিসর্জনের আগে একবার অন্তত দেবীর মুখদর্শন করতে চান তিনি। রাজবাড়ি পৌছাবার পূবেই দশমীর বিকেল হয়ে যাওয়ায় এই বছর আর রাজরাজেশ্বরী মায়ের মুখ দেখা হলনা তাঁর।

জলস্পর্শ না করে দুঃখ কষ্টে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি, এমন সময় স্বপ্নে এক রক্তম্বুজা চতুর্ভুজা সিংহবাহিনী দেবীমূর্তির দর্শন পেলেন। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে সপ্তমী অষ্টমী নবমী, এই তিন দিন তাঁর পুজো করার আদেশ পেলেন কৃষ্ণচন্দ্র। এই আদেশ পেয়ে তিনি ছুটে গেলেন প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কালীশঙ্কর মৈত্রের কাছে। তিনি বললেন, এই দেবী চণ্ডীরই রূপ। অনুগতরা তাঁকে পরামর্শ দিলেন কিছুদিন রাজবাড়ি থেকে দূরে থাকতে। নবাব যদি খবর পান, রাজা ফিরে এসে পুজোর প্রস্তুতি করছেন তাহলে ফের বিপদ হতে পারে। এ কথা শোনার পর রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সেখান থেকেই তিনি সোজা চলে গেলেন চন্দননগরে তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু ইন্দ্রনারায়ণ চোধুরীর কাছে।

গোপাল ভাঁড় আর কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র শিবচন্দ্র পুজোর আয়োজন করতে লাগলেন। নবমীর দিন গোপনে রাজবাড়িতে ফিরে অঞ্জলি দিলেন। দেবীমূর্তি সিংহের ওপর দু’দিকে পা দিয়ে বসে। চার হাতে শঙ্খ চক্র তির ও ধনুক। সিংহের মুখ ঘোড়ার মতো। বলা হয়, হিরণ্যকশিপুকে শ্রীকৃষ্ণ বধ করেছিলেন এই রূপে। এটি নৃসিংহ মূর্তি। কৃষ্ণচন্দ্র বিশ্বাস করতেন তাঁদের দুর্গা মা-ই আবার অন্য রূপ ধরে ফিরে এসেছেন। তাই দুর্গামূর্তির মতো জগদ্ধাত্রী মূর্তিকেও কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে বলা হয় রাজরাজেশ্বরী। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ঠিক কোন সময়ে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র দু’বার মুর্শিদাবাদের নবাবের হাতে বন্দি হন।

প্রথম বার ১৭৫৪, মতান্তরে ১৭৫৬ সালে। দ্বিতীয় বার ১৭৬৩ বা ’৬৪ সালে। গবেষকদের মতে, প্রথম বার তিনি আলিবর্দির হাতে বন্দি হয়েছিলেন। যদিও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের উত্তরপুরুষ মণীশচন্দ্র রায়ের মতে, রাজকর বকেয়া রাখার অজুহাতে সিরাজ তাঁকে বন্দি করেন। তাঁর কথায়, সেই সময় ফারসিতে লেখা রাজসভার কার্যাবলী ও অন্যান্য ঘটনার বিবরণ যা এখনও তাঁদের কাছে পারিবারিক সূত্রে রক্ষিত রয়েছে, সেই বিবরণ অনুযায়ী ১৭৫৬ সাল, অর্থাৎ সিরাজের রাজত্বকালে কৃষ্ণচন্দ্র বন্দি হন। রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘কৃষ্ণচন্দ্ররায়স্য চরিত্রম’ বইয়ে লিখেছেন, সিরাজের দুর্ব্যবহার ও ঔদ্ধত্যে অতিষ্ঠ হয়ে তৎকালীন বিভিন্ন প্রভাবশালী লোক কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে পরামর্শ চান। কৃষ্ণচন্দ্রের উপস্থিতিতেই সিরাজকে গদিচ্যুত করে মিরজাফরকে সিংহাসনে বসানোর ষড়যন্ত্র হয়। কাজেই কৃষ্ণচন্দ্র এবং সিরাজের মধ্যে দ্বৈরথের সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করে দেওয়া যায় না।

আর একটি মত অনুযায়ী, ১৭৬৩ বা ’৬৪ সালে মীরকাশিমের আমলে কৃষ্ণচন্দ্র বন্দি হয়েছিলেন। ইংরেজদের সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগাযোগ আছে এই সন্দেহে মীরকাশিম কৃষ্ণচন্দ্রকে মুঙ্গের দুর্গে বন্দি করে রাখেন। কিছু কিছু গবেষকের মতে, সেখান থেকে ফেরার সময় রকুনপুরঘাটের কাছে নৌকার মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন।সেই থেকে জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীতে ক্রমান্বয়ে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর পুজো হয় রাজবাড়িতে। পুজোর সময়ে ঠাকুরঘর থেকে নারায়ণ শিলা নামিয়ে আনা হয় ঠাকুরদালানে।

কৃষ্ণচন্দ্রের নিজস্ব উপসনার জন্য একটি জগদ্ধাত্রী মূর্তি ছিল। সেটি রাখা হত গোবিন্দবাড়িতে। দেশভাগের সময় যখন হঠাৎ কৃষ্ণনগর পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায় তখন এই বিগ্রহও চলে যায় সেখানে। মূর্তিটি ভেঙে প্রায় নষ্ট করে দেয় দুষ্কৃতীরা। রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী এবং রাজা সৌরীশচন্দ্রের উদ্যোগে ফের যখন কৃষ্ণনগরের সংযুক্তি ঘটে এ দেশের সঙ্গে তখন ভাঙা মূর্তিটি ফেরত পায় রাজপরিবার। রাজপরিবারের সদস্যরা পুজোয় সেইমূর্তিটিও ঠাকুরদালানে সর্বসমক্ষে নিয়ে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

সপ্তমী পুজোর সময় দেবীকে পায়েস, মিষ্টি, দুধ, ছানা, ফল, বাদাম, কিসমিস, কাজু, মেওয়া দেওয়া হয়। অষ্টমী পুজোর সময় দেওয়া হয় খিচুড়ি, তরকারি, মিষ্টি, চাটনি। নবমীর পুজোতে দেওয়া হয় পোলাও ও নানা রকম তরকারি। এ ছাড়াও ভোগে দেবীকে তিন থেকে পাঁচ রকমের মাছ দেওয়া হয়।

বহুকাল আগে কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ার পুজোতে অনুদান দেওয়ার প্রথা শুরু করেছিলেন মহারাজ শ্রীশচন্দ্রের স্ত্রী বামাকালী দেবী। পনেরো টাকা অনুদান দেওয়া হত সেই সময়। সেই প্রথা এখনও চলছে। রাজবধূ অমৃতা রায় প্রতিবছর মালোপাড়ায় অনুদান দেন। বিসর্জনের সময় রাজবাড়ির চকের সামনে থেকে ঠাকুর ঘুরিয়ে রানিদের দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রথাও বহুদিনের। এখনও সব ঠাকুর এখান থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে তবেই বিসর্জন হয়। রাজপরিবারের সদস্যরা চক থেকে ওপর থেকে ঠাকুর দেখেন।মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি ভারতচন্দ্র ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি।

এ ছাড়া সাধককবি রামপ্রসাদ সেন, পন্ডিত বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি, জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত প্রমুখ তাঁর রাজসভা অলঙ্কৃত করেন। রাজা বিক্রমাদিত্যের মত তাঁর রাজসভাও অলঙ্কৃত করতেন নবরত্ন। নবরত্ন সভার মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড়। দরবারের প্রখ্যাত বিদূষক গোপাল ছিলেন কৃষ্ণ চন্দ্রের পরামর্শদাতা। কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে আঠারো শতকের মধ্যভাগে ভারতচন্দ্র তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘অন্নদামঙ্গল কাব্য’ রচনা করেন। কথিত আছে, দেবী অন্নপূর্ণার স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনি ভারতচন্দ্রকে দিয়ে দেবীর মাহাত্ম্যসূচক এ কাব্য রচনা করান। কাব্যটি তিন খন্ডে বিভক্ত।

কৃষ্ণচন্দ্র বহু জনহিতকর কাজও করেছেন। ১৭৬২ সালে নদীয়া জেলার শিবনিবাসে তিনি একটি বৃহৎ শিবমন্দির নির্মাণ করেন এবং বাংলায় তিনিই প্রথম জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেন। তাঁর উৎসাহ ও উদ্যোগে নাটোরের কয়েকজন বিখ্যাত মৃৎশিল্পী কৃষ্ণনগরে গিয়ে মৃৎশিল্পের প্রভূত উন্নতি ও প্রসার ঘটান। যা আজকে ঘূর্ণি নামে পরিচিত।তিনশো বছর আগে দেবী অন্নপূর্ণাই ছিলেন রাজবাড়ির মূল আরাধ্যা। সেই পুজোকে আবার নতুন করে চালু করলেন বর্তমান রাজা-রানি।

বিকেল হলেই এখানকার মাঠে তাসের আড্ডা জমান একদল বৃদ্ধ। শহরের মূল রাস্তা, যেটা কৃষ্ণনগর থেকে বগুলার দিকে চলে যাচ্ছে, সেই রাস্তার উপরেই রয়েছে রাজবাড়ির চক। এই মুহূর্তে যতটুকু তথ্য সম্ভাবনা হয়েছে সেটুকুই’ লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছি।রাজবাড়ি খোলা থাকে বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে। বছরের কয়েকটি বিশেষ তিথিতে সাধারণের জন্য খোলা থাকে এই রাজবাড়ি-নাটমন্দির। দুর্গা পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ছাড়া বারোদোলের সময় খোলা থাকে রাজবাড়ি। এখানে বিষয়টা শেষ নয়। রাজবাড়ীর সাথে জড়িয়ে রয়েছে এইতিহাস।

কৃষ্ণনগরের ক্যাথলিক চার্চকে ‘মহাগির্জা’ বলা হয়। এখানে বেশ কিছু মূর্তি রয়েছে, তার বেশ কিছু খোদ ইতালি থেকে আনা। কৃষ্ণনগরের স্থনীয় নামী শিল্পীদের তৈরি মূর্তিও রয়েছে এখানে । কৃষ্ণনগর মহাগির্জার খ্রিস্টমন্দির ইতালির যাজক লুচিয়ানো কালোসিসের স্বপ্নের ফসল। ২০০৯ সালে শেষ হয় এর নির্মাণ। নির্মানের কিছুকাল পরেই তিনি মারা যান। কৃষ্ণনগরের স্থানীয় স্থপতি কারিগরেরাই এই খ্রিস্টমন্দির তৈরি করেন। ইতালির লুচিয়ানো কালোসিসে শেষ পর্যন্ত এই দেশকে এমন ভালবেসে ফেলেছিলেন যে, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্বও নিয়ে নেন। গির্জার ভেতরে যীশুর জীবনের নানা সময়ের ৩৫টি কাঠের মূর্তি ইতালির ভাষ্কর্যের অনুকরণে তৈরি।

লেখক:- মৃত্যুঞ্জয় সরদার

 

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। West Bengal News 24-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আরও পড়ুন ::

Back to top button