মতামত

দেশের তুলনায় বাংলার নারীরা আজও নিরাপদে

দেশের তুলনায় বাংলার নারীরা আজও নিরাপদে
প্রতিকি ছবি

বর্তমান ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে দাঁড়িয়ে কোন কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ধামাচাপা দেওয়া যায় না।আগের তুলনায় সারা ভারতবর্ষে প্রায় 80% মানুষ শিক্ষিত জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান । এ যুগে আমরা জানি না এমন কোন বিষয় নেই অ্যান্ড্রয়েড দুনিয়াতে।কয়েক সেকেন্ডে তামাম দুনিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে, নানা ঘটনার বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে।এর পরেও আমরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপরে বারংবার ধর্ষণকারীকে অন্ধকারের রাখছে বলে অভিযোগ তুলেছি। তবে সে অভিযোগ আজ পর্যন্ত প্রমাণিত নয়। বিশেষ করে দেশে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলোই ধর্ষণের হার পশ্চিমবঙ্গ তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি, তেমনটাই পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে।

বাংলার একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মতন মানসিকতা ও সাহসিকতার রাখে। সেই কারনে বাংলা তুলনায়,দিনদিন দেশের মহিলাদের নিরাপত্তা কমছে। তারই প্রমাণ পাওয়া গেল , উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা। দেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই ওই রাজ্যের হাথরাস এলাকায় এক দলিত নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। ১৫ দিন হাসপাতালে লড়াইয়ের পর মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন ওই নারী।মাঝরাতে ওই নারীর পরিবারের সদস্যদের কিছু না জানিয়েছেই তার মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চিতার আগুন নিভলেও দেশজুড়ে জ্বলছে ক্ষোভের আগুন।

এখনও সেই ঘা শুকায়নি। এর মধ্যেই আরও এক দলিত নারীকে গণধর্ষণের খবর সামনে এলো।হাথরাস থেকে প্রায় ৫শ কিলোমিটার দূরেই ওই ঘটনা ঘটেছে। ২২ বছর বয়সী এক দলিত তরুণীকে মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়েছে। জাতীয়স্তরের সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার বলরামপুরের ওই নারীকে লক্ষ্নৌর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়েছে।পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ওই নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে।

শরীরে মারাত্মক জখম নিয়ে মারা গেছেন তিনি। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।এদিকে, হাথরাসে ধর্ষণের ঘটনায় এখনও ক্ষোভ থামেনি। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর টানা ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যু হয় দলিত পরিবারের ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণীর।এরপর হাসপাতাল থেকে মরদেহ পাওয়া নিয়েও পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে পরিবারের। ওই ঘটনার পর পুলিশ এ সংক্রান্ত অভিযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই লেখাটা লিখতে বসে একথা অবশ্যই বলতেই হয়।ধর্ষণ, মহিলাদের ওপর ঘটে যাওয়া অপরাধমূলক ঘটনা ভারতে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ২০১৮ সালের রিপোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিদিন ৯১টি ধর্ষণ, ৮০টি খুন আর ২৮৯টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, প্রতি ১৫ মিনিটে সেখানে একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হন। কিন্তু বেসরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি। প্রতিদিন ভারতের ধর্ষণের শিকার হন শতাধিক নারী।

উল্লেখ্য,ধর্ষণের ঘটনায় বিচারে ভারতে ইতিমধ্যে ফার্স্ট ট্রাক কোর্টেও শুরু হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কখনও কখনও বেশি সময় লাগছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতে দুর্বলদের ওপর সবলদের কর্তৃত্ব ফলাতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। শ্রেণী-বৈষম্য এবং পুরুষ-শাসিত যে সমাজে হিংসা ছড়িয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা আশঙ্কাজনক-ভাবে বাড়ছে, সেখানে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনাকে স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে দেখছেন অনেকেই।মূলত মেয়ে ভ্রুণ হত্যার কারণে ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম।

দেশটিতে প্রতি ১০০ মেয়ে শিশুর জন্মের তুলনায় ১১২টি ছেলে শিশু জন্ম নেয়। এ কারণে, স্বাভাবিকের চেয়ে নারীর সংখ্যা ভারতে প্রায় ছয় কোটি ৩০ লাখ কম।অনেকেই বিশ্বাস করেন, পুরুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার কারণে নারীর ওপর যৌন নির্যাতন বাড়ছে। নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাতে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের চিত্র সবচেয়ে খারাপ। এবং এ রাজ্যে গণ ধর্ষণের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। অবিলম্বে নারীদের ধর্ষণ দেশ থেকে বন্ধ করতে হবে, তা না হলে আগামী দিনে প্রতিবাদে সম্মুখীন হবে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট এন্ড অল এডিটর অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্যের সহ-সভাপতি ভগবতী সরদার সরকার।তবেই মহিলাদের নিরাপত্তা আছে কলকাতাতে।

কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বিদেশিনীরা অনেকেই একটু ত্রস্ত৷ তবে ওঁরা প্রায় সবাই বলেছেন, কলকাতাকে আলাদা করে বেছে নেওয়ার কোনও কারণ নেই৷ তবে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক শহরই এখন আর গভীর রাতে নিরাপদ নয়৷ বিশেষ করে উত্তর ভারতে, দিল্লি বা নয়ডায় বসবাস করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, সেই মহিলারা এক বাক্যে বললেন, কলকাতা সেই তুলনায় অনেক নিরাপদ৷ কিন্তু একটা রাতের কলকাতায় শ্লীলতাহানি ও নারী নিগ্রহের ঘটনা হয়ত কিছুদিন পরে লোকে ভুলে যাবে৷ আক্রান্ত মেয়েটিই যেখানে শহর ছেড়ে, দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে, সেখানে সংবাদমাধ্যমও খুব বেশি দিন হয়ত আগ্রহী থাকবে না এই খবর নিয়ে।

এরকম সত্য সংবাদ পরিবেশনের ফলে সাংবাদিকের প্রাণ হারাতে হয়েছে। তবে বাংলায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরেও মানুষের মানবিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি বলে শোনা যাচ্ছে। বাংলার রাজনীতিতে একের পর এক খুনের রাজধানী অন্যায় অত্যাচার অবিচার ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানীর কথা সংবাদ শিরোনামে প্রকাশ পায়।এর পিছনের রহস্য ময় রাজনৈতিক চরিত্র চরিতার্থ তার কাজ করে চলেছে একশ্রেণীর নেতারা। বাংলার ইতিহাসে মা মাটি সরকারের আগের ঘটনা ও বহু প্রমাণিত রয়েছে।তাপসী মারিকের কথা ও আমাদেরকে আজও স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়।

দেশের তুলনায় বাংলার নারীরা আজও নিরাপদে
প্রতিকি ছবি

এর থেকে আরও বেশি নোংরামি চলছে দেশের অন্যান্য রাজ্যে যেমন উত্তর প্রদেশ, গুজরাট বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলোতে। যত দোষ নন্দ ঘোষ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপরে চাপিয়ে দেওয়া তে ব্যস্ত একশ্রেণীর নোংরা রাজনীতি নেতারা।রাজনীতির কারণে ধর্ষণের মতো জঘন্য তম ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করল উত্তর প্রদেশের পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দলের একাংশ।আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে সহ রাজ্যের মহিলা কমিশনের ন্যায় প্রতিষ্ঠানগুলি সংবিধানের নির্দেশে গঠিত হইয়াছে স্বাধীন ভাবে কাজ করিবার জন্য।

সরকারের উপর, বিশেষত পুলিশ ও প্রশাসনের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখিবার জন্য, নাগরিকের মর্যাদা এবং অধিকার সুরক্ষিত রাখিবার জন্য সর্বদা সক্রিয় ও তৎপর থাকিবে এই প্রতিষ্ঠানগুলি, ইহাই প্রত্যাশিত। ভারতের সমাজে ব্রহ্মণ্যতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র অতি প্রবল, অর্থনীতিতে প্রবল সামন্ততন্ত্র। এই শক্তিগুলিই পরিচালনা করে রাষ্ট্রশক্তিকে। ফলে সরকার মানুষের মর্যাদারক্ষায় অতি-উৎসাহী, পুলিশ ও প্রশাসন দরিদ্র ও প্রান্তবাসীর প্রতি সহানুভূতিতে আর্দ্র, এমন দাবি করা কঠিন। এই কারণেই গণতান্ত্রিক ভারতে সরকার ও সমাজের কোপ হইতে সংখ্যালঘু, মহিলা, দলিত-আদিবাসীর জীবন ও মর্যাদা বাঁচাইতে বিবিধ কমিশন গঠন করিতে হইয়াছে।

রাজ্যগুলি স্বভাবতই এমন নজরদারিতে খুশি নহে, নেতা-মন্ত্রীরা নানা উপায়ে বিভিন্ন কমিশনকে কুক্ষিগত করিতে চাহিয়াছেন। তাঁহাদের সফলতা নির্ভর করিয়াছে কমিশনের সদস্যদের উপর। সকল চাপ পরাহত করিয়া কমিশনের দায়িত্ব পালন করিয়াছেন, এমন কমিশন-সদস্যের দৃষ্টান্ত কম নাই। তবে এ কাম্য কাদের? বাংলার নারীরা আজ নিরাপদ কেন? এর জবাব দেওয়ার মতন আর কেউ নেই!আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মা জাতির নারী।তারপরেও বাংলায় নারীরা আজও নিরাপদে আছে। শ্লীলতাহানীর ইতিহাস আজও বেড়ে চলেছে স্বয়ং দেশের অন্যান্য রাজ্যের বুকে।

আর সেই জন্য,নারী অধিকার মানবাধিকার থেকে আলাদা কোনো বিষয় নয়। মানবাধিকারের প্রতিটি বিষয়েই নারী অধিকার ও নিরাপত্তাকে জোর দেওয়া হয়। সেই সাথে নারীদের জন্য আছে রয়েছে কিছু অধিকার যা একান্তভাবে নারীকে তার নিজস্ব মর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে শেখায়। নারী অধিকার এমন একটি বিষয় যা সব বয়সের নারীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

কিছু বিশেষায়িত অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাতে। বিশেষায়িত অধিকারগুলো আইন, কিছু আঞ্চলিক সংস্কৃতি, শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জাতি, বর্ণ ও রাষ্ট্রভেদে ভিন্ন হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে এ অধিকারগুলো সামাজিক কর্মকান্ড, মূল্যবোধ ও রীতি দ্বারা সিদ্ধ হতে পারে। তবে, যেভাবেই আমরা দেখে থাকি না কেন, নারীর এই অধিকারগুলো তাকে তার নিজ সত্ত্বায় প্রস্ফুটিত করে তোলে, আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তা-ও রেহাই নেই আজকের যুগের নারীদের।সে কথা লিখলে আজ রামায়ণ ও মহাভারত হয়ে যেতে পারে। স্মরণীয় কিছু কথা আজ আমার কলমে আপনাদেরকে তুলে ধরছি।

বিরক্ত করার মধ্যে দিয়ে যদি কোন অনৈতিক প্রস্তাব, প্রেম ভালোবাসার প্রস্তাব, লোভ লালসার ইঙ্গিত, ভয় দেখিয়ে বা জিম্বি করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা, অবৈধ কাজে প্রলুব্ধ করা। শ্লীলতাহানি যে কেবল টিন এজারের মধ্যেই ঘটে তা নয়। যে কোন মেয়ে বা নারী- যে বয়সের হোক না কেন, অন্য কোন পুরুষ কর্তৃক আপত্তিকর আচরণের শিকার হলেই তা শ্লীলতাহানি । বিবাহ-পূর্ব ভালোবাসা অশালীন কথাবার্তা বলা, প্রেমপত্র, মোবাইল ফোনে শ্রুতিকটু আলাপ, জনতার ভিড়ে পরপুরুষ কর্তৃক ইচ্ছাকৃত ধাক্কা ধাক্কি, ষ্পর্শ করা, চোখের ভাষায় অশুভ ইঙ্গিত করা, কথনে, ইঙ্গিতে ইন্দ্রীয় অনুভুতি উপলব্ধি করবার দূরভিসন্ধিকে শ্লীলতাহানি বলা হয়।

ইভ টিজিংয়ের মূল কারণ, একটি শক্তির খেলা, যেখানে পুরুষেরা শক্তিশালী আর নারীরা দুর্বল৷ তবে নারীদের এই দুর্বল থাকা একটি সামাজিক প্রচেষ্টার ফল৷ ধরুন, একটি পরিবার সে পরিবারে একটা মেয়ে টিজিংয়ের শিকার হয়৷ মেয়েটি এই বিষয়টি বাড়িতে উত্থাপন করে৷ বাড়ি থেকে প্রথম প্রশ্ন করা হয়, তুই কী করিস? নিশ্চয়ই তুই কিছু করেছিস, অন্য কাউকে করল না, তোকেই কেন করল? এভাবে ঘটনা সেখানেই মিটে যায়৷এর ফলে বাংলা তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে একটার পর একটা শ্রীলতাহানি মতন ঘটনা ঘটে চলেছে।

পুরুষশাসিত সমাজে শ্লীলতাহানি কেন এত বেড়ে চলেছে? বিকৃতি পুরুষের মূল চরিত্র এবং তাদের উত্থাপন কিছু শব্দ কারণে। চরিত্রহীন মনুষত্ব কিছু ব্যক্তি যারা কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে নিজের রূপরেখা, মুখোশের আড়ালে রেখেছে সেইসব অত্যন্ত নিম্নমানের পুরুষগুলো শ্লীলতাহানি ঘটাচ্ছে। তবেই আজকের সমাজে আপনার অফিসে একজন নারীকে হেয় করে কিছু বললেন – সেটা ইভ টিজিং৷ পুরুষ শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীকে তুচ্ছজ্ঞান করলেন বা কোনো দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখলেন – সেটাও ইভ টিজিং৷

দেশের তুলনায় বাংলার নারীরা আজও নিরাপদে
প্রতিকি ছবি

বাসে মহিলা সিট খালি নেই বলে একজন নারীকে কন্ডাক্টর বাসেই উঠতে দিলেন না – সেটাও ইভ টিজিং৷ এমনকি পরিবারে বাবা ঠাট্টারছলে মাকে বললেন, ‘‘মেয়েলোকের বুদ্ধি কম” – এটাও ইভটিজিং৷ প্রতিদিনের এ রকম ছোট ছোট অসংখ্য ঘটনা একটি সামাজিক ধারণাতে এনে সমাজকে দাঁড় করায়, তা হচ্ছে — একজন মানুষ নারী বলেই তার শক্তি কম, অপরদিকে একজন শুধু পুরুষ বলেই তার শক্তি বেশি৷ আর সেই শক্তিবলে পুরুষ চাইলেই নারীকে হেয় করতে পারে, তাকে তুচ্ছ করতে পারে, তাকে নিয়ে উপহাস করতে পারে এবং তাকে অবহেলাও করতে পারে – এরই কেতাবি নাম, ‘ইভ টিজিং’৷

শ্রীলতাহানি সংবাদ শিরোনামে রাজ্যের বড় শহর কলকাতার নাম বারবার উঠে আসে, কিন্তু কেন? রাতের কলকাতায় এভাবে মত্ত যুবকদের চড়াও হওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। রাতের কলকাতা আদৌ কতটা নিরাপদ তা নিয়েও অনেকে পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন। তবে পুলিশ সজাগ বলে কলকাতায় অনেক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পায় অনেকেই। অন্যদিকে বিহারের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের অনেকের হয়তো মনে পড়ে যাবে।এক তরুণীর প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি ও পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া, এবং সে ঘটনাকে ক্যামেরাবন্দি করার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করল জেহানাবাদ পুলিশ।

সংবাদসংস্থা এএনআই এ খবর জানিয়েছে।  সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ওই ভিডিওটি। ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরেই ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমরা আজ কোন দেশে বাস করছি, ভারতবর্ষের সুস্থ সংস্কৃতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশ আজ চরিত্রহীন অবস্থায় ভুগছে। আর এর হাত থেকে রেহাই পড়েনি পশ্চিমবঙ্গ। গত বছরের একটি ঘটনাকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।থান্ডারপাড়ার বাসিন্দা বছর তেইশের ওই গৃহবধূর স্বামী পেশায় মাছ বিক্রেতা। ব্যবসার কাজে তিনি অনেক ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যানl ফলে রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন। রবিবার রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি।

ওই গৃহবধূও যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তখন হঠাত্ই অনুভব করেন, কেউ তাঁর হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করছে। গৃহবধূর কথায়, ‘চোখ খুলে আমার তো জ্ঞান হারানোর অবস্থা। ভূত এসে এভাবে টেনে তুলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রথমে ভয়ে কাবু হয়ে যাই। তারপর সন্দেহ হয়। যদিও আবছা আলো আর মুখে কালিঝুলি মাখা থাকায় প্রথমে চিনতে পারিনি। ওকে ছিটকে ফেলে দেওয়ার পর আমার চিৎকারে স্বামীর ঘুম ভেঙে যায়। দু’জনে মিলে ওকে ধরে ফেলি। তারপর ভূতটার মুখে জল ঢেলে দেখতে পাই ও ভূত নয়, আমাদের বাড়ির পাশের ছেলে সুরজ শেখ।’

আরে ভুতের হাত থেকে রেহাই পেতে,আজকের সমাজের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এই বহু সংগঠন। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিও আজ নারীরা এগিয়ে চলেছে পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রেখে। শিক্ষা, মেধা মননে নিজেকে নিয়ে গিয়েছে বহুদূর। আজ দেশে নারী উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে চলেছে একজন আরেকজনকে টপকে। নিজেরাই আজ তারা নিজের প্রতিযোগী। ঘর সামলে তাই বাইরে বেরোতে হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে তাদের নিজের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নারীকে ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে।

যেমন নগরে নারীর একা চলাচলে নিরাপত্তার অভাব, তেমনি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নারীরা নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাই ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরও চাকুরীক্ষেত্রে নিজেকে উপস্থাপন করার আগেই এখনো গুটিয়ে যায় অনেকেই শুধুমাত্র নিরাপত্তার কথা ভেবে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগেই নারী নিরাপদ নয়।

অনিরাপদ বলতে শুধুমাত্র যৌন হয়রানিকেই আমরা অভিহিত করতে পারি না, বরং যৌন হয়রানিমূলক ইঙ্গিত, ইভ টিজিং, অশালীন মন্তব্য এসব কিছুই নারীর জন্য অনিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এরকম নানা বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার ভয়ে অনেকেই নিজেকে কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে রাখেন আর কেউ কেউ এসবের শিকার হয়েও চক্ষুলজ্জা, সমাজের অপ্রত্যাশিত দৃষ্টিভঙ্গি অথবা আয়ের উৎস হারানোর আশংকায় চুপ করে যায়।

লেখক:- মৃত্যুঞ্জয় সরদার

 

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। West Bengal News 24-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আরও পড়ুন ::

Back to top button