আন্তর্জাতিক

হোয়াইট হাউসই কোভিড ‘সুপারস্প্রেডার’ : ডা. ফাউসি

হোয়াইট হাউসই কোভিড ‘সুপারস্প্রেডার’ : ডা. ফাউসি

গত মাসে হোয়াইট হাউসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের পরই হোয়াইট হাউসের একের পর এক কর্মকর্তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হন।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের ওই অনুষ্ঠানের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এবং দেশটির জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থার পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে ওই আয়োজনের সম্পর্ক রয়েছে। মূলত এই আয়োজন থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা ফাউসি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত বিচারকের নাম প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানই মূলত একটি ‘সুপারস্প্রেডার’। গত ২৬ সেপ্টেম্বরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রায় ডজনখানেক মানুষের দেহে এর মধ্যেই করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।

গত এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনদিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে তার অবস্থা অনেকটাই ভোলো।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন যে, তিনি এখন ভালো আছেন। ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি এখন আর করোনার ওষুধ খাচ্ছেন না। ট্রাম্প বলেন, আমি এখন ওষুধমুক্ত। তিনি বলেন, আমি এখন কোনো ওষুধ খাচ্ছি না। আপনারা জানেন, হয়তো এটা আট ঘণ্টা আগে। অর্থাৎ এর মধ্যে তিনি আর ওষুধ খাননি।

ট্রাম্পের চিকিৎসকরা এর আগে জানিয়েছেন যে, করোনার চিকিৎসায় তাকে এন্টিবডির ককটেল প্রয়োগ করা হয়েছিল। এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, এর মধ্যেই তার দেহে আবারও করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাকে আবারও টেস্ট করা হয়েছে।

তার মতে, তিনি হয়তো করোনামুক্ত হওয়ার কাছাকাছিই আছেন। তবে এর পরে আবার কবে তাকে টেস্ট করা হবে তা তিনি জানেন না। এর সঙ্গে ট্রাম্প যুক্ত করেন,এটা হয়তো আগামীকাল। তারা প্রায় প্রতিদিনই আমাকে টেস্ট করছে।

আরও পড়ুন : ইউরোপে দৈনিক সংক্রমণ লাখ ছাড়িয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বহীনতা এবং করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অদক্ষতা নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। এমনকি খোদ প্রেসিডেন্টকে মাস্ক পরিধান এবং লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নিতেও দেখা গেছে।

অথচ এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ধারে-কাছেও নেই কোনো দেশ। এর মধ্যেই দেশটিতে ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

গত শুক্রবার সিবিসি নিউজের একটি অনুষ্ঠানে ডা. ফাউসিকে প্রশ্ন করা হয় যে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসেবে মাস্ক পরিধান এবং সামাজিক দূরত্বের প্রতি হোয়াইট হাউসের উদাসীনতা এবং এসবের পরিবর্তে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে তার মতামত কি?

তিনি এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন তথ্য থেকে এটা পরিষ্কার যে হোয়াইট হাউসে ‘সুপারস্প্রেডার’ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে এমন একটি পরিস্থিতি দেখা গেছে যেখানে লোকজন কোনো সামাজিক দূরত্ব না মেনে বরং খুব কাছাকাছি ছিল এবং কেউই মাস্ক পরে অনুষ্ঠানে আসেনি।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর অ্যামি কোনি ব্যারেটেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনয়ন দেওয়ার অনুষ্ঠানকেই স্থানীয়ভাবে করোনা সংক্রমণের মূল উৎস বলে মনে করা হচ্ছে।

ওই অনুষ্ঠানের পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, দুই সিনেটর, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি, হোয়াইট হাউসের সাবেক কাউন্সেলর কেলিয়ানে কনওয়েসহ কমপক্ষে ১১ কর্মকর্তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।

ফাউসি বলেন, গত ছয় মাস ধরে বিশেষজ্ঞরা মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এখনও বড় ধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। অথচ হোয়াইট হাউসই তা লঙ্ঘন করে জনসমাগমের আয়োজন করেছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button