ঝাড়গ্রাম

সিদ্ধচালের ভোগে তুষ্ট লালগড় রাজ পরিবারের সিংহবাহিনী

সিদ্ধচালের ভোগে তুষ্ট লালগড় রাজ পরিবারের সিংহবাহিনী

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: যুগ বদলেছে, অস্ত গিয়েছে রাজ-মহিমা। রাজবাড়ি জীর্ণ। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নেই, নেই জৌলুসও। তবু পারিবারিক ঐতিহ্য ও স্থানীয় মানুষের আবেগকে মর্যাদা দিতে প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছেন লালগড়ের সাহসরায় রাজপরিবারের উত্তরসূরিরা।

পুজোর বয়স চারশো পেরিয়েছে। বহু বছর আগে লালগড়ের অনতি দূরে শাঁখাখুল্যায় সাহসরায় বংশের রাজত্ব ছিল। পরে রাজা স্বরূপনারায়ণ সাহসরায় লালগড়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেন। আর কাছেই তৈরি করেন এক দুর্গামন্দির। এখনও জীর্ণ রাজবাড়ির কাছের সেই দুর্গামন্দিরেই হয় দুর্গাপুজো।

মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালে খোদাই রয়েছে চুন-সুরকির দুর্গা। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন এই মূর্তিকেই পুজো করা হয়। দুর্গার পাশে লক্ষ্মী ও সরস্বতী থাকলেও, কার্তিক-গণেশ নেই। স্থানীয় লোক-সংস্কৃতির গবেষক পঙ্কজ মণ্ডলের মতে, সিংহবাহিনীর দু’পাশের জয়া-বিজয়াই পরবর্তীকালে লক্ষ্মী ও সরস্বতীতে পরিণত হয়েছেন।

সিদ্ধচালের ভোগে তুষ্ট লালগড় রাজ পরিবারের সিংহবাহিনী

সাহসরায় বংশের ‘শেষ রাজা’ ছিলেন পৃথ্বীশনারায়ণ। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র দর্পনারায়ণ সাহসরায় বর্তমানে পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে প্রতি বছর পুজো করছেন। প্রতিবছরই চুনসুরকির প্রতিমায় নবকলেবর হয়। এবারো হচ্ছে। পুজো হয় বিশুদ্ধ-সিদ্ধান্ত মতে।

দর্পনারায়ণের পুত্র দেবনারায়ণ জানালেন, এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট, দেবীকে নিবেদন করা হয় বিশেষ এক সিদ্ধচালের ভোগ। কয়েকশো বছর ধরে এই প্রথাই চলে আসছে। লোকসংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “রাঢ়বঙ্গের এই অঞ্চলের রাজপরিবারের দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।

আরও পড়ুন : মমতা সম্পর্কে ‘সম্মানহানিকর’ মন্তব্য? অভিযোগ ধনখড়ের বিরুদ্ধে

সম্ভবত দুর্গাকে ঘরের মেয়ে উমা কল্পনা করেই সিদ্ধ চালের ভোগ দেওয়ার প্রথা চালু হয়েছিল।” স্থানীয় গবেষক পঙ্কজকুমার মণ্ডলের আবার মত, “সিদ্ধচাল তৈরি করতে খরচ বেশি। আতপ চালে খরচ কম। রাজ-আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবেই দেবীকে হয়তো বেশি দামের সিদ্ধচালের ভোগ নিবেদনের প্রথা চালু হয়েছিল।”

সিদ্ধচালের ভোগে তুষ্ট লালগড় রাজ পরিবারের সিংহবাহিনী

দর্পনারায়ণ জানান, সপ্তমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে আখ, চালকুমড়ো, শশা ও জামির বলি দেওয়া হয়। মহাষ্টমীতে সিংহবাহিনী ও কুমারী পুজোও হয়। ওই দিনই পুরুষানুক্রমে রাজাদের ব্যবহৃত তলোয়ার, যা ‘ধূপখাঁড়া’ নামে পরিচিত, সেটিরও পুজো হয়। জনশ্রুতি, ওই ধূপখাঁড়া দিয়েই বর্গিহামলা প্রতিহত করে কয়েকশো বর্গির শিরোশ্ছেদ করেছিলেন সাহসরায় বংশের রাজারা।

আরও পড়ুন : দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনী এবং বিন্ধ্যবাসিনী আগমন দোলায়

দর্পনারায়ণের আক্ষেপ, ঐতিহ্যের দুর্গাপুজো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচ অনেক। সরকার থেকে বার্ষিক দেবত্র বাবদ যে টাকা দেওয়া হয়, তাতে পুজোর খরচ ওঠে না। অনেক কষ্ট করেই এখন পুজো চালাতে হয়।

দর্পনারায়ণ বলেন, “জানি না এ ভাবে কতদিন পারব।” ঐতিহ্য ও আবেগের কাছে হার মেনেছে সীমাবদ্ধতা। ভক্তিনিষ্ঠার নৈবেদ্য দিয়ে এবারও দেবীর আরাধনায় ব্রতী হয়েছে রাজ পরিবার।

আরও পড়ুন ::

Back to top button