আন্তর্জাতিক

এত কম সময়ে কেন অবনতি ঘটল চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের?

এত কম সময়ে কেন অবনতি ঘটল চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের?
প্রতীকী ছবি

অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। কেউ জানে না এই পরিস্থিতির কোন দিকে যাচ্ছে বা এর শেষ কোথায়। এই দুদেশের সম্পর্ক নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-চায়না রিলেশন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেমস লরেনসেন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-চীন সম্পর্ক এত জটিল ও এত দ্রুত পাক খেয়েছে যা ছয় মাস আগেও চিন্তা করা যায়নি।‘

শুধু গত কয়েক সপ্তাহে এই সম্পর্কের কতটা অবনতি হয়েছে তার দিকে তাকালে এই পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

পাল্টাপাল্টি পুলিশি অভিযান

চীনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে অস্ট্রেলীয় নাগরিক এবং চীনে ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যানেল সিজিটিএনের প্রখ্যাত সাংবাদিক চেং লেইকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সন্দেহে আটক করা হয়েছে।

এর কিছুদিন পর, সর্বশেষ যে দুজন সাংবাদিক চীনে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতেন কূটনীতিকদের পরামর্শে তারাও তড়িঘড়ি করে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে গেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দুটো দেশের সম্পর্কের ওপর।

এবিসি চ্যানেলের রিপোর্টার বিল বার্টলস যখন তড়িঘড়ি করে বেইজিং ছেড়ে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন চীনের সাতজন পুলিশ অফিসার মধ্যরাতে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।

শাংহাই-এ অস্ট্রেলিয়ান ফাইনান্সিয়াল রিভিউর সাংবাদিক মাইকেল স্মিথের বাড়িতেও পুলিশ একই ধরনের অভিযান চালায়।

তারা দুজনেই অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক মিশনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু “জাতীয় নিরাপত্তার” বিষয়ে চীনা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাদের চীন ছেড়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বাইডেনের পক্ষে তিন-চতুর্থাংশ ভারতীয় আমেরিকান

এরা দুজন অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যাওয়ার পরদিন চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, এই ঘটনার আগে জুন মাসে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বেশ কয়েকজন চীনা সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তাদের কাছ থেকে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন জব্দ করে নিয়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে সেদেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পুলিশের তদন্তের অংশ হিসেবে চীনা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

এর আগে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের একজন এমপি শওকত মুসেলমানের অফিসে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছিল। তিনি চীনের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। পরে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ওই তদন্তের আওতায় ছিলেন না।

সম্প্রতি বেইজিং অস্ট্রেলিয়ার দুজন শিক্ষকের চীনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর আগে অস্ট্রেলিয়া দুজন চীনা শিক্ষকের ভিসা প্রত্যাহার করে নেয়। এসব ঘটনা এতো দ্রুত গতিতে ঘটে যায় যে পর্যবেক্ষকরাও বুঝতে পারছেন যে পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে গড়াচ্ছে।

এই দুটো দেশের মধ্যে ক্ষোভ ও অবিশ্বাস গত কয়েক বছর ধরেই ভেতরে ভেতরে তৈরি হচ্ছিল।

এর মধ্যে মোড় ঘোরানো ঘটনাটি ঘটে যায় ২০১৭ সালে যখন অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এসিও সতর্ক করে দেয় যে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা বেড়ে গেছে।

চীনা ব্যবসায়ীরা অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় রাজনীতিকদের অর্থ দান করেছে এরকম একটি অভিযোগও তখন সামনে চলে আসে। সেবছরেই প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ ঠেকাতে কিছু আইন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এর জবাবে চীন অস্ট্রেলিয়ায় তাদের কূটনৈতিক সফর স্থগিত রাখে।

এর পর ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সরকারিভাবে তাদের ফাইভ জি নেটওয়ার্কে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অস্ট্রেলিয়াই প্রথম দেশ যারা এমন সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন হয়তো অস্ট্রেলিয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ হতে পারে, আবার এটাও ঠিক যে চীনের ক্রমবর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতির চোখ পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর।

আরও পড়ুন ::

Back to top button