আন্তর্জাতিক

মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভোট

মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভোট

করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেন্টার ফর রেসপনসিভ পলিটিকস-এর হিসাবে, এবারে হোয়াইট হাউজ, সিনেট ও কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার লড়াইয়ের ব্যয় গিয়ে পৌঁছাবে এক হাজার চারশ’ কোটি ডলার। মাত্র চার বছর আগে গড়ে ওঠা আগের রেকর্ড থেকে এবারের ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খরচের বড় অংশ যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যকার লড়াইয়ে খরচ হবে প্রায় ৬৬০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের নির্বাচনি প্রচার আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার মিলিয়েও এর চেয়ে কম অর্থ খরচ হয়।

এই ব্যয় বাড়ার নেপথ্যে ভূমিকা রয়েছে উভয় দলের দাতাদের। অনলাইন ও ছোট ছোট দাতার সংখ্যা বাড়তে থাকাই প্রচার শিবিরের তহবিল বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। একই সময়ে শত শত কিংবা লাখ লাখ কোটি ডলারের মালিকেরাও উদারভাবে প্রচার শিবিরগুলোতে অর্থ দিয়েছেন।

সংগ্রহ করা তহবিলের বড় অংশই যাচ্ছে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের ব্যয়ে। বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডভার্টাইজিং অ্যানালিটিকসের হিসাবে, এই বছর কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেই ব্যয় হচ্ছে ১৮০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে প্রাথমিক মনোনয়নসহ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে মোট ব্যয় হয়েছিল ২৪০ কোটি ডলার।

গত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের প্রচার শিবির সংগ্রহ করেছে ৯৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংগ্রহের পরিমাণ শত কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর উভয় দল মিলিয়ে হিসাব করলে সংগ্রহের পরিমাণ আরও অনেক বেশি ছাড়িয়ে যাবে।

তবে কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারের ব্যয় নতুন রেকর্ড গড়েছে এমন নয়।

সবচেয়ে ব্যয়বহুল দশটি সিনেট আসনের নির্বাচনের আটটিই ২০২০ সালে। এরমধ্যে রয়েছে নর্থ ক্যারোলিনা। অঙ্গরাজ্যটির দুই প্রার্থী সিনেট সদস্য রিপাবলিকান থম টিলিস এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কাল কানিংহাম ইতোমধ্যে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ করে ফেলেছেন।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের অনলাইন মিটিংয়ে বেজেই চলল ‘জয় শ্রী রাম’, ভাইরাল ভিডিও

এই বছর সিনেট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০ কোটি ডলারের বেশি খরচ হওয়া চার অঙ্গরাজ্যের একটি হলো নর্থ ক্যারোলিনা। বাকিগুলো হলো লোয়া, সাউথ ক্যারোলিনা ও অ্যারিজোনা। প্রার্থীর নিজস্ব অর্থ বাদ দিলে এই পরিমাণ ব্যয় এর আগে আর কখনোই সিনেট প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে হয়নি।

সাউথ ক্যারোলিনায় রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জাইমি হ্যারিসন প্রথম সিনেট প্রার্থী হিসেবে দশ কোটি ডলার সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছেন।

ভোটের ফলাফল যাই হোক, এই বছর তহবিল সংগ্রহের দিক থেকে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাটরা।

ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ও তাদের মিত্ররা এই বছর ৫৫০ কোটি ডলার ব্যয় করে ফেলেছে। এর তুলনায় রিপাবলিকানদের ব্যয় ৩৮০ কোটি ডলার। নির্দলীয় সেন্টার ফর রেসপনসিভ পলিটিকসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এটাই এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের সবচেয়ে বড় সুবিধা।

ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন ছোট ছোট দাতারা। এই বছরে তার নির্বাচনি প্রচারের ২২ শতাংশই তাদের কাছ থেকে এসেছে। ২০১৬ সালে এসব দাতার অনুদানের পরিমাণ ছিল দুই কোটি ডলারেরও কম। যা ওই বছরের মোট তহবিলের ১৫ শতাংশের কম।

তবে বড় দাতাদের ভূমিকা এখনও প্রভাবশালী থেকে গেছে। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী শেলডোন ও তার স্ত্রী মিরিয়াম আদেলসন রিপাবলিকান প্রার্থীদের জন্য প্রায় ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের সবচেয়ে বড় দাতা ব্লুমবার্গ ডেমোক্র্যাট কমিটিকে দিয়েছেন দশ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

অন্য বড় দাতাদের মধ্যে রয়েছেন সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা। চিকিৎসক ও এক প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীর সাবেক স্ত্রী কারলা জারভেটসন ২০১৯ সাল থেকে দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার অনুদান দিয়ে চলেছেন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের প্রচারে। ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন মস্কোভিজও দুই কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি খরচ করেছেন ট্রাম্পবিরোধী বিজ্ঞাপনে।

আরও পড়ুন: ফ্রান্সে গির্জায় ছুরিকাঘাতে অন্তত দুজন নিহত

প্রচারে ব্যয় করা শীর্ষ ইন্ডাস্ট্রি এখনও ওয়াল স্ট্রিট। সিকিউরিটি অ্যান্ড বিনিয়োগ সাম্রাজ্য থেকে তাদের মোট ব্যয় ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। এর বেশিরভাগ অংশই গেছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে, ১৬ কোটি ১৭ লাখের বেশি। আর রিপাবলিকান শিবিরে গেছে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।

কথিত ‘ডার্ক মানি’র প্রবাহও এবারের মার্কিন রাজনৈতিক প্রচারে ভূমিকা রাখা অব্যাহত রেখেছে। অলাভজনক বিভিন্ন সংস্থা কিংবা নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া দাতাদের অর্থই ডার্ক মানি হিসেবে পরিচিত।

সেন্টার ফর রেসপনসিভ পলিটিকস-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় কমিটিকে অর্থ দেওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ দাতাই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি। এই সুযোগ উভয় দলই নিয়েছে।

 

আরও পড়ুন ::

Back to top button