খেলা

দরিদ্র পরিবার থেকে যেভাবে ‘ম্যারাডোনা’ হয়ে ওঠেন

দরিদ্র পরিবার থেকে যেভাবে ‘ম্যারাডোনা’ হয়ে ওঠেন

দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার জন্ম ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আয়ার্সের এক দরিদ্র এলাকায়। খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন ম্যারাডোনা। জীবিকার সন্ধানে তার মা-বাবা কোরিয়েন্তেস রাজ্য থেকে পাড়ি জমিয়ে আসেন লেনাসে। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন বুয়েন্স আয়ার্সের এক উপশহর ভিলা ফিওরিটোয়।

মা-বাবার প্রথম চার কন্যার পর জন্ম হয় ম্যারাডোনার। তারপর আরও দুটি ভাই রয়েছে ম্যারাডোনার। একজনের নাম হুগো, অন্যজনের নাম রাউল। দুজনই ছিলেন পেশাদার ফুটবলার।

আট বছর বয়সেই ম্যারাডোনার ফুটবল প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। বাড়ির পাশের ক্লাব এস্ট্রেলা রোজার হয়ে খেলতে গিয়ে নজরে পড়েন ট্যালেন্ট হান্টিং স্কাউটদের। বুয়েনস আয়ার্সের দল আর্জেন্টিনো জুনিয়রের হয়ে ১২ বছর বয়সে প্রথম বিভাগের একটি ম্যাচের প্রথমার্ধের পর মাঠে নামেন ম্যারাডোনা। ওই অর্ধেকটা সময়ে যে ঝিলিক তিনি দেখিয়েছিলেন, সেটাই তাকে বিশ্বসেরার আসনে বসার প্রথম পথ দেখিয়ে দিয়েছিল।

ধীরে ধীরে ফুটবল সুপারস্টার হয়ে সেই দারিদ্রের জাল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ম্যারাডোনা, যাকে অনেকেই মনে করেন খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিলের পেলের চাইতেও শ্রেষ্ঠ।

আরও পড়ুন : বলিউড তারকাদের চোখে ম্যারাডোনা

এক জরিপে পেলেকে পেছনে ফেলে ‘বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার’ হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। পরে ফিফা ভোটিংয়ের নিয়ম পাল্টায় যাতে এই দুই তারকাকেই সম্মানিত করা যায়।

ম্যারাডোনা ৪৯১টি ম্যাচে ২৫৯টি গোল করেছিলেন। অল্প বয়েসে লোস কাবালিও যুব দলে খেলার সময় তার নৈপুণ্যে ১৩৬ টি ম্যাচে সেই দল অপরাজিত ছিল।

মাত্র ১৬ বছর ১২০ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় তার। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১টি ম্যাচে খেলে ৩৪টি গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা।

আর্জেন্টিনা দলের অন্য খেলোয়াড়দের তুলনায় তিনি ছিলেন খর্বকায়, মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা। তার শরীরের গঠনও একজন এ্যাথলেটের মতো ছিল না। কিন্তু তার বল কন্ট্রোল, ড্রিবলিং, দক্ষতা এত মসৃণ ছিল, পাস দেবার ক্ষমতা আর দ্রুততা এত বিস্ময়কর ছিল যে তার সেসব অসম্পূর্ণতা তাতে চাপা পড়ে যেত।

ম্যারাডোনার ফুটবলজীবন ঘটনাবহুল। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিলেন গোটা ফুটবলবিশ্বকে। আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেবার তার নেতৃত্বে এবং একক নৈপুণ্যে। ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপেও তিনি আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু শিরোপা এনে দিতে পারেননি। ১৯৯৭ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান ম্যারাডোনা। শুরু করেন কোচিং।

২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তিনি। মৃত্যুর সময়ও ছিলেন আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ক্লাব হিমনাসিয়া দি লা প্লাটার কোচ। অনেকের মতে, তিনিই বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। তবে বর্ণিল খেলোয়াড়ি জীবনে বিতর্কও ছায়াসঙ্গী হয়েছে তার।

১৯৯৪ আমেরিকা বিশ্বকাপে ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। মাদকাসক্তির কারণে দীর্ঘ সময় ভুগতে হয়েছিল তাকে। ওজনও বেড়ে গিয়েছিল। মদ্যপানে আসক্তির জন্যও সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি।

ম্যারাডোনা নামটা ঠোঁটে এলেই ফুটবলপ্রেমীদের মনে পড়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার দুটি দু’রকম গোলের স্মৃতি। প্রথমটি ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে পরিচিত এবং বিতর্কিত। রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিল, ম্যারাডোনা হাত দিয়ে বল জালে জড়িয়েছিলেন। সেই গোলকেই ‘হ্যান্ড অব গড’ বলেছিলেন ম্যারাডোনা। বলেছিলেন, ‘ওটা আমার নয়, ঈশ্বরের হাত ছিল।’

তবে সেই ম্যাচেই তার দ্বিতীয় গোল ছিল চোখজুড়ানো। ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। একের পর এক ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন তিনি, যা মুগ্ধতায় ভরিয়েছিল ফুটবলরসিকদের।

বুধবার ৬০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান ৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button