ওপার বাংলা

বেকার নূপুর থাকেন কোটি টাকার ফ্ল্যাটে, মাসে জিম খরচই ৩০ হাজার

বেকার নূপুর থাকেন কোটি টাকার ফ্ল্যাটে, মাসে জিম খরচই ৩০ হাজার

দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। অথচ লাখ টাকা ভাড়ায় নিকেতনের একটি বাসায় থাকেন। প্রতি মাসে জিমের বিল দেন ৩০ হাজার টাকা! এছাড়া সন্তানকে পড়ান ভালো স্কুলে। পারভীন আক্তার নূপুর নামের এ তরুণীর এমন জীবনযাপন যে কাউকেই চমকে দেবে। বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও উচ্চবিলাসি জীবন তার। অথচ এভাবে চলাফেরা করতে প্রতি মাসে প্রয়োজন কয়েক লাখ টাকা।

নূপুরের এত টাকার উৎস ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। যাদের কেউ শিল্পপতি, কেউ বা বড় ব্যবসায়ী। নূপুর তার বোন শেফালী বেগমকে নিয়ে ‘প্রেমের ফাঁদ পেতে’ এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তি এ বিষয়ে অভিযোগ জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নূপুর ও তার বড় বোনসহ প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে রাজধানীর হাতিরঝিল থানা পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া চারজন এসব বিষয়ে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা গেছে, অন্তত ২৫ জনকে এভাবে ফাঁদে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন তারা। তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি আদায় করা হয়েছে দুই থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। নূপুর যাদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন, তাদের বেশিরভাগই সমাজে প্রভাবশালী এবং সম্মানিত ব্যক্তি। সেই কারণে মান-সম্মানের ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারতেন না। ফলে নূপুরের চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হতেন তারা।

চক্রের ‘মূল হোতা’ পারভীন আক্তার নূপুর টাকার বিনিময়ে এসব ব্যক্তির নাম ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন একটি ট্রাভেল এজেন্সির এক কর্মকর্তার কাছ থেকে। সেসব নম্বরের বিপরীতে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন বেসরকারি মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিকের কাছ থেকে।

এরপর নূপুর ওই বয়স্ক ব্যক্তিদের মুঠোফোনে কল করতেন। কখনো সাংবাদিক, কখনো-বা সমাজকর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন। পরিচয়পর্ব শেষে সখিত্ব গড়ে তুলতেন। দেখা-সাক্ষাৎও করতেন বিভিন্ন মাধ্যমে। একপর্যায়ে নূপুর তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে আন্তরিক কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সংগ্রহে রাখতেন তিনি। এ ছাড়া ঘনিষ্ঠ ছবিও কাছে রাখতেন নূপুর।

গত ৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিল থানায় ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এ বিষয়ে মামলা করেন। মামলার তদন্তে নেমে গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, নিকেতন, রমনা ও বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চক্রের প্রধান পারভীন আক্তার নূপুর (২৮), তার বড় বোন শেফালী বেগম (৪০), মতিঝিলের পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী শামসুদ্দোহা খান ওরফে বাবু (৪০) এবং মুঠোফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিক (২৭)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতে যদি কোনো ঝামেলা হতো তাহলে ব্যবহার করা হতো মো. ইসা নামের এক ভুয়া আইনজীবীকে। তিনি তাদের কল করে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলা দায়েরের কথা বলে হুমকি দিতেন। তিনি এখনো পলাতক আছেন। ইসা বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট বিল ভাউচার তৈরি করার কথাও জানাতেন প্রতারিতদের। এ ছাড়া এসব ব্যক্তির কাছে দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পারভীনের বড় বোন শেফালী সেসব ব্যক্তিকে কল করে মামলার হুমকি দিতেন। এদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে নূপুর ও তার বোন এভাবে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতে টাকা-পয়সা আদায় করে আসছিলেন। কোনো ব্যক্তি টাকা দিতে রাজি হলে অধিকাংশ সময় নূপুরের হয়ে তা সংগ্রহ করতেন বাবু। প্রতিটি কাজের জন্য বাবুসহ চক্রের অন্য সদস্যদের ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হতো। বাকি টাকা দুই বোন ভাগ করে নিতেন।

এর আগে ছয়টি লিপস্টিক হারানোর ঘটনায় একবার গুলশান থানায় অভিযোগ করেছিলেন পারভীন আক্তার নূপুর। সেখানে বলা হয়েছিল, লিপস্টিকগুলোর মোট মূল্য ৯০ হাজার টাকা!

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারভীন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। মূলত তার কোনো পেশা নেই। কিন্তু তিনি কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। তার বড় বোন শেফালী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি চাঁদনী চক মার্কেটে স্কার্ফ, হিজাব ও বোরকা বিক্রি করেন। আর অবিবাহিত শামসুদ্দোহা মোহাম্মদপুরে শেফালীর ফ্ল্যাটেই থাকেন।

সুত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

আরও পড়ুন ::

Back to top button