মতামত

মুসলিমদের দলে ভেড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাটানিও অব্যাহত

মৃত্যুঞ্জয় সরদার

মুসলিমদের দলে ভেড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাটানিও অব্যাহত

বাংলার রাজনীতিতে স্বার্থই মনোভাবা সম্পন্ন মানুষরা ক্ষমতার জায়গায় থেকে নিজের স্বার্থ মুনাফা লুটছে।বাংলায় অপ্রিয় সত্য কথাটা বলাতে, আমার মতন সাংবাদিককে রাজনৈতিক নেতারা মাটির তলায় মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের কাছে আমার নামে মিথ্যা কথা বলে তাদেরকে ভুল বোঝে না চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা।এই সব নেতাদের লেজুড়বৃত্তি করছে একশ্রেণীর হলুদ সাংবাদিকতার সমভাবাপন্ন সাংবাদিকরা। সত্যনিষ্ঠা মনোভাব নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর আগে সত্যি কথা বলার জন্য কলম ধরেছি, জীবন চলে গেলেও সত্যি ছাড়া মিথ্যা টুকু আশ্রয় নেই নি, ভবিষ্যতে নেবনা।বাংলার রাজনীতিকে নিজের স্বার্থ ও আত্মীয়-স্বজন বাঁচাতে রাজ্যে যা যা করা দরকার সেটাই করছে সবাই সব রাজনৈতিক দলের নেতারা!তবে সব দলের নেতাদের, ধর্মকে সামনে রেখে রাজনৈতিক করার উদ্দেশ্য রয়েছে।বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট কে নিয়ে রাজনীতি করছে রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সংখ্যালঘুদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কিভাবে নিজেদের ভোট ব্যাংকের ব্যবহার করা যায় ,সেই নিয়ে রাজ্যে চর্চা শুরু বিভিন্ন দলের।বামফ্রন্টের সময় থেকে সংখ্যালঘু ভোটকে সামনে রেখে তারা ক্ষমতায় ছিল দীর্ঘ ৩৪ বছর।বর্তমান শাসকদল সংখ্যালঘু ভোট কে সামনে রেখে নির্বাচনে জয় জয়কার এই বাংলাতে!তবে ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের পরেই, বাংলায় সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট বিভাজন হতে শুরু করেছে দুই হাজার কুড়ি সালে এসে তার নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিজেপি সংখ্যালঘু বলে একটি সেল শুরু করেছে সংখ্যালঘু ভোট এর আশায়!বাংলার শাসক দল সংখ্যালঘুদের কাজে লাগিয়ে আজও বাংলায় ক্ষমতায় রয়েছে।তবে সংখ্যালঘুদেরকে ব্যবহার করছে একশ্রেণীর অসাধু রাজনৈতিক নেতারা ,তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উদাহরণ রয়েছে এই বাংলাতে। সেই কারণে বাংলায় রাজনীতির কোন দলে থাকবে তারা, সেই নিয়ে শুরু করেছে পরিকল্পনা।

আব্বাস সিদ্দিক এর মতন হুজুর সাহেব তা তাদের নিজেদের ভোট ব্যাংক নিজেরা সংগ্রহ করতে পারে, সেই নিয়ে রাজনৈতিক দল তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে।মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য তারা নিজস্ব রাজনৈতিক দল বাংলাতে শুরু করতে চায়।মুসলিমদের কথা বলার জন্য মুসলিম প্রতিনিধি বাংলাতে ২০২১ এ বিধানসভায় একাধিক জায়গায় দেখা যাবে তেমনি ইঙ্গিত স্পষ্ট! সেই নিয়ে বাংলায় একাধিক মুসলিম সংগঠন তাদের ভাবনাচিন্তা পরিকল্পনা করেই চলেছে।অন্যদিকে বাংলায় হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক গুছিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি দলের নেতাকর্মীরা।কিন্তু সর্বদাই হিন্দু ভোটব্যাংকে বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত হয়েছে এই বাংলাতে। হিন্দু সংগঠন গুলো ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য হিন্দু সংহতি নতুন একটি রাজনৈতিক দল বাংলাতে নিয়ে এসেছে।এই হচ্ছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির চর্চা বাংলাতে,ধর্মকে সামনে রেখে রাজনৈতিক করাটা এই বাংলার একটা ট্রেডিশান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে ২০১৯ লোকসভা ভোটের এর পর থেকে। তবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য বাংলায় আজও একাধিক সুরক্ষা দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কথা কে সামনে রেখে ভারতবর্ষে রাজনীতির ইতিহাস মুসলমানদের স্থান উল্লেখ করব।ভারত উপমহাদেশের রাজনীতিক বিবর্তনের ইতিহাসে ১৯৩৭-৪৭ সন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।১১ ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

আরও পড়ুন : গণতন্ত্রের চতুর্থতম স্তম্ভটির মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে

মুসলিম অধ্যুষিত এলাক নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষতি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ভারত। নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান দুই হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত হয়-পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে অবস্থিত এ দুটি অংশের মধ্যে ছির কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে যাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তনকে শোষণ- বঞ্চনার ইতিহাস।১২ পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণমূলক আচরণ। কেবল অর্থনৈতিক শোষণ নয়, বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপরও নিপীড়ন শুরু হয় এর প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় যখন পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করে কেবল মাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা সাথে সাথে বাঙালীরা এর প্রতিবাদ করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্যে এই আন্দোলন তীব্রতম রূপধারণ করে।বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। মাতৃভাষায় যেভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় অন্যভাষায় সেভাবে প্রকাশ করা যায় না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মায়ের মুখের ভাষার রক্ষার দাবিতে প্রাণ দিয়েছে সালাম, শফিক, জব্বার, বরকত সহ নাম না জানা অনেকে। তাদের, রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা আজ ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জন করেছে। তবে ভারতবর্ষের ইতিহাসে সংখ্যালঘু মুসলমানদের স্থান কম নয়, ইতিহাস হয়তো তেমনি ইঙ্গিত দিচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলমান, তাই রাজ্য রাজনীতিতে মুসলমানদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

মুসলমানদের দলে ভেড়ানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাটানিও অব্যাহত। ভোটের রাজনীতির অঙ্ক সম্পর্কে যাঁরা মোটামুটি ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন যে মুসলমানদের সমর্থন পেলে পশ্চিমবঙ্গে ভোটযুদ্ধে জেতা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। বামফ্রন্টের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের একটা বড় অংশের সমর্থন তাদের দিকে ছিল। কিন্তু ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে সংখ্যালঘুরা বামফ্রন্টের দিক থেকে যেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তূণমূল কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে পড়ল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পরপর জয় পেতে শুরু করলেন।সেই লক্ষ্যে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করার বিষয়ে আশাবাদী এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। শনিবার হায়দরাবাদে বঙ্গের এআইএমআইএম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর এই দাবিই করলেন হায়দরাবাদের সাংসদ।কয়েকদিন আগেই এআইএমআইএমের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সমস্ত যুব সভাপতিরা তৃণমূল কংগ্রেস যোগদান করেছেন। বাংলায় বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্যই তাঁরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও দাবি করেছিলেন। এরপরই রাজ্যের সংগঠন ও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য শনিবার পশ্চিমবঙ্গের এআইএমআইএম নেতারা হায়দরাবাদে একটি বৈঠক করেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসির সঙ্গে। সেখানে আলোচনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও।

ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি (Asaduddin Owaisi) বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের এআইএমআইএম নেতৃত্বের সঙ্গে আজ খুব ভাল একটি বৈঠক হয়েছে। রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ও আগামী বিধানসভা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা। যারা এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলায় ভাল ফলে বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ২০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৫টিতে জিতে ছিল এআইএমআইএম। এই ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে বাংলায় সংগঠন বাড়াতে জোর দিয়েছিল তারা। মূলত তেলেঙ্গানার দল হলেও ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ৩৮টি আসনে লড়াই করেছিল। তবে একটা আসনেও জিততে পারেনি। ২০১৯ সালে ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনেও ১৬টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একই ফল হয়েছিল। তবে ওই বছরেই মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে ৪৪টিতে প্রার্থী দিয়ে ২টিতে জেতে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল।এই অবস্থায় মুসলমানদের মন জয় করতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাদের নিয়ে দড়ি-টানাটানির প্রতিযোগিতায় উগ্র হিন্দুবাদী বিজেপি ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দলই যে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তাতে আশ্চর্য কী!সাধারণ হিসাবে, এতে যখন যে রাজনৈতিক দলই লাভবান হোক না কেন, সংখ্যালঘু মুসলমানদের লাভ হওয়া উচিত ছিল সর্বাধিক। শিক্ষায়, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে তাল রেখে মুসলমানদের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নতি হওয়ার কথা ছিল।

আরও পড়ুন : উন্নয়নে এগিয়ে বাংলা এরপরেও সুকৌশলে রাজ্য দখল করার চেষ্টা বিরোধীদের

কিন্তু ১০ বছরের ব্যবধানে বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচারের প্রতিবেদন ও অমর্ত্য সেনের প্রতীচী ট্রাস্টের প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। তাদের অবস্থার এতটুকু উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে।প্রতীচী প্রতিবেদনের চিত্রটা এ রকম: পশ্চিমবঙ্গে যেখানে গড়পড়তা প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য ১০ দশমিক ৬টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে, সেখানে মুসলমানপ্রধান তিন জেলা মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে এই হার যথাক্রমে মাত্র ৭ দশমিক ২, ৮ দশমিক ৫ ও ৬ দশমিক ২। ৬ থেকে ১৪ বছরের মুসলমান ছেলেমেয়েদের ১৫ শতাংশই স্কুলে যায় না। তাদের মধ্যে ৯ দশমিক ১ শতাংশ স্কুলে ভর্তিই হয়নি আর বাকিরা ভর্তি হলেও পরে ঝরে পড়েছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশ মনে করে, স্কুলে গিয়ে তাদের আখেরে কোনো লাভ হবে না।

বড়দের অবস্থাও শোচনীয়। গ্রামবাংলার মুসলমানদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়মিত বেতনের চাকরি করছেন। সরকারি ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১ শতাংশ। অন্তত ১৩ দশমিক ২ শতাংশ মুসলমানের ভোট দেওয়ার জন্য আবশ্যিক পরিচয়পত্র নেই। ১২ দশমিক ২ শতাংশ মুসলমান পরিবারের বাড়ি পয়ঃপ্রণালির সঙ্গে যুক্ত নয়, যদিও রাজ্যে গড়ে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িতে তা আছে। আর্থিক উন্নতির সঙ্গে তাল রেখে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার ক্ষেত্রেও মুসলমানরা পিছিয়ে। গোটা রাজ্যে যেখানে এই হার গড়ে ৩২ শতাংশ, সেই জায়গায় মুসলমানদের ক্ষেত্রে মাত্র ১৯ শতাংশ।

মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার ব্যাখ্যা কী? গণতন্ত্রে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো তো সমাজের বিভিন্ন অংশের সমর্থন আদায় করতে তাদের উন্নয়নে সচেষ্ট থাকবে, তাতে নাগরিকদেরই লাভ হবে। অমর্ত্য সেনসহ বহু গুণীজনই সংসদীয় গণতন্ত্রের এই ইতিবাচক দিকের প্রতি বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর কিছু সুফলও দেখা গিয়েছে। যেমন, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অরণ্যের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বনাঞ্চল অধিকার আইন (ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট) করেছে। এ ছাড়া শিক্ষা, খাদ্য, কাজ ও তথ্যের অধিকারও তৈরি হয়েছে। একাধিক রাজ্য মেয়েদের (বিশেষ করে গরিব পরিবারের মেয়েদের) স্কুলে আসতে উৎসাহ দিতে নানা আর্থিক প্রকল্প চালু করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও ছাত্রীদের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। তাহলে মুসলমানদের উন্নতির দিকটি বারবার অবহেলিত হচ্ছে কেন? বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর মতো অনেকেই লক্ষ করেছেন, এর পেছনে মুসলমান সম্প্রদায় সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর (দলমত-নির্বিশেষে) দীর্ঘদিনের লালিত কিছু ধারণা কাজ করছে। যেমন: এক. মুসলমান সমাজের মধ্যে কোনো স্তরভেদ বা বিভাজন নেই। তারা সবাই মোটামুটি একভাবে চিন্তা করে।

দুই. মুসলমান সমাজের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করেন মৌলভিরা। ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে মুসলমানরা তাঁদের মৌলভিদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। এই কথাটা যেমন অপ্রিয় সত্য, অন্যদিকে এই ধারণাগুলো যে ঠিক নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যায়, মুসলমান সমাজ কখনই একভাবে কোনো নির্দিষ্ট দিকে ভোট দেয়নি। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের রাজত্বকালে দক্ষিণবঙ্গে মুসলমানরা বেশি সংখ্যায় বামপন্থীদের ভোট দিলেও মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গের দুই মুসলমানপ্রধান জেলা মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসের পাশে থেকেছে। এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে দক্ষিণবঙ্গে মুসলমানরা বামপন্থীদের কাছ থেকে সরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সমর্থন করলেও ওই তিন জেলায় কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য থেকে সরে আসেনি। আবার উর্দুভাষী মুসলমান ও বাঙালি মুসলমানদের দুটি পৃথক সমাজ। বাংলাভাষী মুসলমানদের সিংহভাগই গ্রামবাসী, কৃষিজীবী বা নির্মাণশিল্পের শ্রমিক। অবাঙালি মুসলমানদের অধিকাংশই শহরবাসী, শিল্পাঞ্চলে কাজ করেন। এঁরা ভোটও দেন নিজের মতো করে।

কিন্তু এসব হিসাব অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক দলগুলো বৃহত্তর মুসলমান সমাজের উন্নতির জন্য তেমন কোনো কাজ না করে তাদের ‘মাথা’দের দলে টানার চেষ্টাই চালিয়ে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই মসজিদের ইমামদের মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা ও মুয়াজ্জিনদের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা বিশেষ সরকারি ভাতা চালু করেছেন। হাইকোর্ট এটাকে বৈষম্যমূলক কাজ বলে আপত্তি করলেও ঘুরিয়ে ওয়াক্ফ বোর্ডের হাত দিয়ে ভাতা দেওয়া চলছে। এ কাজের পেছনে সরকারের হিসাবটা স্পষ্ট, যেন ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিলেই গোটা মুসলমান সমাজের ভোট এসে যাবে। এ ছাড়া মমতা মুসলমানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে ফুরফুরা শরিফের পীর ত্বহা সিদ্দিকি বা কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বরকতির মতো কিছু ধর্মগুরুর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করা, তাঁদের সঙ্গে এক মঞ্চ ব্যবহার করে জনসভা করা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঈদের আগে তিনি নিজেও রোজা রাখার কথা বলছেন, ইফতার পার্টি দিচ্ছেন, মুসলমানদের জনসভায় গেলে কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকছেন এবং জনতার উদ্দেশে কিছু প্রচলিত আরবি শব্দও ছুড়ে দিচ্ছেন। এসব দেখে লেখক ও সাবেক আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলাম বিরক্ত হয়ে একাধিক বই লিখে প্রকাশ করেন। ওসব বইয়ে তিনি দাবি করেন, মমতা ক্রমাগত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুসলমানদের ভাঁওতা দিচ্ছেন। তা ছাড়া তিনি মুসলমানদের অনুকরণে যেসব কথা অর্থ না বুঝে বলছেন, তা হাস্যকর হয়ে উঠছে।সর্বদাই মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের জন্য বারবার হয়েছে এই বাংলাতে,বাংলার ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু মুসলিমদের কি ধরে রাখতে পারবে।এ প্রশ্নের উত্তর আজ যেন বিশবাঁও জলে থেকে তলিয়ে গিয়েছে। আব্বাস সিদ্দিকী সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মগুরু,সেই কারণে সংখ্যালঘুদের মন জয় করতে ইতিমধ্যে আব্বাস সিদ্দিকী বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রয়োগ করছে।

দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের মুখোশ খুলে দিতে চায় আব্বাস সিদ্দিকী, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে মুসলিম ভোট ।সেই কারনে মমতা এখন মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধিস্থানীয়দের। ইতিমধ্যে তিনি জমিয়াত উলেমা এ হিন্দের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর হাত ধরে সংখ্যালঘুদের একটি দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাত করেছেন। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর দলের দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় গ্রামাঞ্চলে কিছু প্রভাব থাকলেও এখনো একা লড়ে নির্বাচনে জয়ের মুখ দেখেছে।

২০১৩ সালে সিদ্দিকুল্লা বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের কড়া সমালোচনা করে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন। তারও আগে বাম জামানার শেষ পর্যায়ে তসলিমা নাসরিনকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমে দাঙ্গা শুরু করেন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন ইদ্রিস আলী, যিনি এখন বসিরহাট থেকে তূণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোটে জিতে লোকসভায় গিয়েছেন। মমতার দলের আরেক নেতা আহমেদ হাসান ইমরান রাজ্যসভার সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গোপনে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ করেন। অতীতে নিষিদ্ধ সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার (সিমি) এই নেতা চিট ফান্ড সংস্থা সারদা থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গোপনে বাংলাদেশে জামায়াতিদের হাতে তুলে দিয়েছেন কি না, তা দেখতে তদন্ত চলছে।

আসলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজ সম্পর্কে সত্যিকারের ধারণা গড়ে তোলার বদলে সহজে নিজেদের জন্য ভোট সংগ্রহকেই মূল উদ্দেশ্য করে তোলায় মুসলমান সমাজের কতিপয় নেতাকে তুষ্ট রাখার মধ্যেই রাজনৈতিক দল ও সরকার নিজেদের ইতিকর্তব্য শেষ করছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button