ঝাড়গ্রাম: বুধবার শুরু হচ্ছে জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের প্রধান উৎসব ‘মকর পরব’। পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে ঘরে-ঘরে টুসু পুজো দিয়ে পরবের সূচনা হয়। বুধবার রাতে হবে টুসু পুজো। টুসু পুজোর রাতে বাঁউড়ির দিনে হয় গুড়-নারকেলের পুর ভরা ‘ডুমু পিঠা’, দুধের ‘পুলি পিঠা’, হাঁস ও মুরগি মাংসের ‘মাঁস পিঠা’।
বৃহস্পতিবার পৌষ সংক্রান্তির সকালে হবে টুসু ভাসান। তারপরে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে জঙ্গলমহলবাসী মেতে উঠবেন উৎসবে। ঘরে ঘরে পিঠের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে এই সময়ে। শুক্রবার পয়লা মাঘ ‘আখ্যান যাত্রা’র দিনে কুড়মি কৃষি বর্ষের সূচনা হয়। ওই দিন গ্রামে গ্রামে গ্রামদেবতা গরামের পুজো হয়। সব মিলিয়ে এই সময়টা উৎসবের মেজাজে থাকে জঙ্গলমহল।
রবিবার ছিল পরবের আগে ঝাড়গ্রাম বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন। তাই টুসু মূর্তির পসরা নিয়ে বসেছিলেন কারিগরেরা। টুসু কেনার পাশাপাশি, নতুন কুলো, ঝুড়ি, মাটির হাঁড়ি-মালসা কেনার ধুম পড়েছিল বাজারে। বিনপুরের দহিজুড়ি অঞ্চলের কেন্দডাংরি গ্রামের ৩০টি পরিবার টুসু মূর্তি তৈরি করেন। ধানের তূষ মেশানো মাটি দিয়ে তৈরি টুসু মূর্তি রঙ করে সাজিয়ে তোলা হয় রঙিন কাগজ, রাংতা আর শোলার সাজে।
আরও পড়ুন : ঝাড়গ্রাম শহরে বাড়ি-বাড়ি দু’ভাগে জঞ্জাল সংগ্রহ, উদ্যোগ পুরসভার
২০ টাকা, ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড়শো-দু’শো টাকা দামে বিভিন্ন মাপের টুসু মূর্তি বিক্রি হয়েছে। ঝাড়গ্রাম আদিবাসী বাজারে টুসু মূর্তি নিয়ে বসেছিলেন স্বপন দাস। জানালেন, ৭০টি মূর্তি এনেছিলেন এদিন। দুপুরের মধ্যে ২০টি বিক্রি হয়েছে। স্বপনের কথায়, ‘‘আগে মুহূর্তে সব মূর্তি বিক্রি হয়ে যেত। এখন এলাকার গ্রামেগঞ্জেও অনেকে মূর্তি বিক্রি করছেন। তাই শহরের হাটে এখন সেভাবে ভিড় হয় না। শহরের হাটে কাঁচা শালপাতা বিক্রি করতে এসেছিলেন বিনপুরের মাগুরার বাসি হেমব্রম।
এক বাণ্ডিল গোলপাতা ৫০ টাকা দামে বিক্রি করছিলেন তিনি। কাঁচা শালপাতা কিনতে আসা গৃহবধূ এক মহিলা বলেন, ‘‘কাঁচা শালপাতা ছাড়া মাংস পিঠে তৈরি করা যায় না। এক বাণ্ডিলে থাকে কুড়িটা গোলপাতা। তাতে দশটা মাঁস পিঠে তৈরি করা যায়।’’ পিঠে তৈরি করা হয় মাটির হাঁড়ি-মালসায় তাই হাঁড়ি-মালসার হাটুরেদের কাছেও ভিড় হয়েছিল।
সোম ও মঙ্গলবারও পরবের উপকরণ কেনার লোকজনের ভিড় ছিল। করোনার আতঙ্ক এখন অনেকটা কমেছে। সবাই জানাচ্ছেন, সাধ্যমতো আয়োজন করে সবাই আনন্দ করবেন। পরব তো বছরে একবারই আসে!