ঝাড়গ্রাম: আজীবন অহিংস সত্যাগ্রহে বিশ্বাসী ছিলেন জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। অহিংসার পূজারী সেই মহাত্মার প্রাণ গিয়েছিল ঘাতকের পিস্তলের গুলিতে। মহাত্মার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর ত্যাগ ও অহিংসার পথ আজও আমাদের পথ দেখায়।
শনিবার মহাত্মা গাঁধীর প্রয়াণ দিবসে ঝাড়গ্রাম জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে এভাবেই মহাত্মার মূল্যায়ন করলেন বিশিষ্টজনেরা। ওই স্মরণ-অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) পীযূষ গোস্বামী, লোক সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক সঞ্জয় চক্রবর্তী মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও স্বাধীনতার জন্য তাঁর অহিংস সত্যাগ্রহের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।
এদিন ঝাড়গ্রাম জেলা তথ্যকেন্দ্রের সভাঘরে সর্বধর্ম প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। গীতা, কোরআন, বাইবেল, ত্রিপিটক, সারিধরমের মত বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থপাঠ করা হয়। বিচিত্রা মহিলা সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীরা দেশাত্মবোধক সঙ্গীত ও মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় রামধুন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। রাম নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা চললেও এদিন রাজ্যের সর্বত্র মহাত্মার মৃত্যু দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁর প্রিয় রামধুন সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে নির্দেশ ছিল।
আরও পড়ুন : কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গর্জে উঠল গোপীবল্লভপুর
মহাত্মা গান্ধীকে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নতুন দিল্লির বিড়লা হাউস প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর ঘাতক নাথুরাম গডসে ছিলেন হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, হিন্দু মহাসভার সদস্য এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের প্রাক্তন সদস্য। গডসে মনে করেছিলেন,১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের সময় গান্ধীজি মুসলমানদের পক্ষে খুব বেশি সহায়তা করেছিলেন।
মহাত্মার হত্যাকারী গডসে এবং সহায়তাকারী নারায়ণ আপ্তেকে পরবর্তীতে আইনি বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয়। নতুন দিল্লির রাজঘাটের মহাত্মার স্মৃতিসৌধে লেখা আছে ‘হে রাম’। এই দু’টি শব্দকে গান্ধীর মৃত্যুকালীন শেষ কথা বলে বিশ্বাস করা হয়।
আরও পড়ুন : বিজেপির তৈরি মাঠে ফাঁক-ফোকর মেরামত করবেন শুভেন্দু
গান্ধীজির মৃত্যুর পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রেডিওতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন:
“বন্ধু ও সহযোদ্ধারা আমাদের জীবন থেকে আলো হারিয়ে গেছে, এবং সেখানে শুধুই অন্ধকার এবং আমি ঠিক জানি না আপনাদের কী বলব কেমন করে বলব। আমাদের প্রেমময় নেতা যাকে আমরা বাপু বলে থাকি, আমাদের জাতির পিতা আর নেই। হয়ত এ ভাবে বলায় আমার ভুল হচ্ছে তবে আমরা আর তাঁকে দেখতে পাব না যাঁকে আমরা বহুদিন ধরে দেখেছি, আমরা আর উপদেশ কিংবা স্বান্ত্বনার জন্য তাঁর কাছে ছুটে যাব না, এবং এটি এক ভয়াবহ আঘাত, শুধু আমার জন্যই নয়, এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য।”
গান্ধীজির মৃত্যু দিনটিকে সারাদেশে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।