ঝাড়গ্রাম: সরকারি ভাবে না হলেও আদিবাসী ভূমিজ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবশেষে বেলপাহাড়িতে বসল চুয়াড় বিদ্রোহের ‘মহানায়ক’ রঘুনাথ সিংয়ের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। সম্প্রতি বেলপাহাড়ির সিঁদুরিয়া মোড়ে ‘ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজ’-এর উদ্যোগে মূর্তিটি বসানো হয়েছে। রঘুনাথ সিংয়ের এই মূর্তি পর্যটকদের কাছেও নতুন দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছে। পাথর কেটে মূর্তিটি তৈরি করেছেন স্থানীয় এক শিল্পী।
ভূমিজ সমাজের দাবি, ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে অধূনা ঝাড়খণ্ডের ধলভূমগড়ের জমিদার জগন্নাথ সিংয়ের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। পরে জগন্নাথের ছেলে বৈদ্যনাথ এবং বৈদ্যনাথের ছেলে রঘুনাথ সিং চুয়াড় বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এমনকী ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে চুয়াড় বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রথম ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল পুরুলিয়ার কুইলাপালের ভূমিজ সম্প্রদায়ের সুবলা সিংকে।
সম্প্রতি লালগড়ের কংসাবতী নদীর সেতুটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে রঘুনাথ মাহাতোর নামে। কুড়মি সংগঠনগুলির দাবি, রঘুনাথ মাহাতো চুয়াড় বিদ্রোহের প্রথম শহিদ। সেই দাবি মেনে প্রশাসনিক উদ্যোগে সম্প্রতি লালগড় সেতুর নতুন নামকরণ হয়েছে। কিছুদিন আগে সেতুর আনুষ্ঠানিক নামকরণের সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো। তিনিও রঘুনাথ মাহাতোকে চুয়াড় বিদ্রোহের প্রথম শহিদ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ভেঙে ১৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
ইতিমধ্যে ডিসেম্বরের গোড়ায় ঝাড়গ্রাম শহরে নজরকাড়া মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ জমায়েত করে গণডেপুটেশন দেয় ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটি। জেলাশাসকের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ১৫ দফা দাবি সনদ জমা দেওয়া হয়। সেই দাবিপত্রেও ভূমিজ সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, পরাধীন ভারতে চুয়াড় বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিলেন ভূমিজরা। অথচ সেই ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। চুয়াড় বিদ্রোহের মহানায়ক রঘুনাথ সিংয়ের অমর্যাদা করা হয়েছে।
ভূমিজ সংগঠনটির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তপনকুমার সর্দার বলেন, ‘‘চুয়াড় বিদ্রোহের মহানায়ক ছিলেন রঘুনাথ সিং। তাই লালগড় সেতুর নাম রঘুনাথ সিংয়ের নামে করতে হবে।’’ ভূমিজদের ভাষাকে রাজ্যের দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া, ভূমিজ উন্নয়ন পর্ষদ গঠন, ভূমিজদের ধর্মীয় স্থানের সংরক্ষণ, অরণ্যভূমির পাট্টা সহ নানা দাবিও তুলেছেন ভূমিজ নেতারা।