Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
আন্তর্জাতিক

মেগানকে ডায়ানার সাথে তুলনা করা হচ্ছে কেন

মেগানকে ডায়ানার সাথে তুলনা করা হচ্ছে কেন - West Bengal News 24

আমেরিকার টকশো উপস্থাপক অপরা উইনফ্রির সাথে ডিউক ও ডাচেস অফ সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার বেশ কিছু কারণে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটা কারণ হল প্রিন্স হ্যারি এই সাক্ষাৎকারে বহুবার তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার নাম উল্লেখ করেছেন।

মেগান মার্কেলও বলেছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারে বিয়ে করার পর তার ওপর চাপ নিয়ে তিনি কথা বলেছিলেন ডায়ানার বন্ধুদের সাথে, ‘কারণ ওই পরিবারের ভেতরে থাকাটা আসলে যে কীরকম চাপের তা আর কে বুঝতে পারতো?’ ব্রিটিশ রাজপরিবারে এই দুই নারীর অভিজ্ঞতার মধ্যে মিল টানা হচ্ছে।

প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, তার আশঙ্কা হয়েছিল ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে’। এরপর তিনি এবং মেগান রাজপরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্য হিসাবে তাদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড কাগজগুলো তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার প্রতি যে ধরনের আচরণ করেছিল, সেই কাগজগুলো তার স্ত্রী মেগানের প্রতিও যে একইধরনের আচরণ করেছে সেকথাও হ্যারি উল্লেখ করেছেন। যদিও একথা তিনি আগেও বলেছেন।

প্রিন্সেস ডায়ানা পৃথিবীতে সবচেয়ে বিখ্যাত নারীদের অন্যতম এবং প্রায়ই তাকে নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি হয়েছে। এসব লেখায় এসেছে তার দাতব্য কাজকর্ম এবং পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা শিরোনাম হয়ে ওঠা ঘটনা।

‘রাজপরিবারে তিনি সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি, তার জায়গা কেউ নিতে পারেনি। বিশ্ব জুড়ে তার ব্যাপক পরিচিতি ও স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি বিশাল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,’ বিবিসি রেডিও ওয়ানের নিউজবিট অনুষ্ঠানকে বলেছেন রাজপরিবার বিষয়ে লেখিকা কেটি নিকল।

তবে কেটি একথাও বলেছেন যে, ডায়ানাকে নিয়ে সবসময়ই যে ইতিবাচক খবর হয়েছে তেমনটা নয়।

‘সংবাদমাধ্যমে ডায়ানাকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। ডায়ানা যেহেতু বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তাই ছবিশিকারী প্যাপারাৎসিরা প্রিন্স উইলিয়াম আর হ্যারিকেও অনবরত তাড়া করে বেড়াত।’

রাজপরিবার বিষয়ক লেখিকা কেটি নিকল বলেছেন ছবি শিকারী প্যাপারাৎসিরা প্রিন্সেস ডায়ানাকে ‘প্রায়ই অনুসরণ করত’’। সাংবাদিক জেমস ব্রুকসও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।

‘কোন কোন সময় সংবাদমাধ্যমের সাথে ডায়ানার খুবই ভাল সম্পর্ক দেখা যেত, তারা তার সাথে খুবই ভাল আচরণ করত, তার পক্ষ নিয়ে কথা বলত। আবার অনেক সময় ডায়ানার মিডিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নাক গলানোর অভিযোগ করতেন। একটা মিশ্র সম্পর্ক ছিল।’

জীবনের শেষ বছরগুলোতে ডায়ানা নিজেই সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যার থেকে কেউ কেউ মন্তব্য করতেন যে ডায়ানা প্রচারণা চাইছেন এবং তার ব্যাপার সামনে আনার জন্য সংবাদমাধ্যমে উৎসাহ দিচ্ছেন।

অন্যদিকে মেগান রাজপরিবারের বৌ হয়ে আসার পর তার ব্যক্তিগত ব্লগ বন্ধ করে দেন। এবং উইনফ্রির সাথে এই সাক্ষাৎকারের আগে তিনি যা বলেছেন তার অধিকাংশই ছিল তার দাতব্য কাজকর্মকে ঘিরে। তবে কেটি নিকল বলছেন কেউ কেউ মনে করছেন মেগান এবং হ্যারি পরস্পরবিরোধী কিছু কথা বলেছেন।

শান্তিপূর্ণ জীবন?
জানুয়ারি ২০২০ সালে হ্যারি ও মেগান দম্পতি জানান, রাজপরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্য হিসাবে তাদের দায়িত্ব থেকে তারা সরে দাঁড়াচ্ছেন। তারা কানাডায় চলে যান, সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায়। সম্প্রতি তারা ঘোষণা করেন যে তারা ব্রিটিশ রাজপিরবারের সদস্য হিসাবে আর যুক্তরাজ্যে ফিরে আসবেন না।

তবে কেটি নিকল বলছেন ‘আমেরিকায় যাবার পর সেখানে তাদের জীবন সম্পর্কে এই দম্পতি অনেক বিস্তারিত খবর দিয়েছেন এই সাক্ষাৎকারে। যুক্তরাজ্যে তাদের জীবন সম্পর্কে তারা কখনই এত খোলামেলা কথা বলেননি।’

রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এই দম্পতি স্পটিফাইতে পডকাস্ট শুরু করেছেন, নেটফ্লিক্সের সঙ্গে একটি চুক্তিতে তারা সই করেছেন এবং জেমস কর্ডেন এবং অপরা উইনফ্রিকে তারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

‘এই দম্পতি শান্তিপূর্ণ জীবন চেয়েছেন বলেই সেখানে চলে গেছেন এমন কথাও কেউ কেউ বলেছেন। তাদের প্রশ্ন ‘নাহলে কেন তারা জেমস কর্ডেন এবং অপরা উইনফ্রিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তাদের ছেলে সম্পর্কে এত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলেন?’ বলছেন কেটি নিকল।

‘তবে ব্রিটেনে থাকতে না যাওয়া এবং সংবাদমাধ্যমকে এড়ানোই যে তাদের দেশত্যাগের সত্যি কারণ, তা অনেক মানুষই বিশ্বাস করছেন না। তারা হ্যারি ও মেগান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারেননি যা তারা এখন জানছেন।’

হ্যারি অপরাকে বলেছেন নেটফ্লিক্স এবং স্পটিফাইয়ের সাথে চুক্তি করা তাদের পরিকল্পনায় কখনই ছিল না। কিন্তু তার পরিবার ২০২০র গোড়ায় তাদের ‘সবরকম অর্থ দেয়া পুরো বন্ধ করে দেয়’।

প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু ও প্যাপারাৎসি
‘যেখানেই তিনি গেছেন তার প্রতিটি পদক্ষেপের খবর দিতে বিশাল সংখ্যক সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী তার পেছন পেছন সেখানে গেছেন,’ বলছেন জেমস ব্রুকস।

জেমস মনে করেন সংবাদমাধ্যমের ব্যাপারে হ্যারির মতামতের সাথে জড়িয়ে আছে তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর ঘটনা। ‘মিডিয়া সম্পর্কে হ্যারি আর উইলিয়ামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মায়ের মৃত্যুর কারণে কলুষিত হয়ে গেছে। কারণ তাদের চোখে প্যাপারাৎসিরা (ছবি শিকারী) তার জীবন অনবরত উত্যক্ত করে তুলেছিল,’ তিনি বলেন।

প্যারিসে এক সুড়ঙ্গ পথের মধ্যে ৩১শে অগাস্ট ১৯৯৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান ডায়ানা। হ্যারির বয়স তখন মাত্র ১২।গাড়ির চালক হেনরি পল মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং মোটরবাইকে তাদের গাড়ির পিছু ধাওয়া করছিল প্যাপারাৎসিরা। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয় গাড়ি চালক ও প্যাপারাৎসিদের ‘সম্পূর্ণ গাফিলতির’ কারণে অবৈধ মৃত্যুর শিকার হয়েছিলেন ডায়ানা।

বিবিসির একটি তথ্যচিত্রে ২০১৭ সালে প্রিন্স হ্যারি তার মায়ের মৃত্যুর পেছনে এই ছবিশিকারীদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছিলেন।

‘সবচেয়ে কঠিন ছিল এটা মেনে নেয়া যে, যে লোকগুলো তার ছবি তোলার জন্য সুড়ঙ্গের ভেতর ওভাবে তার গাড়িকে ধাওয়া করেছিল, তারাই গাড়ির পেছনের সিটে মা মারা যাচ্ছেন সেই ছবিগুলো তুলেছিল,’ তিনি বলেছিলেন।

কেটি নিকল বলছেন, প্রিন্স হ্যারি ২০১৯এর অক্টোবরে একটি বিবৃতি দেবার পরেও তার ধারণা ‘প্যাপারাৎসিরা যেভাবে ডায়ানাকে তাড়া করে ফিরত তারা সেভাবে মেগানের পেছনে হয়ত লাগেনি’। তবে তিনি মনে করেন মেগানকে বারবার সমালোচনা করে খবর লেখা নিয়ে হ্যারি স্পষ্টতই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন।

‘যেসব সাংবাদিক সারাক্ষণ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরিতে ইন্ধন দিচ্ছেন তিনি (হ্যারি) তাদের সমালোচনা করেছেন’।

‘অর্থ খরচ নিয়ে অসংখ্য নেতিবাচক কাহিনি লেখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের বাসা মেরামতের পেছনে জনসাধারণের করের অর্থ খরচ করার কাহিনী।’ হ্যারি ও মেগান দম্পতি এ বাবদ খরচ করা ২৪ লক্ষ পাউন্ড পরে ফিরিয়ে দেন।

‘ডাচেস অফ সাসেক্স-এর ডিজাইনার পোশাকের ব্যয় নিয়েও লেখা হয়েছে। এসব পোশাকের পেছনে কয়েক লাখ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে’।

‘তাদের বিয়ে নিয়েও আলাদা অনেক কাহিনি ছাপা হয়েছে। মেগান তাদের বিবাহ স্থল সেন্ট জর্জেস গির্জাকক্ষের বাতাসে সুগন্ধি (এয়ার ফ্রেশনার) ছড়াতে চেয়েছিলেন এমন গুজব তোলা হয়েছে, বিয়ের সময় মাথার টায়রা নিয়ে মেগান মেজাজ দেখিয়েছিলেন এমন গুজবও লেখা হয়েছে। প্রিন্স উইলিয়ামের কন্যা প্রিন্সেস শার্লটের বিয়ের অনুষ্ঠানে পরার পোশাক নিয়ে কেট (উইলিয়ামের স্ত্রী) ও মেগানের মধ্যে মতান্তর ও মনোমালিন্য নিয়ে গুজব ছাপা হয়েছে।’

মেগান অপরাকে বলেছেন, শার্লটের পোশাক নিয়ে তিনি কেট-কে কাঁদাননি, বরং সেখানে উল্টোটাই ঘটেছিল।

‘বিয়েতে ফুল নিয়ে যেসব মেয়েরা মেগানের সাথে থাকবেন, তাদের পোশাক নিয়ে বিয়ের কয়েকদিন আগে কেট অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। যার জন্য আমি কেঁদেছিলাম,’ বলেন মেগান। পরে কেট এই ঘটনার জন্য দু:খপ্রকাশ করেন এবং ফুল ও একটা নোট আমাকে দেন ব্যাপারটা মিটমাট করার জন্য।

মেগান সাক্ষাৎকারে বলেন কেট ‘একজন ভাল মানুষ’ এবং তিনি আশা করেছিলেন এই মিথ্যা কাহিনি কেট নিজেই সংশোধন করার উদ্যোগ নেবেন।

কেউ কেউ বলছেন মেগানের সাথে প্রিন্সেস ডায়ানার তফাত হল মেগান মানুষের নজর থেকে মুখ লুকিয়ে থাকার মত মেয়ে নন। হ্যারিকে বিয়ে করার আগে তিনি একজন তারকা ছিলেন। কিন্তু এদের সাথে একমত নন কেটি নিকল।

‘তিনি বিয়ের আগে তারকা জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন ঠিকই, কিন্তু রাজপরিবারের সদস্য থাকার সাথে তার তুলনা চলে না।’

‘হ্যাঁ- তিনি তারকা ছিলেন, কিন্তু তিনি অ্যাঞ্জেলিনা জলি বা নিকোল কিডম্যানের মত প্রথম সারির অভিনেত্রী ছিলেন না। মেগান নিজেই সেটা স্বীকার করেছেন। তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিচার করা হচ্ছে, লোকে তার প্রতিটি পদক্ষেপ মাপছে, এমন অভিজ্ঞতা তার কখনই হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যেভাবে খুঁটিয়ে বিচার করা হয়, মেগানকেও ঠিক ততটাই বিচার করা হয়েছে। লোকে এখন ভুলে গেছে, কিন্তু ডাচেস অফ কেম্ব্রিজ কেটকে নিয়েও প্রথমদিকে ট্যাবলয়েড পত্রিকায় সমালোচনা করা হয়েছিল।’

কেটি বলছেন, সমস্যা হল হ্যারি ও মেগান সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ প্রচুর। কিন্তু সেই আগ্রহ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কিনা, যা বলা হচ্ছে তা কতটা গ্রহণযোগ্য সমস্যাটা সেখানেই।

‘সংবাদমাধ্যম রাজপরিবারের সদস্যদের নিয়ে খবর করবে, সেটা তাদের কাজ। কিন্তু সেটা ন্যায্য ও বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে, এবং হতে হবে নিরপেক্ষ।’

সূত্র : বিবিসি
এন এ/ ০৯ মার্চ

আরও পড়ুন ::

Back to top button