অপরাধ

প্রেম-বিয়ের প্রলোভনে স্বর্ণার প্রতারণা

প্রেম-বিয়ের প্রলোভনে স্বর্ণার প্রতারণা - West Bengal News 24

নানা অজুহাতে সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জুয়েলের কাছ থেকে নগদ টাকা, বাড়ি-গাড়ি, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। প্রথমে প্রেম, তারপর বিয়ে অতঃপর প্রতারণা করে অনেকের কাছ থেকে টাকা ও সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন বর্তমান সময়ের আলোচিত এ অভিনেত্রী।

শুধু সৌদি প্রবাসী কামরুলই নয়, তার এহেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরও অনেকেই। স্বর্ণা গ্রেফতারের পর প্রতারণার শিকার অনেকেই তাদের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

প্রতারণার কাজে স্বর্ণা একাই নয়, তার সঙ্গে সহযোগির ভুমিকায় ছিলেন তার মা আশরাফি ইসলাম শেইলি (৬০), ছেলে আন্নাফি (২০), নাহিদ হাসান রেমি (৩৬), ফারহা আহম্মেদ (৩০) ও অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (৩৭)। প্রবাসী ও অর্থবৃত্তশালীদের প্রেম-বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রতারণা করে আসছিল স্বর্ণা প্রতারক চক্রটি। এ চক্রের সঙ্গে স্বর্ণার কয়েকজন আত্মীয়ের জড়িত থাকার তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ও সম্পদের বিষয়েও ইতোমধ্যে খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন : মডেল রোমানা নানান কৌশলে টাকা হাতিয়ে সৌদি প্রবাসীকে তালাক দেন

পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিনেত্রী স্বর্ণা প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিয়োগ রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বাড়ি-গাড়ি-স্বর্ণালংকারসহ বেশকিছু সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। আর এসব অপকর্মে স্বর্ণার মা ও ছেলের সংশ্লিষ্টতায় তাদের কয়েকজন আত্মীয়ের জড়িত থাকার তথ্যও আমরা পেয়েছি। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

প্রেম-বিয়ের প্রলোভনে স্বর্ণার প্রতারণা - West Bengal News 24

এছাড়া আমরা তথ্য পেয়েছি, স্বর্ণা এর আগেও বিয়ের ফাঁদ পেতে প্রতারণা করেছিলেন। ২০১৭ সালে স্বর্ণা তার প্রথম স্বামীকে তালাক দেন। এরপর আবার এক উকিলকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তাকে তালাক দেওয়ার পরই এ প্রবাসীকে বিয়ে করেন তিনি। অভিনেত্রী স্বর্ণা দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রতারক চক্রের হয়ে কাজ করে আসছেন। প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক পরে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে থাকেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, স্বর্ণার ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তার কতগুলো ব্যাংক হিসাব রয়েছে, কী পরিমাণ টাকা তিনি লেনদেন করেছেন, এসব তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়ে তথ্য জানতে চাইবো। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

আরও পড়ুন : খুনের পর হৃৎপিণ্ড কেটে রান্না!

সম্প্রতি কামরুল হাসান জুয়েল নামে প্রতারণার শিকার এক সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় স্বর্ণার মা, ছেলেসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকা থেকে মা আশরাফি ইসলাম শেইলি ও ছেলে আন্নাফিসহ স্বর্ণাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আসামিরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী কামরুল হাসান জুয়েল অভিযোগ করেন প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে, বিয়ের পর ফাঁদে ফেলে বিভিন্নভাবে নগদ টাকা, বাড়ি-গাড়িসহ প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন অভিনেত্রী স্বর্ণা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. দুলাল হোসেন বলেন, স্বর্ণার প্রতারণার বিষয়ে ইতোমধ্যেই আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। স্বর্ণার এসব প্রতারণার কাজে তার মা ও ছেলেসহ আত্মীয়ের বেশ কয়েকজনের তথ্য পেয়েছি আমরা। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, স্বর্ণার আয় বহির্ভূত সম্পদের হিসাব জানতে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আগামী সপ্তাহেই চিঠি দিয়ে জানানো হবে।

আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে প্রতারণার বিষয়ে আরও তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলেও জানান দুলাল হোসেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, স্বর্ণা নানাভাবে ব্যবসায়ী, উকিল, সাংবাদিকসহ প্রবাসী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতারণা করেছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে প্রতারণায় তার কৌশল ছিল প্রেম-বিয়ে এবং পরে ব্ল্যাকমেইলিং।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী প্রবাসী ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জুয়েল বলেন, আমার খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে স্বর্ণার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার এক পর্যায়ে সে ফেসবুকে আমাকে অ্যাড করে। সে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। সে বলে আমার মাকে নিয়ে আমি অসহায় অবস্থায় আছি। আমার একটা ছেলে আছে লেখাপড়া করাতে পারি না। মিডিয়াতে কাজ হয় না। এক কাজ করো আমাকে তুমি একটা উবার কিনে দাও, যেটা দিয়ে আমি চলতে পারবো। আমি ১৮ লাখ টাকা দিয়ে উবার কিনে দেই। সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা অজুহাত ও প্রতারণা করে স্বর্ণা আমার কাজ থেকে নগদ টাকা, বাড়ি-গাড়ি, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন ::

Back to top button