রামগড়: নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়াই ঝাড়গ্রাম বিধানসভার রামগড়ে বহু মানুষের জমায়েত করে নির্বাচনী প্রচারসভা করল বিজেপি। এমনই অভিযোগে বিজেপির সভাস্থলের কয়েক হাত দূরে রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করলেন তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা হাঁসদা! সেখানে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে গুটিকয় তৃণমূল কর্মী তারস্বরে ‘খেলা হবে’ গান চালিয়ে উদ্দাম নৃত্য জুড়লেন। ওই সভাস্থলের কিলোমিটার দশেক দূরে লালগড় থানার সামনের রাস্তায় ব্যারিকেড করে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আটকে দিল পুলিশ। রামগড়ের সভায় যোগ দেওয়া হল না শুভেন্দুর।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী থাকলেন রামগড় ও লালগড়ের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে প্রশ্নও উঠল, অনুমতি ছাড়া কি করে বিজেপির ওই সভা হল?
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম জেলায় তিনটি সভা করার কথা ছিল বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর। এদিন দুপুরে ও বিকেলে নয়াগ্রাম ও বিনপুর বিধানসভা এলাকায় দু’টি জনসভা করেন শুভেন্দু। শেষ সভা ছিল ঝাড়গ্রাম বিধানসভার লালগড় ব্লকের রামগড়ে। এদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় ওই সভা শুরু হয়ে যায়। বাসে বহু লোকজন আসেন সভায়। বিজেপির জেলা নেতারা বক্তৃতা করার সময় কাছেই তৃণমূলের রামগড় অঞ্চল কার্যালয়ের সামনে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সেখানে এসে অবস্থানে বসেন। বিরবাহা অভিযোগ করেন, কমিশনের অনুমতি ছাড়াই বিজেপি সভা করছে। এর বিহিত না হলে তিনি অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দেন। গোটা এলাকা ঘিরে রাখে প্রচুর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। ততক্ষণে বিজেপির সভা পুরোদমে চলতে থাকে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৃণমূল কর্মীরাও ‘খেলা হবে’ গানের সঙ্গে নাচতে থাকেন।
পরিস্থিতি রীতিমত উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। বিজেপি কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন। সভা মঞ্চ থেকে বিজেপির জেলা নেতা অসীম নন্দী, রমেশ সরকারেরা মাইক্রোফোনে বলতে থাকেন, ‘‘প্ররোচনায় পা দেবেন না। শান্ত থাকুন। ওরা হেরে যাবে বলে মরিয়া হয়ে এসব করছে। ওদের গুরুত্ব দেবেন না।’’ বিজেপি প্রার্থী সুখময় শতপথী বক্তৃতায় বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন আমি নাকি জিতে গিয়েছি। তবে আমাকে যেভাবে আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে তাতে বুঝতে পারছি আমি জিতে গিয়েছি।’’ সুখময় তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সিপিএমকে তাড়িয়েছিলেন। বিনিময়ে আপনাদের নেত্রী কিন্তু আপনাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে থেকে কাউকে প্রার্থী করলেন না। অন্য দলের ভাড়া করা একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন : জিতে প্রথম বিজয় সমাবেশ জঙ্গলমহলে: শুভেন্দু
সভার শেষ লগ্নে হাজির হন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, সভার অনুমতি নেই। হাই প্রোফাইল শুভেন্দুকে এখানে সভা করতে দেওয়া যাবে না। বিজেপি নেতারা সভা শেষ করে দেন। ওদিকে লালগড় থানার সামনে শুভেন্দুকে আটকে দেয় পুলিশ। শুভেন্দু সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন। লালগড়ের বিজেপি নেতা তন্ময় রায়, পল্লব দাস বলেন, “কমিশনে আবেদন জানিয়ে রামগড় হাইস্কুলের উল্টোদিকে সভা মঞ্চ তৈরি করা হয়। অথচ তখন পুলিশ-প্রশাসন বাধা দিল না। শেষ বেলায় শুভেন্দুদাকে আটকে দিয়ে সভা বানচাল করে দেওয়া হল।” শুভেন্দু লালগড় থানা মোড়ে স্লোগান দিয়ে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ দিয়ে আমাকে আটকে তৃণমূলের হার রোখা যাবে না। জেলার চারটি আসনে আমরা জিতব। ২ মে ফল ঘোষণা হবে। ৩ মে লালগড়ে বিজয়সভা করব।”
পুলিশের বাধায় শুভেন্দু ফিরে যান। সুখময় শতপথী অবশ্য জানান, তাঁরা পদ্ধতি মেনে আবেদন করেছেন। কিন্তু পুলিশের অসহযোগিতার কারণেই সমস্যা হয়েছে। অন্যদিকে, বিরবাহার নেতৃত্বে রামগড়ে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। বিরবাহার একটি মিছিলের অনুমতি থাকলেও সেটি করা যায়নি। এর প্রতিবাদে তৃণমূল কর্মীরা বিজেপি কর্মী-সমর্থক বোঝাই ৭টি বাস আটকে দেন। ওই বাসগুলিতে বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা।
তৃণমূল তাদের বাস আটকানোয় পাল্টা লালগড়ে দু’জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিরবাহা অবস্থান তোলেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বাস গুলিকে গন্তব্যে রওনা করানো হয়। বিজেপিও লালগড়ে অবরোধ তুলে নেয়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া বিজেপি কিভাবে সভা করল সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি জেলা নির্বাচন দপ্তরের তরফে।