ঝাড়গ্রাম

ঝাড়গ্রামের ভোট নির্বিঘ্নে, ১২ বছর পরে ভোটের লাইনে ছত্রধর

স্বপ্নীল মজুমদার

West Bengal Assembly Election 2021 : ঝাড়গ্রামের ভোট নির্বিঘ্নে, ১২ বছর পরে ভোটের লাইনে ছত্রধর - West Bengal News 24

ঝাড়গ্রাম: বারো বছর পরে ভোট দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো (Chhatradhar Mahato)। শনিবার লালগড়ে বীরকাঁড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে সপরিবারে ভোট দেওয়ার পরে ছত্রধর বলেন, ‘‘২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে শেষবার ভোট দিয়েছিলাম। তারপরে তো জেল বন্দি ছিলাম ২০২০ সাল পর্যন্ত। এবার ভোট দিয়ে খুব ভাল লাগছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) তৃতীয়বাবের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান জঙ্গলমহলবাসী। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সেই প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ভোট দিলাম। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে!’’ এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও নয়াগ্রাম বিধানসভার অধীনে গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের কুলিয়ানা বুথে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পরে কুলিয়া গ্রামের বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ কাটান তিনি। সেখান থেকে কার্যত জেলার ভোটও পরিচালনা করেন দিলীপ।

শনিবার ছিল ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি কেন্দ্রের ভোট। এর মধ্যে বিনপুর ও নয়াগ্রাম কেন্দ্র দু’টি আদিবাসী সংরক্ষিত। ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর আসন দু’টি সাধারণ। তবে এদিন বিক্ষিপ্ত দু’একটি ঘটনা ছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তবে এদিন জেলার চারটি বিধানসভায় তৃণমূলের পাশাপাশি, বিজেপির দলীয় পতাকাও ছিল নজরে পড়ার মতো। লালগড় থেকে ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি থেকে জামবনি, বেলিয়াবেড়া থেকে সাঁকরাইল কিংবা গোপীবল্লভপুর থেকে নয়াগ্রাম সর্বত্রই সক্রিয় ভাবে দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীদের। তুলনায় নয়াগ্রাম বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মুকে অনেকটাই কোণঠাসা ও ক্লান্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছে। গোপীবল্লভপুরের একটি বুথে বিজেপি কর্মীরা দুলালকে বুথে ঢুকতেই দেননি। এদিন আবার ঝাড়গ্রাম শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথের কাছে তৃণমূলের জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এক শিশু ও কয়েকজন মহিলা সহ জখম হন ১১ জন।

আরও পড়ুন : নানুরের তৃণমূল নেতা আলম শেখকে শো-কজ করল নির্বাচন কমিশন

কেন্দ্রীয় বাহিনীর অবশ্য দাবি, তৃণমূলের কর্মীরা বিধি ভেঙে বুথের কাছে ‘খেলা হবে’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। বাহিনীর জওয়ানেরা থামতে বললে তারা আরও দ্বিগুণ উৎসাহে ‘খেলা হবে’ বলে চিৎকার জুড়ে দেন। জমায়েত সরাতেই লাঠি চালানো হয়েছে বলে বাহিনীর দাবি। যদিও ঘটনাস্থলে এসে তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা হাঁসদা, ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায়, টিএমসিপির জেলা সভাপতি আর্য ঘোষেরা দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের ভোটারদের ভয় দেখাতেই বিনা প্ররোচনায় বাহিনী লাঠিপেটা করেছে।’’ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন তৃণমূলের নেতারা। বিজেপির অবশ্য দাবি, তৃণমূলের অনুকুলে ভোট পড়ছে না। সেই কারণে শঙ্কায় তৃণমূলের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে গোলমাল পাকিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল। বাহিনী বিষয়টি কড়া হাতে মোকাবিলা করেছে। অন্যদিকে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘বিজেপির কোনও জনভিত্তি নেই। সেই কারণে বাহিনীকে ব্যবহার করে ওরা তৃণমূলের ভোট আটকাতে চেয়েছিল।’’

West Bengal Assembly Election 2021 : ঝাড়গ্রামের ভোট নির্বিঘ্নে, ১২ বছর পরে ভোটের লাইনে ছত্রধর - West Bengal News 24

এবার ঝাড়গ্রাম আসনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরবাহা হাঁসদা (Birbaha Hansda) তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর সাধারণ সম্পাদিকার পদ ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের একদিন পরেই তাঁকে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে গোপীবল্লভপুর আসনটি সাধারণ হলেও এবারও সেই আসনে কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রাক্তন সরকারি চিকিৎসক খগেন্দ্রনাথ মাহাতোকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। আগে গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক ছিলেন কুড়মি সম্প্রদায়েরই চূড়ামণি মাহাতো। তাঁকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। ২০১১ ও ২০১৬ সালে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে জিতে দু’বার বিধায়ক হন সুকুমার হাঁসদা। ক্যানসারে আক্রান্ত সুকুমার গত বছর প্রয়াত হন। ফলে, তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীর আশা ছিল এবার হয়তো ঝাড়গ্রামে দলের প্রার্থী জেনারেল কেউ হবেন। তা অবশ্য হয়নি। সাঁওতালি সিনেমার অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদা অবশ্য প্রত্যয়ী যে, তিনি জিতবেন।

অন্যদিকে, নয়াগ্রামে এবারও তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন দু’বারের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। আর বিনপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন রাজ্য যুব তৃণমূলের সহসভাপতি দেবনাথ হাঁসদা। দেবনাথের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির পালহান হেমব্রম ও সিপিএমের দিবাকর হাঁসদা। ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী সুখময় শতপথী ও সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনরায় এদিন সকাল সকাল ভোট দিয়ে এলাকায় কেমন ভোট হচ্ছে সেটা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়েন। সকালে শহরের অদূরে বিজেপির একটি প্রচার গাড়ি আটকে দেন বিরবাহা। তাঁর অভিযোগ, বিধি ভেঙে ভোটদানের দিনে বিজেপি প্রচার করছে। আবার নয়াগ্রামের বিরিবেড়িয়া গ্রামেও টোম্পোতে চোঙ বেঁধে প্রচার করছিলেন তৃণমূলের লোকজন। এদিন সকালে জামবনির কাপগাড়িতে বিনপুরের বিজেপি প্রার্থী পালহান সরেন অল্পের জন্য বড় সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। সেক্টর অফিসের একটি গাড়ির সঙ্গে পালহানের গাড়ির সংঘর্ষ হয়।

সেক্টর অফিসের গাড়ির এক আধিকারিকের মাথায় চোট লাগে। পালহানের গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরে তিনি অন্য গাড়ি নিয়ে ভোট দেখতে বেরোন। এদিন গোপীবল্লভপুরে দাপটের সঙ্গে ভোট করিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সঞ্জিত মাহাতো। অন্যদিকে নয়াগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মুর মামা বকুল মুর্মু ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় লড়াইটা জমে গিয়েছে। এদিন জেলার চারটি বিধানসভায় ভোটের সকালে ছিল উৎসবের মেজাজ। সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন অনেকেই। দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগ বুথে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে যায়। বিকেলের মধ্যে কোনও বুথে ৮০ কোথাও আবার ৮৩ শতাংশ ভোটদান হয়। সার্বিক ভোটদানের হার থেকে চিন্তিত শাসক ও বিরোধী উভয় শিবিরই। কারণ, বেশি ভোট পড়লে সেটি প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বলে মনে করা হয়। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। তৃণমূল শিবিরের অবশ্য দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান জঙ্গলমহলবাসী। বিপুল হারে ভোট পড়ার এটাই প্রধান কারণ।

আরও পড়ুন ::

Back to top button