মতামত

সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কবলে আজ বিপন্ন মানবসভ্যতা

মৃত্যুঞ্জয় সরদার

সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কবলে আজ বিপন্ন মানবসভ্যতা - West Bengal News 24

আমরা সর্বদাই স্বার্থনেশি হয়ে উঠছি,সমাজব্যবস্থা কুসংস্কারের অগ্রগতি ভয়াবহ পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এযুগের।দিনের আলোতে খুন-ধর্ষণ রাজধানীর মতো ঘটনা ঘটছে, তাদেরকে আড়াল করার চেষ্টা করছে, সমাজের একশ্রেণীর ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা।এই সব ব্যক্তিরা সৎ নিষ্ঠাবান ত্যাগী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করে জেলে পর্যন্ত ভরে দিতে, একটুও দ্বিধাবোধ মনে করে না। আজকের সমাজব্যবস্থা যতটা উন্নতি হচ্ছে, ততই অবনতির দিকে এগিয়ে চলেছে, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বা সমাজসেবিরা।বর্তমান রাজ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ কঠিন থেকে কঠিনতম হচ্ছে বা হয়ে চলেছে। দেশ-বিদেশে মানুষের নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পা কেউ অগ্রগতির দিকে ভাবতে পারছে না।যে বা যারা সমাজের হত্যা করা হয় তারা যথেষ্ট পরিমান নোংরামি সঙ্গে লিপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।তবে বর্তমান যুগে নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা তাহলে কী আশা করতে পারি। আজ  নতুন প্রজন্ম তারা কি শিখবে আগামী দিনে আমাদের কাছ থেকে, দুর্নীতি ভয়াবহ আভিজাত্য চোখরাঙানি না অন্য কিছু? তবে এই দেশকে আরো সুন্দর থেকে সুন্দরতর করতে হলে  শিশুদের কে সামনে রেখে এটাই অঙ্গীকার হওয়া দরকার দুর্নীতিমুক্ত দেশ করব! তবে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? মানুষতো সর্বদাই নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্যস্ত, তারা কি নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে দুর্নীতি অত্যাচার অবিচার অনাচার করে। তারা শুধু একটা জিনিস ভালো বোঝে খুন ডাকাতি রাহাজানি যে করে হোক নিজের আখের গোছাতে হবে। তার জন্য যেকোনোভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকতেই হবে। বিশ্ব দরবারে তেমনই দুর্নীতি মানুষ ভাবতে পারে না। তবে শিশুদের কে সামনে রেখে আগামী দিনে দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষকে বিদায় দেওয়ার জন্য আজ থেকে অনুদান নেওয়া দরকার। দুর্নীতি পরায়ন দেশে মানুষের জন্য মানুষ কি কি করে, আর কি কি করা উচিত নয়, আর কি করতে হবে, সে নিয়ে আজকের বিস্তারিত আমার কলমে তুলে ধরব।

শিশুরাই দেশ ও জাতির আগামি দিনের ভবিষ্যৎ। একদিন এই শিশুরা বড় হয়ে দেশ ও জাতির কান্ডারি হবে, তাই শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবক ও রাষ্ট্রের। প্রত্যেক শিশুই জন্মগতভাবে কিছু অধিকার নিয়ে জন্মায়। শিশুর সেই অধিকার আমাদের পুরোপুরি আদায় করতে হবে। তবেই শিশু বড় হয়ে দেশ ও জাতির কর্ণধার হতে পারবে। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, শিশুর উপর মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। সম্ভবত এ বিশ্বাস জাগ্রত হওয়ার সুবাদে আজ দেখা যায় দেশে দেশে বিভিন্ন শিশু কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। রচিত হয়েছে জাতিসংঘ কর্তৃক “শিশু অধিকার সনদ”, জাতীয় শিশুনীতি এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণে নানা বিধিবিধান। আমাদের দেশেও আমরা দেখতে পাই, শিশু দিবা যতœ কেন্দ্র, শিশু শিক্ষালয়, শিশু একাডেমি, চাইল্ড কেয়ার হোম ইত্যাদি। শিশুদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই প্রতি বছর, সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দ, অধিকার ও উন্নয়ন ভাবনার জন্য এই বিশ্ব শিশু দিবস নির্ধারিত। বিশ্ব শিশু দিবস পালনের জন্য ইউনিসেফ ১৯৫২ সালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের ৫ই অক্টোবর বিশ্বের ৪০টি দেশ বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপন করে। ১৯৫৯ সালের ২০শে নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গ্রহণ করে ‘শিশু অধিকার ঘোষণা’। এই ঘোষণা জাতিসংঘের তখনকার ৭৮টি দেশ গ্রহণ করে। এর ফলে শিশুদের অধিকার সম্বন্ধে অনেকের সচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের সদস্য দেশ ছিল ১৬০টি। শিশু অধিকার সনদে সংযুক্ত ৫৪ ধারা সম্পর্কে ১০ বছর ধরে আলোচনার পরেই সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয় এই সনদ। এতে ১৮ বছর পর্যন্ত সব ছেলেমেয়েকে শিশু কিশোর ধরা হয়েছে।
১৮ বৎসর পর্যন্ত সব ছেলেমেয়ের মানুষের মত মানুষ হওয়ার অধিকার রয়েছে। শিশুদের আহার, আশ্রয় ও সামাজিক নিরাপত্তার সাথে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। অগণিত অসহায়, অবহেলিত শিশুর সব ধরণের সমস্যার সমাধান হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। এ সমস্তই শিশুর মৌলিক অধিকারের কথা ১৯৪৮ সালেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে শিশু অধিকার সনদ সারা বিশ্বে চালু হওয়ার পর প্রতিবছর ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে। শিশুদের জন্য দেয়া অধিকারগুলো কি শিশুরা ভোগ করছে না-কি শুধু ঘোষণা আর আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ তা বিশেষভাবে ভেবে দেখতে হবে।

আমাদের দেশের শিশুরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাচার হয়ে নানান নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ শিশু উটের জকি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অধিকাংশ শিশু দেশে-বিদেশে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গরিব শিশুরা পেটের দায়ে রোজগারে লেগে কঠোর পরিশ্রম করছে ও মালিককর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শত্রুতা সাধনে শিশুর উপর এসিড নিক্ষেপ করা হচ্ছে। শিশুদের আদর সোহাগের পরিবর্তে অনেক স্থানে মারপিট করা হয়। নিজ সন্তানদের কামাই খাওয়ার জন্য অনেক মা-বাবা শিশু বয়সেই বিভিন্ন চাকুরি বা কাজে লাগিয়ে দেন লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত করে। অনেক মা নিজের স্বাস্থ্য, চেহারা ঠিক রাখার জন্য সন্তানকে দুধ পান করান না। সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হলো অনেক মা নিজের গর্ভজাত সন্তানকে প্রসবের পর পাশের জঙ্গলে অথবা ড্রেনে ফেলে আসার খবর বিভিন্ন সময় পাওয়া যায়। কিন্তু শিশুদের প্রতি আমাদের তো এমন আচরণ করার কথা ছিল না। যে শিশু অর্থাৎ সকল শিশুই কি ফুটফুটে চাঁদের মতো। শিশুরা তো আনন্দের প্রতীক। তবে সে শিশু কেন অবহেলিত হবে! যারা পৃথিবীতে পরিপূর্ণ মানুষ হয়েছেন বা বড় হয়েছেন তারা সকলেই একদিন শিশু ছিলেন। তাই তো বলা হয়, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। অর্থাৎ আজকে যে শিশু সেই একদিন পরিপূর্ণ মানুষ হবে। আজ যারা শিশু, তারাই ভবিষ্যতে হবে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কর্ণধার, শিশুরাই আগামী প্রজন্মের পিতা। তাই শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। শিশুদেরকে সঠিকভাবে মানুষ করা আজকের দিনের বড় কঠিন। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত যেন হিংসার বাতাবরণে চলছে, থেকে বেরিয়ে আসা অনেকটাই কঠিন।মানবকল্যাণের একমাত্র উন্নতির পথ শিশুরা, তাই আগামী দিনে শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়তে অভিভাবক ও অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার । আমরা যতই সচেতন হই না কেন ,বর্তমানে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কবলে আজ বিপন্ন মানবসভ্যতা। সর্বনাশা এই সামাজিক ব্যাধির মরণ ছোবলে বর্তমান সমাজ জর্জরিত। সর্বোচ্চ প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতি, শিল্প-বাণিজ্যসহ সর্বত্রই চলছে দুর্নীতি। তাই বিশেষজ্ঞরা দুর্নীতিকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।যাহোক, দুর্নীতির ইতিহাস গেয়ে লাভ নেই? তা আমরা সবাই কিছু না কিছু জানি? কথা হল, দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে কিভাবে? এর উত্তর হল- সততা আর সদিচ্ছা। ক্ষমতাবান মানুষের চেয়ে সাধারণ জনগণ সংখ্যায় অনেক বেশি। তাই ক্ষমতাবানরা যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
যদি দেশের প্রথম সারির অফিসাররা ঠিক হয়ে যান, তাহলে তাদের অধীনে যারা আছে; তাদের ঠিক হতে সময় লাগবে না।যদি প্রতিজন সংসদ সদস্য ঠিক হয়ে যান, তাহলে তার নাম ভাঙিয়ে কেউ দুর্নীতি করার সাহস করবে না। কয়েক কোটি জনতাকে সংশোধন করতে বেগ পেতে হবে না, যদি কয়েক হাজার অফিসারকে ঠিক করা যায়। তবেই ক্যান্সার যেভাবে মানুষকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দোরগোড়ায় নিয়ে যায়, দুর্নীতি ঠিক সেভাবেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়? যেহেতু মরণব্যাধি ক্যান্সারের ওষুধ বের হয়েছে। এখন অনেকের ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার খবর পাওয়া যায়?শত চেষ্টা করেও দুর্নীতি রুখতে পারে না এই দেশে ,প্রতি মুহূর্তে কেন চলে ঘটেছিল দুর্নীতি পরায়ন ঘটনা। ক্যান্সার যেমন একবার শরীরের সব ক্ষত ছড়িয়ে পড়ে, দুর্নীতি  প্রতিটি বিষয়ের ছড়িয়ে পড়েছে রন্ধে রন্ধে। হাজার কষ্টের মধ্যেও সর্বোদয় আমি নিজের কাজে পি পা হয়নি। বর্তমানে আমার পিতা হসপিটালে ভর্তি তবুও আমি আমার কলম ভাষা বন্ধ করার পক্ষে নয়।নীতি গত আদর্শ মধ্যে আমি যেভাবে জন্য কি দুর্নীতিকে নিজে চোখে দেখেছি, তার  আড়াল করাটা অত সহজ নয়।

আভিধানিক অর্থে দুর্নীতি হলো নীতিবিরুদ্ধ, কুনীতি, অসদাচরণ, অসৎ উপায় অবলম্বন, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন, নীতি-বিরুদ্ধ আচরণ ইত্যাদি। আর প্রতিরোধ অর্থ হচ্ছে-নিরোধ, নিবারণ, বাধাদান, প্রতিবন্ধকতা, আটক, ব্যাঘাত। আভিধানিক অর্থে শব্দটি অত্যন্ত ছোট হলেও এর অর্থ ব্যাপক। দুর্নীতিকে নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায় আবদ্ধ করা যায় না। বিজ্ঞজনরা দুর্নীতিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। দুর্নীতির ধরন প্রকৃতি বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময়। তাই তা নির্দিষ্টকরণ জটিল কাজ। দুর্নীতি এমন এক ধরনের অপরাধ, যার সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার, সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার যুক্ত। সাধারণ কথায় দায়িত্বে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ উৎকোচ গ্রহণ বা মহল বিশেষের অশুভ স্বার্থ হাসিল করাকে দুর্নীতি বোঝায়।এদিকে বাংলার সমাজজীবনে অনৈক্য, হিংসা, দলাদলি, কোন্দল, স্বার্থপরতা, অবিশ্বাস এবং চরম দুর্নীতি বিরাজ করছে। দুর্নীতি আজ রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, সামাজি, ধর্মীয় ও ব্যক্তি জীবনের সব ক্ষেত্রে বিরাজ করছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তা থেকে বাদ যায়নি। আর যাই হোক দুর্নীতিমুক্ত সমাজ সবার কাম্য। দুর্নীতি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে এবং জনগণের সম্পদকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা জাগায়। দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে যারা প্রভাব বিস্তার করে তারা সেই প্রভাব স্বীকার করে না। এই দুর্নীতিপরায়ণ অবস্থা কোনো নীতিকথা ও তথাকথিত সামাজিক বয়কটে পরিবর্তন হবে না। বর্তমান যুগে অপরাধের ধারা বদলে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে ভিওআইপির সাহায্যে কতিপয় কোম্পানি যে অনাচার করে এসেছে, প্রশাসন তাদের কেশ পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেনি। এসব দুর্নীতি ও অপরাধ কর্মের সঙ্গে সমাজের উচ্চ মহলের শিক্ষিত, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মদদ রয়েছে। তাদের সহায়তায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে বহাল তবিয়তে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তায় দ-িতদের অর্ধেকেরও বেশি অপরাধী সামাজিক ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। দুদকের তত্ত্বাবধানে গত দেড় বছরে প্রায় ৩২৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪২৫টি মামলা হয়েছে এবং এর মধ্যে নিম্ন আদালতে ৮৯টি মামলার রায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে ১২৪ জনকে। তন্মধ্যে দুদকের তালিকাভুক্ত মাত্র ৪০ জন। এর মধ্যে আবার ২৪ জনই পলাতক। সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮১ জনই পলাতক। ধনী ও প্রভাবশালীরা নিয়ম মেনে চলে না। তাই সঠিক নীতি কাজ করে না। টিআইবি রিপোর্টে বাংলাদেশ চারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।আমাদের দেশে দুর্নীতির খতিয়ান তেমনি প্রকাশ্যে কোনো রিপোর্ট দেখা যায় না। তবে দুর্নীতিমুক্ত ভারত করতে গেলে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হওয়া দরকার।দুর্নীতির কবলে পড়ে আজ দেশ অবনতির রথ দেখছে।দুর্নীতি বিষয়ে  নিজে গবেষণা করে যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি, তা আজ আমার কলমে তুলে ধরবো।মানুষ কেন দুর্নীতি করে তার উত্তর খুঁজতে ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মানসিকতা, শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। ব্যক্তি ও সমাজ এ দুয়ের পারস্পরিক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার মাঝেই দুর্নীতির উদ্ভব এবং বিস্তার হয়। তাই ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে কী কী উপাদান দুর্নীতির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে তা উদঘাটন করে সেগুলোকে দুর্নীতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যেমন-১. ঐতিহাসিক কারণ, ২. অর্থের মূল্যস্তর বৃদ্ধি, ৩. অপর্যাপ্ত বেতন, ৪. রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ত্রুটি, ৫. অপরাধ দূরীকরণে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের অভাব, ৬. আইন সম্পর্কে জনগণের সচেতনতার অভাব, ৭. অর্থের মাপকাঠিতে সামাজিক মর্যাদা নিরূপণ প্রবণতা, ৮. ব্যক্তিগত লোভ-লালসা ও ৯. ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। অন্যদিকে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে কেউ কেউ ধর্মীয় শিক্ষা ও জনগণের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বস্তুত দুর্নীতির প্রতিকার, প্রতিরোধ ও সংশোধনের জন্য কার্যকর সামাজিক নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং জনমত গড়ে তুলতে হবে। আর এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় আনা যেতে পারে- যেমন : দুর্নীতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা তথা শিক্ষা কৌশল, বিভিন্ন প্রদর্শনমূলক অনুষ্ঠানমালা, সাহিত্য ও বিচিত্রানুষ্ঠান, স্লোগান, পথযাত্রা, রেডিও-টিভি, ছায়াছবি, দুর্নীতিবিরোধী পোস্টার এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। নি¤েœ দুর্নীতি মোকাবেলায় আরো কিছু পদক্ষেপ সম্পের্কে তুলে ধরা হলো- ১. দুর্নীতিবিরোধী চিন্তাচেতনার বিকাশ ও বিস্তার ঘটানো। ২. আন্দোলন পরিচালনার জন্য সংগঠন গড়ে তোলা। ৩. নেতৃত্ব ও সংগঠনের প্রতি জনগণের সমর্থন ও আস্থা অর্জন করা। ৪. দুর্নীতি মোকাবেলায় গঠিত সংগঠনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ৫. ক্ষমতা ও কার্যকারিতা বিবেচনায় দুর্নীতি মোকাবিলায় অধিকতর ফলদায়ক উপায় ও পন্থা নির্বাচন। ৬. গৃহীত উপায় ও পন্থার প্রতি জনসর্থন যাচাই ও প্রয়োজনে সংশোধন। ৭. জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলায় কার্যকর পন্থা ও উপায় কার্যকরকরণ। ৮. মূল্যায়ন ও কার্যকারিতা স্থায়ীকরণ। ৯. ধর্মীয় বিধানাবলি প্রচার ও কার্যকর করা। ১০. দুর্নীতিবিরোধী সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করা। ১১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ১২. দুর্নীতিবাজদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা। ১৩. দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করা। ১৪. দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ বা সামাজিকভাবে বয়কট করা। ১৫. দক্ষ তদন্তকারী এবং সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা। ১৬. দুর্নীতি দমন কমিশনকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা এই দেশে খুব প্রয়োজন বলে মনে হয়।তবে দুর্নীতিমুক্ত করার মত মানসিকতার লোক এ দেশে খুজেঁ পাওয়া বড় মুশকিল ।দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব ও এর কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অপরিহার্যতার স্বীকৃতি পাওয়া যায় রাজনৈতিক ও সরকারি প্রতিশ্রুতিতে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার, সরকারের বাৎসরিক বাজেট বক্তৃতা, বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি  কৌশলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের গুরুত্বের স্বীকৃতির পাশাপাশি সুস্পষ্ট অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ থাকে।তবে সমস্যা হয়, যখন এসবেরই সমর্থনে ও সহায়ক ভূমিকার প্রয়াসে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে দুর্নীতিবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন বা প্রকাশ করা হয়। সরকার ও রাজনৈতিক মহলসহ ক্ষমতাবানদের একাংশ একধরনের অস্বীকৃতির মানসিকতা, সমালোচনা সইবার সৎ-সাহসের ঘাটতি, সমালোচক মাত্রই শত্রু, সমালোচক কখনো শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না এরূপ ভাবধারায় আবদ্ধ থেকে বার্তাবাহককে স্তব্ধ করার প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। আর যাই ঘটেছে যাক না কেন এই বাংলাতে।বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সর্বদা সজাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে।বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়’ কিংবা ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’- গানের এ কথাগুলো অনেক আগের হলেও আমাদের মনকে সব সময় নাড়া দেয়। বাংলা তথা বাংলাদেশ ও ভারতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। এ ত্যাগ-তিতিক্ষা আমাদের একান্ত নিজস্ব এবং এ নিজস্বতাকে বাঁচিয়ে রাখবে বংশপরম্পরায়, বছরের পর বছর, এমনকি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। এটি কোনোভাবে মুছে ফেলার নয়। এ ধরণী সত্যি সত্যি পুষ্পে ভরা। ফুল যেমন নিষ্পাপ, পবিত্র, অন্যকে বিলিয়ে দেয়, তেমনি এ দেশের মানুষ তাদের মনুষ্যত্ব ও মমতা অন্যকে বিলিয়ে দেয়। প্রতিবছর হিসাব করলে আমরা দেখতে পাই অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে ও জীবনযাত্রার মানও উন্নত হচ্ছে। শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সাফল্য বিশ্বের কাছে আমাদের বাংলাদেশের নাম তলাবিহীন ঝুড়ির পরিবর্তে পরিশ্রমী জাতি হিসেবে গণ্য করছে। এই তো মাত্র দুই মাস আগে আমরা আইটির ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি। তবে এত কিছুর পরও আমরা যেন পেছনের দিকে হাঁটছি। রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতাকে বাদ দিলে আমরা যে খুব খারাপ অবস্থায় থাকি, তা বলা যাবে না। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়নের সূচক নিম্নমুখী। তার মধ্যে দুর্নীতি অন্যতম। আজকের দিনের অঙ্গীকার হওয়া দরকার,  দুর্নীতিমুক্ত সমাজ আমাদের গর্ব । এটাই চাই সৎ সাদাসিদে মানুষেরা। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ করতে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের।

আরও পড়ুন ::

Back to top button