টলিউড

আজকের দিনেই জাগতিক ভ্রমণ শেষ করেছিলেন Satyajit Ray

আজকের দিনেই জাগতিক ভ্রমণ শেষ করেছিলেন Satyajit Ray - West Bengal News 24

মায়ের আদরের মানিকের চোখ দুটি গোল গোল, কান দুটি বড়, মাথায় এক ঝাঁকড়া চুল। যেন বাংলার শিল্প শহরে এক সাধকের আবির্ভাব। বলছি সত্যজিৎ রায়ের কথা।

শৈশব থেকে তার চলনে-বলনে, পোশাকে-আশাকে এমন এক সৌন্দর্য ছিল, যা মননশীল আভিজাত্যে পূর্ণ। তার পুরো পরিবার ছিল সাহিত্য মনা। সত্যজিৎ রায়ের কাজের মাধ্যমে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে উপস্থাপিত হয়েছে অনবদ্যভাবে। আজ (২৩ এপ্রিল) তার ২৯ তম প্রয়ান দিবস। ১৯৯২ সালের আজকের দিনেই জাগতিক ভ্রমণ শেষ করেন তিনি।

সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে। তার বাবা প্রসিদ্ধ শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। তার ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন সুপরিচিত লেখক, চিত্রকর ও দার্শনিক। সে সময় তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম আন্দোলনের একজন নেতা। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর মায়ের সান্নিধ্যে বড় হন। তার বেড়ে উঠার অন্যতম অনুপ্রেরণাও ছিলেন মা সুপ্রভা দেবী। মা-ছেলের সম্পর্কের দিকটা সত্যজিৎ ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার ‘অপরাজিত’ সিনেমায়।

সত্যজিৎ পড়তে চেয়েছিলেন ইংরেজি সাহিত্যে। বাবার বন্ধুর কারণে পড়তে হয়েছে অর্থনীতিতে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় তার মন বসেনি। তারপরও কলেজ পর্ব শেষ করে মায়ের কথা রাখতে তাকে যেতে হয় শান্তিনিকেতনে। চারুশিল্প হিসেবে চিত্রকলা বিশেষ টানত না তাকে।

‘স্কুলজীবন থেকে সুপরিচালিত, সু-অভিনীত ও সু-বিজ্ঞাপিত হলিউডি সিনেমা দেখে বেড়ে ওঠা, তারকা প্রথা আর স্টুডিও ব্যবস্থার গুণগ্রাহী তরুণ সত্যজিতের সামনে খুলে গেল সিনেমা আস্বাদনের এক বিকল্প পথ। শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাগারে সত্যজিৎ খুঁজে পেয়েছিলেন চলচ্চিত্র বিষয়ে বই। সত্যজিৎ পরিচালক জীবনের নানা পর্বে নানা কথোপকথনে বইগুলোর উল্লেখ করেছেন। বলেছেন এসব পড়ে সিনেমার শিল্পরূপ বিষয়ে আগ্রহী হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সির ডিগ্রি তার কোনো কাজে আসেনি। শান্তিনিকেতন নিয়েও খুব উচ্ছ্বসিত হননি কখনও।’ (শিক্ষানবিশের পাঠক্রম/ সোমেশ্বর ভৌমিক)

বলা যায়, সিগনেট সংস্করণ ক্ষীরের পুতুলের জন্য অলংকরণ দিয়েই সত্যজিতের গ্রন্থ চিত্রণের শুরু। সেই সংস্করণে সত্যজিতের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিল্পী সত্যজিৎ রায় বলে। এও বলা হয়েছিল যে তার শিল্প প্রতিভা দেখে প্রকাশক মনে করছেন, অলংকরণে তিনি বিশেষ সুনাম অর্জন করতে পারবেন। সিগনেট প্রকাশনের কর্ণধার ডি কে, কিংবদন্তি দিলীপ কুমার গুপ্তের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল।

শিল্পের নানা কাজে সাধারণ থেকে অসাধারণ, ব্যক্তি থেকে হয়ে ওঠেন প্রতিষ্ঠান। যাকে ঘিরে কয়েক দশক ধরে জড়ো হয় শত জিজ্ঞাসা আর রহস্য। পরিণত হয়েছেন কিংবদন্তিতে, তৈরি হয়েছে কম জানা বেশি মানুষের উপাখ্যানে। কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে চিরায়িত বাংলা ভাষা সাহিত্য পাঠকের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে তার সৃষ্ট তুখোড় চরিত্র- ফেলুদা, লালমোহন বাবু, প্রফেসর শঙ্কু, হীরক রাজা। ‘তাড়িনী খুড়ো’ যেন আজও জীবন্ত অনেকের কাছে।

মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে সত্যজিৎ রায়কে ভারত রত্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মৃত্যুর পর তাকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিত করেন ডক্টরেট ডিগ্রী দিয়ে। চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় ফিল্ম ব্যক্তিত্ব হিসেবে এই সম্মান পান সত্যজিৎ রায়।

আরও পড়ুন ::

Back to top button