ঝাড়গ্রাম

বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও নেতাজি-গবেষকের জীবনাবসান

স্বপ্নীল মজুমদার

বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও নেতাজি-গবেষকের জীবনাবসান - West Bengal News 24

ঝাড়গ্রাম: বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও নেতাজি-গবেষক তারাপদ কর চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। একাধারে তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও ঝাড়গ্রামের ইতিহাস গবেষক। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম শহরের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। চল্লিশের দশকে সুভাষচন্দ্র বসু স্বরাজের ডাক দিয়ে ঝাড়গ্রামে সভা করেছিলেন।

১৯৪০ সালের ১২ মে ঝাড়গ্রামের লালগড় মাঠে (এখনকার ঝাড়গ্রাম শহরের দুর্গা ময়দান) নাড়াজোলের কুমার বাহাদুর দেবেন্দ্রলাল খানের ব্যবস্থাপনায় জনসভা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার ও তৎকালীন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই জনসভার প্রতিবেদন সংগ্রহ করে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে গবেষণা করেন তারাপদবাবু। ওইদিন সুভাষচন্দ্র ঝাড়গ্রামের কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন এবং কি-কি করেছিলেন সেই বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য ছিল তাঁর নখদর্পনে।

এ বিষয়ে ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ঝাড়গ্রাম সফর’ নামে একটি গবেষণামূলক বই লেখেন তিনি। তাঁর লেখা ‘অন্তরায়’ উপন্যাসটি একসময় পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছিল। ববাবরই বাউন্ডুলে প্রকৃতির তারাপদবাবু ছিলেন চিরচঞ্চল। ১৯৪৬ সালে অধুনা বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে তাঁর জন্ম। বাবা ছিলেন রেলকর্মী। বাবার চাকরির সূত্রে দেশভাগের আগেই পূর্ববঙ্গ থেকে ঠাঁইনাড়া হয়ে ঝাড়গ্রামে চলে আসেন তারাপদবাবু।

ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশন থেকে নবম-দ্বাদশ উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। সত্তরের দশকে বিহারে রেলে চাকরি পান। তবে ওই চাকরি বেশিদিন করেননি। ফিরে আসেন ঝাড়গ্রামে। বিভিন্ন ভবনের নক্সা এঁকে উপার্জন শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতা।

মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। এছাড়াও ‘বসুমতী’, ‘যুগান্তর’-এর মত দৈনিক সংবাদপত্রে ফ্রি-ল্যান্স জার্নালিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। অবিবাহিত তারাপদবাবু সাইকেল নিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে ঘুরে বেড়াতেন। চায়ের আড্ডায় তাঁর কাছে ঝাড়গ্রামের পুরনো ইতিহাস শোনার জন্য ভীড় করতেন উৎসাহীরা।

নিজে ঝাড়গ্রাম থেকে বেশ কিছুদিন ‘সত্যজিৎ’ নামে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। নিজেই ছিলেন ওই পত্রিকার সম্পাদক। শেষ জীবনে বছর খানেক গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। অর্থকষ্টেও ছিলেন। শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তারাপদবাবু বাড়ি ছেড়ে যেতে চাননি। শুক্রবার দুপুরে ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে!

তাঁর মৃত্যুতে ঝাড়গ্রামের সাংবাদিকতার একটি যুগের অবসান হল।

আরও পড়ুন ::

Back to top button