প্রযুক্তি

স্মার্টফোনের স্মার্ট ব্যবহারগুলো জানেন তো? না জানলে এখুনি জেনে নিন

হিটলার এ. হালিম

স্মার্টফোনের স্মার্ট ব্যবহারগুলো জানেন তো? না জানলে এখুনি জেনে নিন - West Bengal News 24

বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছেন, কিছুক্ষণ কথা বলার পর সবারই চোখ আটকে গেলো স্মার্টফোনে। কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কেউ ইউটিউবে, কেউবা ডুবে আছেন সংবাদ পাঠে। এ দৃশ্য এখন পরিচিত। অনুষ্ঠান দেখতে সবাই একসঙ্গে টিভি দেখতে বসলেও দেখা যাবে খানিকপর মন ডুব দেয় ফোনের পর্দায়। স্মার্টফোনের কত্ত ক্ষমতা! আসলে কী তাই? আমরা কি আসলেই স্মার্টফোনের স্মার্ট ব্যবহার করতে পারছি?

সবাই যে ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকে তা নয়। কিংবা বসে বসে গেইমও খেলেন না নিশ্চয়ই। স্মার্টফোনেরও রয়েছে অসংখ্য স্মার্ট ব্যবহার।

যেমন কার্টুনিস্ট আবু হাসান বললেন, ‘স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলি, ভিডিও করে রাখি। পরে সেগুলো অনেক কাজে লাগে। যখন কোনও আইডিয়া মাথায় আসে, স্মার্টফোনে নোট নিয়ে রাখি। কনসেপ্ট আর্টও করে রাখা যায়। অনেক সুবিধা।’

প্রযুক্তি গবষেক আরিফ নিজামী বললেন, স্মার্টফোন দিয়ে মূলত অফিসের কাজই বেশি হয়। এর মাঝে মেইল পাঠানো ও চেক করা প্রধান কাজ। ক্যালেন্ডার অ্যাপটা বেশি কাজে লাগে। কোনও মিটিং থাকলে আগে থেকে নোটিফিকেশন পাই। মিটিংয়ের নোট নিতেও গুগল কিপ ও এভারনোটস অ্যাপ কাজে লাগে। কাগজের মতো এই অ্যাপে আঙ্গুল চালিয়ে আঁকার অপশনও আছে। আবার মুখে বললেই এখন অনেক কাজ সিরি কিংবা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট করে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ার্ক ফর হোমের কারণে ব্যবহার বেড়েছে হোয়াটসঅ্যাপের। ছোট ছোট ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে দেওয়া যায়। লম্বা সময় কথা বলার জন্য ডিস্কোর্ড অ্যাপ কাজে লাগে। দেশ বিদেশের খবর পড়া এবং ব্রেকিং নিউজের অ্যালার্টও পাই ফোনে। কাজের জন্য ছোটখাটো ভিডিও তোলা, তার সঙ্গে ক্যানভার মতো অ্যাপ দিয়ে ছোটখাট গ্রাফিক ডিজাইনের কাজও করা যায়।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের আইকন আল আমীন কবির জানালেন, তার হাতের স্মার্টফোনটিই এখন সব। রীতিমতো কম্পিউটারের বিকল্প। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে না বসে মোবাইল দিয়েই তিনি কঠিন কঠিন সব কাজ করে ফেলছেন মুহূর্তেই।

তরুণরাই এগিয়ে
শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, পড়ালেখার কাজেও স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তরুণরা। ফিটনেস, খেলাধুলার আপডেট, অনলাইনে খবর পড়াসহ অন্য অনেক কাজে তরুণদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়।

বেশ কয়েকজন তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের সময় স্মার্টফোনে বেশি সময় ব্যয় করছেন তারা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে অনলাইন ক্লাসে। অবসরে ওয়েব সিরিজ, সিনেমাও দেখা হয় বলে জানালেন কেউ।

সদ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া মাহমুদুল হামিদ কোমল বলেন, ‘কাজে যোগ দেওয়ার আগে স্মার্টফোনে ইউটিউব দেখে অনেক কিছু শিখেছি। এখন কাজের জন্যই ফোন ব্যবহার করতে হচ্ছে। মেইল পাঠানো, অফিসে যোগাযোগ করা এবং লেখালেখির কাজগুলো ফোন দিয়েই সারছি।’

পড়ালেখার কাজেই স্মার্টফোন বেশি ব্যবহার করছেন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী জেসিকা ইসলাম হৃদি। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকেই কলেজ বন্ধ। শুরুর দিকে ইউটিউবেই সময় কাটাতাম। কিন্তু যখন কিছু সময় পার হলো তখন আমি অনলাইনে বেশ কয়েকটা কোর্স শুরু করি। এখন স্মার্টফোনে পড়াটাই বেশি হচ্ছে।

স্মার্টফোনকে শরীরচর্চার কাজেও ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। তেমনই একজন সাব্বির হাসান রিটু। রিটু বলেন, লকডাউনের কারণে ওজন অনেক বেড়ে গিয়েছিল। স্মার্টফোনে ফিটনেস অ্যাপের সাহায্য নিয়ে শরীরচর্চা করছি। অ্যাপের কারণে শরীরচর্চায় মনোযোগ বেড়েছে।

স্নাতক শিক্ষার্থী আরিয়া মালিয়াত বলেন, করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে বাসাতেই আছি। বেশি সময় কাটছে ইউটিউবে। সেখান থেকে নিজের পছন্দের অনেক কিছু শিখছি। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

পথ চেনাবে ফোন
গুগল ম্যাপ চেনেন না এমন মানুষ এখন পাওয়া কঠিন। ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপটি লোকেশন ট্র্যাকিং এবং ট্রাফিক দেখার জন্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ধরা যাক, কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ দরকার। প্রতিষ্ঠানটির সাপ্তহিক ছুটি কবে, কতোক্ষণ খোলা থাকে, ফোন নম্বর কী, সবই এখন গুগল ম্যাপে পাওয়া যাবে।

আবার কোনও লোকেশন একেবারে অপরিচিত হলেও ক্ষতি নেই। স্ট্রিট ভিউ’র সাহায্যে পুরো মানচিত্র তো পাবেনই, প্রতিষ্ঠানটির আশেপাশে কী আছে সেটাও দেখতে পাবেন।

গুগল ম্যাপের সুবিধা আছে আরও। চলন্ত অবস্থায় গাড়ির গতিবেগ থেকে শুরু করে ট্রেন ও বাস ছাড়ার সময়, শর্টকাট রাস্তা, কোথায় জ্যাম আছে ও ট্রিপে যাওয়ার আগে রিমাইন্ডার সেট করা সহ লাইভ ভিউ দেখারও ব্যবস্থা এখন যোগ হয়েছে।

সন্তানের নিরাপত্তায়
সন্তানের অবস্থান জানাতে আছে নানা ধরনের প্যারেন্টিং অ্যাপ। ট্র্যাক্স প্লে, হিরো জিপিএস বা টেনসেন্ট কিউকিউ ওয়াচ-এর মতো অ্যাপসের মাধ্যমে শিশুদের ট্র্যাক করা যায়। সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে, কতক্ষণ থাকছে, এগুলো স্মার্টফোন দিয়ে সহজেই ট্র্যাক করা যায়। অবশ্য এর জন্য সন্তানের কাছেও একটি ইন্টারনেটযুক্ত ফোন থাকা চাই।

ব্যাংক এখন স্মার্টফোনে
ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু থাকলে হাতের স্মার্টফোনটিতেই সারা যাবে যাবতীয় ব্যাংকিং। ব্যাংকের নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসে ব্যালেন্স জানা, টাকা ট্রান্সফার, মোবাইলে রিচার্জ বা মোবাইল ওয়ালেটে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানো যাচ্ছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button