মতামত

বাঙালি জাতি হত্যা ও বাংলা ভাষা মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শির সোজা রেখে লড়াইয়ের নাম শিলচর

শ্রী অন্নদাশংকর দোলই

বাঙালি জাতি হত্যা ও বাংলা ভাষা মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শির সোজা রেখে লড়াইয়ের নাম শিলচর - West Bengal News 24

শিলচর নিয়ে কথা বলার আগে আমাদের বেশ কিছুটা অতীতে গিয়ে ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে হবেই তবেই এর মূল সমস্যার গোড়া পত্তন করা যাবে।

তবে প্রথম এবং স্পষ্ট কথা আসামের বাঙালিরা বহিরাগত নয় তারা আসামের ভূমিপুত্র।১৮২৬ সালে ইংরেজরা তৎকালীন কামরূপ রাজ্য দখল করে যার শাসনকর্তা ছিল আহোমরা ।তার পার্শবর্তী রাজ্য কাছাড় ১৮৩২ সালে ইংরেজরা দখল করে তখন ঐ রাজ্যের সরকারি ভাষা ছিল বাংলা এবং প্রায় সমস্ত অধিবাসী ছিলেন বাঙালি।এর পরবর্তীতে ইংরেজরা আসাম রাজ্যের গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ১৮৭৪ সালে,রাজ্য গঠনের পরেই এই রাজ্য আর্থিক ঘাটতি রাজ্যে পরিণত হয়।এই রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অবিভক্ত বঙ্গের শ্রীহট্ট ,গোয়ালপাড়া এবং কাছাড় রাজ্যকে আসামের অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিটিশ শাসকরা।সেদিন সেই সংযুক্তির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিল শ্রীহট্ট ও গোয়ালপাড়ার বাঙালিরা(ব্রিটিশ আমলের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির নথি ঘাঁটলেই তথ্য পরিষ্কার)।ব্রিটিশরা নবগঠিত রাজ্যের নাম রাখল আসাম। কেন? কোনও ব্যাখ্যা নেই।

১৮৭৪ সাল, যখন আসাম বলতে ছিল শুধু ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর,কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই,হাজার,হাজার মানুষ মরছে,স্কুল-কলেজে নেই,রাস্তাঘাট নেই সেই করুন অবস্থা থেকে শ্রীহট্ট ,কাছাড় ও গোয়ালপাড়া যুক্ত করার পর আসামে স্কুলকলেজে,হাসপাতাল, রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হল।আসাম উন্নয়নের পথে পা বাড়াল।কর অর্থে? বাঙালির অর্থে নয় কি? কিছু বছরের মধ্যেই আসাম আর্থিক উদ্বৃত্ত রাজ্যে পরিণত হল। শুধু আসামের মধ্যেই বাঙালির অবদান সীমাবদ্ধ নয় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অসমীয়া ভাষায় স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো চালু করলেন।প্রসন্নকুমার ঘোষ অসমীয়া সাহিত্য বিকাশের জন্য আসাম সাহিত্য সভা গঠন করেন।

বাঙালি জাতি হত্যা ও বাংলা ভাষা মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শির সোজা রেখে লড়াইয়ের নাম শিলচর - West Bengal News 24

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসামের কবি লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার সাথে নিজের ভাইঝির বিবাহ দিয়ে বাংলা অসমীয়া সংস্কৃতির মেলবন্ধনের পথ প্রশস্ত করেন। ১৯১১ সালে আসামের জনসংখ্যা ৩৮ লক্ষ ৪৯ হাজার(বাঙালি – ১৭.৫৮ লক্ষ, অসমীয়া-৮.৩৫ লক্ষ,পার্বত্য জনজাতির ভাষা – ১০.২১ লক্ষ, অন্যান্য- ২.৩৫ লক্ষ),অর্থাৎ বাঙালি অসমীয়া দের থেকে দ্বিগুণ সংখ্যাগরিষ্ঠ।১৯৩৮ সালে যখন আসামে মুসলীম লীগ সরকার ছিল তখন বিধানসভায় বাঙালি প্রতিনিধি বেশি রেখেও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু গোপীনাথ বরদলই (অসমীয়া) কে আসামের মুখ্যমন্ত্রী করেন। নেতাজীর পক্ষে গিয়েই অরুনকুমার চন্দ বরদলই নিজের নাম প্রত্যাহার করেন।অলিখিত শর্ত ছিল  এবছর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী হলেন পরের বার সুরমা উপত্যকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী হবেন এইভাবে পর্যায়ক্রমে চলবে।

১৯৪৬ সালের নির্বাচনে সেই শর্ত উপেক্ষিত হল।বাঙালি অধিকার থেকে বঞ্চিত হল।শ্রীহট্ট জেলাতে অনৈতিক একটি গণভোট করে  শ্রীহট্ট কে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হল। এখানেই শেষ নয় অসমীয়া জাতীয়তাবাদ কতখানি উগ্র হয়েছে তার একটি নির্মম উদাহরণ স্বাধীনতা পাওয়ার মাত্র ২৫ দিন আগে গৌহাটিতে একটি জনসভায়  আসামের চিন্তা নায়ক বানিকান্ত বড়ুয়া(অসমীয়া) তাঁর ভাষণে বলেন- অসমীয়া ছাড়া সমস্ত ভাষা গোষ্ঠীর মানুষই বহিরাগত(আসাম ট্রিবিউন ,২০ জুলাই ১৯৪৭)। বলা হয় – সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আসাম কোনোদিনও ভারতের অংশ নয়,১৮২৬ সালে ইংরেজ আসাম দখলের পর যারা ব্যবসা বা অন্যান্য কাজে আসামে এসেছেন তারা সবাই বিদেশী,বহিরাগত।আসামের নেটিভরাই এখন আসামের প্রভু,সরকার তাদের কাছেই দায়বদ্ধ বাঙালির কোনও মতপ্রকাশের অধিকার নেই।

যদি বাঙালি অনুগত হয়ে কিছু চায় তাহলে অসমিয়ারা তাদের দয়া করলেও করতে পারে।দেশ বিভাগকে সামনে রেখে শ্রীহট্টের বাঙালি কর্মচারী যারা ভারত Opt. করেছিল,সেই কর্মচারী দের দেশ বিভাগের পরেই কর্মচ্যুত করা হয় এর প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলইয়ের সাথে কর্মচারীদের Mother Administration দেখা করলে তিনি বলেন ” Assam is for Assamese” এই বক্তব্যের উত্তর দিয়েছিলেন স্বয়ং গান্ধীজী তিনি বলেন: “If Aasam is for Assamese,India belongs to whom?”

এরপর বাঙালির জীবনে নেমে এল ঘোর অমানিশা। সোনার আসাম গড়ে তোলা বাঙালি হয়ে গেল অবাঞ্ছিত নাগরিক,১৯৪৭ সালে যেখানে গোয়ালপাড়া অঞ্চলে ৩০০ টি বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল সেখানে এখন ৫ টিও স্কুল নেই। সব অসমীয়া স্কুলে পরিণত হয়েছে।

এই অবিচার সহ্য করেও বাঙালি দেশের স্বার্থে মানিয়ে নিয়েছিল তারপর হল আরও এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ১৯৫১ সালের স্বাধীন ভারতের জনগণনা রিপোর্ট প্রকাশিত হল তাতে দেখা গেল ৪০ লক্ষ বাঙালি কমে হয়েছে ১৭ লক্ষ,আর ২০ লক্ষ অসমীয়া বেড়ে হয়েছে ৪৯ লক্ষ। স্বয়ং সেন্সাস সুপার এই তথ্যে বিস্মিত হন। আগ্রাসী অসমীয়া জাতীয়তাবাদের উগ্র কামনা ১৯৬০ সালে নগ্ন রূপ দেখতে শুরু করল।অসমীয়া ভাষাকে একক সরকারি ভাষা করার আন্দোলন শুরু হল সারা আসাম জুড়ে। বাঙালির গৃহদাহ,বাঙালি বধূ ধর্ষণ,শিশুহত্যা, নরহত্যা,লুটতরাজ মাধ্যমে বন্য তাণ্ডব চলতে থাকে সারা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জুড়ে।

এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সরকারি বিবৃতিতে তৎকালীন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ বলেন-“About 13195 houses, mostly thatched in rural areas,were burnt or damaged and 40 persons were killed. About 1625 families were affected. A large number of these who left their places of residence were evacuated in camps within the state and some left for West Bengal…”এটা শুধু সরকারি হিসেব যারা আশ্রয় শিবির যায়নি নিজেদের ক্ষমতা মত অন্য কোথায় পাড়ি দিয়েছে বা আত্মীয় বাড়ি চলে গেছে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি।

এমতাবস্থায় ,১৯৬০ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে নিখিল আসাম বাংলাভাষা সম্মেলন। এই সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশনে পৌরহিত্য করেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সাংসদ চপলাকান্ত ভট্টাচার্য। সমগ্র আসামের শত শত নেতৃস্থানীয় বাঙালি প্রতিনিধি যোগদান করেন।দাবি ছিল বাংলাকে আসামের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা করা হোক।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিমালাপ্রসাদ চালিহা দাঙ্গাকারীদের কাছে নতি স্বীকার করলেন, বিধানসভায় পেশ হল অসমীয়া ভাষা বিল। অবাক ব্যাপার হচ্ছে , এই চলিহা নিজের কেন্দ্র উপর আসাম(Upper Assam) থেকে ভোটে পরাজিত হন কিন্তু কাছাড়ের বদরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বাঙালিরা তাঁকে নির্বাচিত করে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন থাকতে সাহায্য করে। সেই চালিহার এটাই হল বাঙালিদের প্রতি শ্রেষ্ঠ উপহার। ভাষা হত্যা সম্পূর্ণ হল একক অসমীয়া ভাষা বিল পাস হল ।বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা তো ছিলই বিপুল সংখ্যক পার্বত্য জনজাতি দেরও ভাষাকেও বিসর্জন দেওয়া হল।

এই বিল পাশ হওয়ার পর কাছাড়ের মানুষের কাছে আন্দোলন ছাড়া কোনও রাস্তাই আর খোলা রইল না। ৫ ফেব্রুয়ারি,১৯৬১ করিমগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় জনসম্মেলন গঠিত হয় গণসংগ্রাম পরিষদ।চার মাসের নিবিড় জনসংযোগের গঠিত হয় এক দুর্বার বাঙালি সত্যাগ্রহী বাহিনী। ১৯ মে ,১৯৬১ গণ সংগ্রামের প্রথম দিনই বেলা ২:৩৫ , শান্তিপূর্ন নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর চলল পুলিশের গুলি, শহিদ হলেন ১১ বাঙালি ভাইবোন ১.কমলা ভট্টাচার্য ২.শচীন্দ্র পাল ৩. হিতেশ বিশ্বাস ৪.সুকোমল পুরকায়স্থ ৫. সত্যেন্দ্র দেব ৬.কানাইলাল নিয়োগী ৭.বীরেন্দ্র সূত্রধর ৮.চণ্ডীচরণ সূত্রধর ৯. তরণী দেবনাথ ১০. সুনীল সরকার ১১. কুমুদ দাস। এই ঘটনা স্বাধীন দেশে দেশবাসী দের একটি অংশকে দমিয়ে রাখার এবং আসামে বাঙালি বিদ্বেষের এক জ্বলন্ত প্রমাণ।

১৭ জুন পর্যন্ত আসাম পুলিশ আন্দোলন অচল করে রাখে নির্মম অত্যাচার করে। ঐ সময়ই দুর্গাপুরে নিখিল ভারত কংগ্রেসের অধিবেশন হয় সেখানে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু,মোরারজি দেশাই,লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সহ সমগ্র কংগ্রেস নেতৃত্ব এক মিনিট নীরবতা পালন করে শিলচরের ভাষা শহিদ দের শ্রদ্ধা জানান ।সারা ভারতে অনুষ্ঠিত কোনও গণ আন্দোলন সম্পর্কে এই নজির নেই। পরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর দৌত্যে আসাম সরকার নতিস্বীকার করে এবং কাছাড়ের(বরাক উপত্যকা) সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।

তবে আসামের বাঙালিদের ভাগ্যে এই আইন বেশিদিন টেকেনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ আবার শিক্ষার মাধ্যম প্রশ্নে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল আসাম। মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার হনন এবং বাঙালিকে চিরতরে পঙ্গু করে অনুগত আশ্রিত, পরজীবী করে তোলার প্রয়াস শুরু হল আবার। বাঙালি কখনই অসমীয়া ভাষার বিরোধিতা করেনি কিন্তু মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার লাভ করার জন্যই তার চিরকালের সংগ্রাম আপন দেশেরই সাথে, যাদের রক্তে এই দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল।

২৬ মার্চ,১৯৬৭ গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের,অসমীয়া ও ইংরেজি এই দুই ভাষায় শিক্ষা পদ্ধতি পরিচালনার প্রস্তাব দিলেন।১৯ ফেব্রুয়ারি,১৯৭২ একাডেমিক কাউন্সিল অসমীয়া ও ইংরেজিতে পঠনপাঠনের সিদ্ধান্ত নিলেন। ৬ জুন,১৯৭২ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেও একই সিদ্ধান্ত হল পরীক্ষা অসমীয়া বা ইংরেজিতেই দিতে হবে রাজ্য ভাষা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাছাড়ের মানুষের লড়াই করে পাওয়া অধিকার খর্ব করা হল। ৭ জুন,১৯৭২ The Assam Tribune পত্রিকাতে সম্পাদকীয় তে প্রকাশিত হল বাঙালি প্রধান কাছাড় জেলাই আন্দোলনের মূল তাই ওই জেলাকে রাজ্য থেকেই বাদ দেওয়া হোক।

১৮ জুন,১৯৭২ শিলচরের পৌর সভাপতি দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্তের আহ্বানে , পৌর সহ সভাপতি হরিদাস দেবের পৌরহিত্যে,শিলচর শহরে রাজ্য সরকার ও গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী কাছাড়ের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার সদিচ্ছা প্রকাশ করার পর আন্দোলন বন্ধ হয়।

এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও অনেক আন্দোলন , ধর্মঘট,হরতাল,ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হয়। ২২ সেপ্টেম্বর,১৯৭২ শিলং- এ শরৎ চ্ন্দ্র সিংহের সভাপতিত্বে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সভায় বাংলাভাষী কাছাড় জেলায় একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১৪,১৯ এবং ৩০ ধারায় গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে সুপ্রীম কোর্ট কার্যকরী না করার নির্দেশ দেন। ২৯ সেপ্টেম্বর,১৯৭২ পৃথক কাছাড় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য বিধানসভায় যে বিল পাশ হয় তার বিরোধিতা করে অসমীয়া ছাত্র সংগঠন ‘ সদৌ অসম ছাত্র সংস্থা(আসু)’ প্রতিবাদ দিবস পালন করে।

বাঙালির অধিকারের বিরুদ্ধে অসমীয়া আগ্রাসন আবার স্পষ্ট হয়। ১ অক্টোবর,১৯৭২ মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি শিলচর শহরে “সমগ্র কাছাড় জেলা গণতান্ত্রিক কনভেনশন” আহ্বান করেন এবং বাংলাকে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে রাখার জন্য আন্দোলন করে। ৫ অক্টোবর,১৯৭২ আসু সমগ্র রাজ্যব্যাপী বনধের ডাক দেয় আবার ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নিরপরাধ বাঙালির উপর শুরু হল অত্যাচার ,ঘরবাড়ি জ্বালান,লুঠ শুরু হল,পুলিশি সহযোগিতায় অবাধ ধর্ষণ,খুন চলতে থাকল। বাঙালি নিজ দেশেই আবার উদ্বাস্তু হল এবং লামডিং, ডিমাপুর,আলিপুরদুয়ার,কাছাড় এইসব এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিলেন। ১৪ অক্টোবর বকপাড়া চা বাগানে ঘাতকের হতে নিহত হলেন ড: মণীশ দাস।

বাঙালি জাতি হত্যা ও বাংলা ভাষা মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শির সোজা রেখে লড়াইয়ের নাম শিলচর - West Bengal News 24
শ্রী অন্নদাশংকর দোলই

হত্যাকাণ্ডের সাক্ষীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় কিন্তু তার আর খোঁজ মেলেনি। ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্যবক্ষণে আসেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ,তারপর আসেন জগজীবন রাম, রামনিবাস মির্ধা প্রমুখ মন্ত্রী সমুহ।তাতেও হত্যালীলা থামানো গেল না। নীলাচল পত্রিকায় আসুর আন্দোলনকে সমর্থন করে কাছাড় কে আসাম থেকে বাদ দেওয়ার দাবি আবার উত্থাপিত হয়।আসামের সংবাদ পত্র গুলো এইসময় এই নির্মম অত্যাচারকে সমর্থন করে এবং আসাম সরকার কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা গুলোকে নিষিদ্ধ করে দেয়। এরপরও রয়েছে অনেক অত্যাচার,আন্দোলন ,গণ সংগ্রাম তাতেও অসমীয়া আগ্রাসন বাঙালির রক্তের উপর দিয়ে এখনও বয়ে চলেছে।বরাক উপত্যকা বঙ্গাসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের নেতৃত্বে গণ আন্দোলনের ফলে ১৯৮৯ সালে কাছাড়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিল পাস হয় এবং ১৯৯৪ সালে বাঙালি এবং অন্য সংখ্যালঘু ভাষাভাষী দের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কিন্তু আদপে সেখানে বাংলা বা অন্য ভাষার কতটা অধিকার আছে তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে…আর কত নিজের দেশেই জাতিবিদ্বেষী দের স্বীকার হতে হবে বাঙালিকে।

ভারতের অন্য রাজ্যের শিক্ষিত বাঙালিরাই বা এটা নিয়ে চুপ কেন তারা কি গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন নাকি রাষ্ট্রের নির্মম পরিহাসে খাঁড়ার ভয়ে তারা মুখ বুঁজে আছেন? আগে ভারতীয় পরে বাঙালি বলে আসামে বাঙালিরা ছাড়া পাননি ,হয়তো পরের বারে আঘাত টা আপনার উপর পড়বে। তাই নিজের অধিকারের প্রতি সজাগ হোন। আমরা ভারতীয় তা অন্য জাতি বা তথাকথিত দেশপ্রেমিক দের কাছে জাহির করার কোনও প্রয়োজন নেই। দেশের সব জায়গায় বাঙালির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হোক সেই লড়াই বাঙালিকেই করতে হবে।অন্য রাজ্যের জাতিরা যদি নিজেদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে তাহলে আমাদের দাবি কি একেবারেই অর্বাচীন? আপামর বাঙালির কাছে প্রশ্নটা থাকল আমার পক্ষ থেকে।
জয় হিন্দ, জয় বাংলা।

– তথ্যসূত্র “ভাষা ও ভাষা আন্দোলন” শীর্ষক পুস্তক টি,এছাড়াও ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন নথি,বই পত্র।

বিশেষ ধন্যবাদ: আমার বাবা।

লেখক : শ্রী অন্নদাশংকর দোলই, সদস্য ও ঐক্যযোদ্ধা, ঐক্য বাংলা

আরও পড়ুন ::

Back to top button