রাজ্য

ধনকর কেন নারদ মামলায় সাক্ষী! প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল

ধনকর কেন নারদ মামলায় সাক্ষী! প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল - West Bengal News 24

প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল। প্রশ্নের মুখে জগদীপ ধনকর। প্রশ্নের মুখে সিবিআই-ও। আর সেই প্রশ্ন ঘুরছে বাংলা তথা দেশের আইনজীবি মহলেও। নারদ-তদন্তে চার নেতা-মন্ত্রী এবং এক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই, তাতে বেনজির ভাবে সাক্ষী তালিকায় নাম রয়েছে বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের।

মোট ৬১জন সাক্ষীর তালিকায় ৫২তম সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে ধনকরের নাম। এই ঘটনাকে কার্যত নজিরবিহীন বলছেন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, যিনি চার্জশিট পেশে অনুমতি দেন তিনিই কীভাবে সাক্ষী থাকেন? তাহলে কী চার্জশিটে অনুমোদন দেওয়ায় তাঁকে সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়েছে? এর আগে রাজ্যে কোনও মামলায় রাজ্যপালকে সাক্ষী হিসেবে দেখা যায়নি।

যদিও সাক্ষ্যগ্রহণের সময় প্রয়োজনে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়বেন কি না রাজ্যপাল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে বিতর্ক ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন নারদ মামলা আদতে গেরুয়া শিবিরেরই বড় ষড়যন্ত্র যার নেপথ্যে রয়েছে বাংলার ক্ষমতা দখলের দুর্দমনীয় ইচ্ছা।

২০১৭ সালে নারদ স্টিং অপারেশন মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সেই মামলাতেই গত সোমবার রাজ্যের চার নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। ওই দিনই বিশেষ সিবিআই আদালতে চার্জশিট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

সেখানে সাক্ষীর তালিকায় রাজ্যপালের নাম থাকায় এখন চাঞ্চল্য ছড়িয়েচ্ছে বাংলা তথা দেশের আইনজীবিদের মহলে। প্রশ্ন উঠেছে এই মামলায় আদৌ কি সাক্ষ্য দিতে পারেন রাজ্যপাল? তাঁকে কী ভাবেই বা সাক্ষী তালিকায় রাখা যায়? তাঁকে কি জবাবদিহি করতে হতে পারে আদালতের কাছে? অনেকে অবশ্য মনে করছেন, রাজ্যপালকে সাক্ষী তালিকায় রেখে আদতে মামলার গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে যাতে প্রয়োজনে মামলা ভিন্ন রাজ্যে সরিয়ে নিতে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।

রাজ্যের আইনজীবি মহলের অনেকেই এই ঘটনাকে কার্যত বেনজির ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘এই ঘটনা আদতে সংবিধানের সঙ্গে মশকরা করারই নামান্তর। রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকর্তা।

তিনি গ্রেফতারিতে অনুমোদন দিয়েছেন বলে হয়তো তাঁকে সাক্ষী তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পরে দেশের কোনও রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি।’

যদিও কলকাতা হাইকোর্টের বার কাউন্সিলের অভিমত, বাংলায় এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে কারও জানা নেই। তবে আদালত চাইলে রাজ্যপালকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। রাজ্যপালের সাক্ষ্যগ্রহণে কোনও আইনি বাধা নেই। আদালত চাইলে রাজ্যপালের কাছে বিষয়টি বিশদে জানতে চাইতেও পারে। এমনিতেই চার নেতা-মন্ত্রীর গ্রেফতারি এবং চার্জশিট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল কী ভাবে অনুমতি দিলেন সিবিআইকে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

এরই মধ্যে সিবিআইয়ের সাক্ষী তালিকায় রাজ্যপালের নাম থাকা নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে নারদকাণ্ডে অভিযুক্তরা যে টাকা নিয়েছিলেন সেই টাকা কে কোথায় কীভাবে খরচ করেছেন তার হিসাবে সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে না থাকায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বস্তুত নারদকাণ্ডের প্রথম থেকেই বেশ কিছু অসঙ্গতি সামনে এসেছে। ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল কার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তার কোনও সদত্তর আজও সামনে আসেনি। এমনকি যে ফুটেজ সামনে এসেছে তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

নারদকাণ্ড সামনে আসার পরে মোট ১৩ জনের নামে এফআইআর হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায় কে, কত টাকা নিয়েছেন তা জানানো হয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। হিসাব রয়েছে আইপিএস পুলিশ আধিকারিক মির্জা কত টাকা নিয়েছেন তাও। কিন্তু এটা জানানো হয়নি বাকি অভিযুক্তরা কে কত টাকা নিয়েছেন। এমনকি ধৃত ৫জন সেই টাকা কোথায় খরচ করেছেন তার হিসাবও কোথাও নেই। তার এই সব ঘটনা আর প্রশ্নের জেরেই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠেছে এই ঘটনা আর মামলা কী বাংলার ক্ষমতা দখলের জন্য বড় কোনও যড়যন্ত্র যা দিল্লিতে মোদি-শাহরাই করিয়েছেন! ভবিষ্যতে এই মামলার গতিবিধিতে তা হয়তো আরও সুস্পষ্ট হবে।

সুত্র : এই মুহুর্তে

আরও পড়ুন ::

Back to top button