দঃ ২৪ পরগনা

‘যশ’ কেড়েছে আশ্রয়, সুন্দরবনে বাঘের হানায় প্রান গেল গৃহবধূর

‘যশ’ কেড়েছে আশ্রয়, সুন্দরবনে বাঘের হানায় প্রান গেল গৃহবধূর - West Bengal News 24

অভাবে পেট চলছিল না। তার মধ্যেই হানা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। তাও পেটের তাগিদের স্বামীর সঙ্গে বেড়িয়ে পড়েছিলেন সুন্দরবনের অন্দরে কাঁকড়া ধরতে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় আর ফিরতে পারলেন না তিনি। বাঘের হামলায় প্রাণ হারাতে হল বছর তিরিশের গৃহবধূ ভগবতী মণ্ডলকে। এদিন সকালেই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং মহকুমার সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সজনেখালি রেঞ্জের অন্তর্গত ঝিলা ৪ জঙ্গলের গোলভক্সা খালে। তবে মন্দের ভালো কোনওক্রমে প্রাণে রক্ষা পান ভগবতীর স্বামী ও তাঁদের এক সঙ্গী।

জানা গিয়েছে, গোসাবার সাতজেলিয়া চরঘেরি এলাকা থেকে ঝিলার জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন ভগবতী মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও আরেক সঙ্গী। কাঁকড়া খুঁজতে খুঁজতে চলে যান খালের ভিতরের দিকে। তখনই বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। কোনওক্রমে আড়ালে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান ভগবতীর স্বামী ও ওই সঙ্গী। ততক্ষণে ভগবতীর শরীরে থাবা বসিয়েছে সুন্দরবনের বাঘ। তাঁর দেহটিকে বাঘের মুখ থেকে ছাড়িয়ে বাঘের নাগালের বাইরে নিয়ে যান বাকি দু’জন।

বাঘ সরাসরি মহিলার ঘাড়ে কামড় বসানোয় সেখানেই প্রাণহানি হয় তাঁর। এরপর ভগবতীর দেহ গ্রামে এনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গভীর জঙ্গলে শিকারে যাওয়ার জন্য এই মত্‍স্যজীবী দলটির কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না। যশের প্রবল তাণ্ডবে ভেসে গিয়েছিল বাড়িঘর। বিকল্প আয়ের পথ না থাকায় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন তাঁরা।

আসলে, এই এলাকার খাঁড়ির দিকে গভীর জঙ্গলই মূলত রয়্যাল বেঙ্গলের চারণক্ষেত্র। একইসঙ্গে, খাঁড়ির জলে প্রচুর কাঁকড়াও মেলে। এসব এলাকায় মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু কাঁকড়া কিংবা অন্যান্য প্রাণী শিকারের আশায় হাঁটতে হাঁটতে কেউ কেউ এই ‘নিষিদ্ধ অঞ্চলে’ ঢুকে পড়েন। তাতেই এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন বারবার মত্‍স্যজীবীদের সতর্ক করা সত্ত্বেও তাতে যে লাভ বিশেষ হয় না, ভগবতীর ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল।

ভগবতীর বাড়ি গোসাবা ব্লকের লাহিড়িপুরের চরঘেরি গ্রামে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ভগবতী মন্ডল স্বামী অতিন মন্ডল ও অপর প্রতিবেশী সবিতা মন্ডলকে নিয়ে খুব ভোরে রওনা দেন ঝিলা ৪ জঙ্গলে। নদীর চরে একটি বাঘকে শুয়ে থাকতে দেখেছিলেন ওঁরা। কিন্তু ভেবেছিলেন সেটি মৃত বাঘ। বিশেষ আমল দেননি তাতে। আপন মনেই কাঁকড়া ধরতে থাকেন তাঁরা। কাঁকড়া ধরার সময়ে চরের কাছাকাছি চলে গেলে আচমকাই বাঘটি লাফিয়ে পড়ে ভগবতীর ওপর।

স্ত্রীকে চোখের সামনে ওই অবস্থায় দেখে বাঘের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বামী অতীন। বাঘে-মানুষের দীর্ঘক্ষণ চলে লড়াই। শেষে মানুষের কাছে হার মেনে জঙ্গলে ফেরে বাঘ। কিন্তু ততক্ষণে যে সব শেষ! বাঘ কামড় বসিয়ে দিয়েছিল ভগবতীর ঘাড়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্ত্রীর দেহ নিয়ে নৌকা বয়ে ফের গ্রামে ফেরেন স্বামী।

সূত্র :এই মুহুর্তে

আরও পড়ুন ::

Back to top button