বিশ্বে প্রথম চিনে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধল বার্ড ফ্লু ভাইরাস, কতটা সংক্রামক?
চলতি বছর জানুয়ারিতে ভারতেও বার্ড ফ্লুয়ের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান সহ কয়েকটি রাজ্যে শয়ে শয়ে পাখির মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। করোনা আবহে বার্ড ফ্লু তথা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোয় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে ভাইরাস পাখির শরীরেই মিলেছিল, মানুষের শরীরে ছড়ায়নি।
কিন্তু এবার চিনে মানুষের শরীরে ধরা পড়েছে বার্ড ফ্লুয়ের ভাইরাস। চিন যদিও দাবি করেছে, খুব বেশি সংক্রামক স্ট্রেন ছড়ায়নি। আক্রান্ত ব্যক্তিও নাকি সেরে ওঠার পথে। তবে কীভাবে মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকল সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। চিনের জিয়াংশু প্রদেশে ৪১ বছরের এক ব্যক্তির শরীর থেকে নেওয়া নমুনায় অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া গেছে। চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচসি) জানিয়েছে, জ্বর, সর্দি-কাশি ও অন্যান্য কিছু উপসর্গ নিয়ে গত ২৮ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ওই ব্যক্তিকে।
তখনও জানা যায়নি ওই ব্যক্তি অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত। ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাঁর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে এইচ১০এন৩ স্ট্রেন পাওয়া যায়। অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেরই একটি প্রজাতি এইচ১০এন৩। চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন দাবি করেছে, এই ভাইরাল স্ট্রেন খুব একটা সংক্রামক নয়। চিকিত্সার পরে ওই ব্যক্তিও নাকি এখন সেরে ওঠার পথে।
অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কি মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে? বার্ড-ফ্লু ভাইরাস হল বিশেষ ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যা শুধু পাখি নয়, মানুষ ও অন্যান্য পশুর শরীরেও সংক্রামিত হতে পারে। এই ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জাকে বলে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। থুতু-লালা ড্রপলেটের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার অনেক রকম প্রজাতি আছে, সবগুলোই যে ভীষণ সংক্রামক বা মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে তেমন নয়।
ভারতে যে ধরনের বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়েছিল তার নাম-এইচ৫এন১ এবং এইচ৭এন৯। দেশের কয়েকটি রাজ্যে মৃত পাখিদের নমুনায় এইচ৫এন১ (H5N1)ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। পাখিরা এই ভাইরাসের বাহক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ১৯৯৭ সালে প্রথম মানুষের শরীরে এই ভাইরাল স্ট্রেন চিহ্নিত করেছিল। মৃত পাখির দেহাবশেষের সংস্পর্শে এসেই মানুষের শরীরে সেই ভাইরাল স্ট্রেন ছড়িয়েছিল বলেই মনে করা হয়েছিল। ২০১৬-১৭ সালে এইচ৭এন৯ (H7N9)বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
আক্রান্ত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে মানুষের শরীরে আর এই ভাইরাস ঢুকতে দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের শরীরে ঢুকলে করোনাভাইরাসের মতোই দ্রুত বিভাজিত হতে পারে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন। উপসর্গও করোনা সংক্রমণের মতোই।
তবে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে ঠিকই, তবে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে এই ভাইরাল স্ট্রেন দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে কিনা, সে তথ্য এখনও মেলেনি। কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে: পাখির শরীরে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ঢুকলে ১০ দিনের মধ্যেই থুতু-লালার মারফত্ সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করবে।
সংক্রামিত পাখিদের সংস্পর্শে থাকলে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। ভাইরাল জ্বরের মতোই উপসর্গ। শুকনো কাশি, পেট খারাপ, শ্বাসকষ্ট। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, সেই সঙ্গে মাথাযন্ত্রণা। পেশির ব্যথাও শুরু হতে পারে রোগীর। সর্দি-কাশি, কফ জমতে থাকবে ঘন ঘন। গলা শুকিয়ে কথা বলার সমস্যা হবে।
সূত্র : দ্য ওয়াল