সরষের মধ্যেই ভূত? ATM জালিয়াতি কাণ্ডে পুলিশের নজরে এবার রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা
কলকাতার এটিএম থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে। এটিএম অক্ষত রেখেই ভেতরের টাকা সাফ করে ফেলছুল ছিনতাইবাজরা। তদন্তে জানা যায় ‘ম্যান ইন দ্য মিডল অ্যাটাক’ পদ্ধতি ব্যবহার করে হ্যাকাররা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। কলকাতায় একই পদ্ধতিতে তিনবার টাকা হাতানোর ঘটনা সামনে এলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
তদন্তের ফলে গোয়েন্দাদের নজর যায় হিতাচি কোম্পানির কর্মীদের ওপর। হিতাচি কোম্পানি এটিএমে টাকা ভরার দায়িত্বে থাকে। এই সংস্থাটিই আপাতত গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছে।
নিউ মার্কেটের একটি এটিএম থেকে কয়েকদিন আগেই টাকা গায়েব হয়ে যায়। এটিএমের টাকা গায়েব হয়ে গেলেও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে এটিএম মেশিনটি। সাইবার সেলের কর্মীরা সেই এটিএম কাউন্টারটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখেন। মেশিনের ‘কিহোল’ অর্থাত্ চাবি ঢোকানোর জায়গাটিতেই একটি সূত্র খুঁজে পান গোয়েন্দারা।
মেশিনের হুড খোলার জায়গাটিতে প্রমাণ পেয়েছেন। তদন্তে জানা যায় হ্যাকাররা এটিএম মেশিনের মধ্যে থাকা ল্যান পরিষেবার মধ্যেই কোনও ভাবে বিঘ্ন ঘটিয়ে মেশিনের সুত্রেই ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে পড়তে সক্ষম হচ্ছিল।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, মেশিনের হুড খোলা হয়েছে চাবি দিয়েই, তা একমাত্র মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের পক্ষেই সম্ভব। এরপরই ওই এটিএমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের দিকেই সন্দেহ গাঢ় হয় গোয়েন্দাদের। সেই সংস্থার কর্মীদেরই এবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান গোয়েন্দারা। তাদের একটি তালিকা তৈরি করা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
কোন কোন সংস্থা হ্যাকারদের হাআ চালানো সাতটি এটিএমে টাকা ভরত, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটিএমের দায়িত্বে যে সংস্থা রয়েছে, তার কোনও কর্মী গত কয়েক মাসে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন কিনা কিংবা ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কিনা, সেই বিষয়টিও দেখছেন গোয়েন্দারা। কারণ ‘ইনসাইডার রোল’ ছাড়া বাইরের লোকের কাছে এই পদ্ধতির স্পষ্ট জ্ঞান থাকা সম্ভব নয়।
গোয়েন্দারা মনে করছেন সংস্থার কোনও কর্মীই একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এখনও পর্যন্ত এটিএম লুঠের ঘটনায় কলকাতা ৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে ৬ টি অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার। সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে, তিন জনের একটি দল কাউন্টারে ঢুকে জালিয়াতি করছে। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্ত করছে গোয়েন্দারা। ভিন রাজ্য থেকে কেউ এসে এই কাজ করলেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সেক্ষেত্রে কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় হোটেলগুলিতেও নজর রাখা হয়েছে।
শহরের এটিএমগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য স্থানীয় থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক থানা এলাকায় কটা এটিএম কাউন্টার আছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে কোন কোন এটিএম কাউন্টারে নিরাপত্তা রক্ষী নেই, তাও চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
সেই এটিএম কাউন্টারগুলিতে বাড়তি নজরদারি চালাতেও বলা হয়েছে। প্রত্যেক থানার টহলদারি টিম এই নজরদারি চালাবে। লকডাউনে ফাঁকা রাস্তার সুযোগ নিয়ে আর কোনও টাকা যাতে গায়েব না হয় প্রত্যেক থানার পুলিশ আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে যে সমস্ত এটিএম কাউন্টারে নিরাপত্তারক্ষী নেই, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেও এই বিষয়ে সাবধান হতে বলা হয়েছে। যেসব এটিএম পুরনো প্রযুক্তিতে চলছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করেও ব্যাংকে জানাতে হবে। এটিএমের সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক মত কাজ করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। কোনওভাবে এটিএম হ্যাক হয়ে আছে কিনা, সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।
সুত্র :এই মুহুর্তে