রাজ্য

চেঁচাবে না, তোমার চেঁচানি শুনতে এখানে আসিনি : দিলীপ ঘোষ

চেঁচাবে না, তোমার চেঁচানি শুনতে এখানে আসিনি : দিলীপ ঘোষ - West Bengal News 24

একুশের ভোটযুদ্ধে ২০০’র ওপর আসন পাওয়ার ডাক দিয়ে যারা বাংলা দখল করতে এসেছিল, তাঁদের দৌড় থেকে গিয়েছে ৭৭ এর ঘরেই। আর সেই ফলাফলের ধাক্কায় কার্যত ছত্রভঙ্গ দশা গেরুয়া শিবিরের। চলছে পরস্পরকে দোষারোপের পালা। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। তার মধ্যেই রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে খবর আসছে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন বিজেপির কর্মীরা।

অথচ মজার কথা, যারা ভোটের সময়ে বাংলা চষে বেড়িয়েছেন জনসংযোগের জন্য তাঁরাই এখন বেমালুম উধাও দলেরই কর্মীদের পাশ থেকে। না তাঁদের ফোন ধরেন তাঁরা, না তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। পাশে দাঁড়ানোর তো কোনও প্রশ্নই নেই। কার্যত এই কুত্‍সিত মানসিকতার চরম নিদর্শন দিয়ে দিলেন খোদ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি পাল্টা শুনিয়ে দিলেন, ‘চেঁচাবে না, তোমার চেঁচানি শুনতে এখানে আসেনি।’ তাঁর এই মন্তব্যই এখন ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর যথারীতি মুখ পুড়ছে বিজেপির।

শুক্রবার, চুঁচুড়াতে হুগলি সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে দলীয় বৈঠক করতে আসেন দিলীপবাবু। বৈঠক থেকে বেরনোর পরেই বিজেপির কর্মীর রাজ্য সভাপতিকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সাময়িকভাবে মেজাজ হারিয়ে কর্মীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন দিলীপবাবু। তাঁকে বল তে শোনা যায়, ‘ভদ্রভাবে কথা বলো। তোমার চেঁচানি শুনতে এখানে আসিনি। চেঁচাবে না। পার্টির জন্য মার খেয়েছ তো কী হয়েছে! আমি দশবার মার খেয়েছি। তুমি কতবার মার খেয়েছ!

বিজেপি করবে আর মার খেতে পারবে না! তাহলে পার্টি ছেড়ে দাও, তৃণমূল করো। এখন এভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করো না।’ দিলীপবাবুর এই মন্তব্যই এখন ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। অভিযোগ, দলের কর্মীরাই দলের রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্য ও মানসিকতাকে ভালো ভাবে নেননি ও তাঁরাই এই ভিডিও নানা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলই লোক পাঠিয়ে এসব করছে। কোনও বিজেপি কর্মী এই সব কাজের সঙ্গে যুক্ত নন।

তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার যারা বিক্ষোভ দেখিয়েছন তাঁরা সকলেই দলের আদি কর্মী। তাঁদের হিসাবে এবার দল হেরেছে প্রার্থী নির্বাচন ঠিক মতন করেনি বলেই। তৃণমূল থেকে আসা দাগীদের প্রার্থী করায় আমজনতা বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘ভুল প্রার্থী নির্বাচনের জন্যেই জেতা আসন খোয়াতে হয়েছে দলকে। বাংলায় এত বড় হার বিজেপির হতো না। শুধুমাত্র ভুল প্রার্থী নির্বাচনের জেরে জেতা আসন হেরে যেতে হয়েছে।

জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় একজন জোচ্চোর, চিটিংবাজ। আর তুষার মজুমদার ধনিয়াখালির প্রার্থী নিজেকে ডাক্তার বলে। ওঁর কোনও ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেই। সবটাই মিথ্যে বলে। যারা দিনের বেলা বিজেপির সঙ্গে থেকে রাতের বেলা তৃণমূলের ঘরে গিয়ে টাকাপয়সার ভাগ-বাটোয়ারা করে তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে।

বালিখাদানের বালি চোর, সিন্ডিকেটের দালাল এরা সব। আমরা অবিলম্বে জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও দীপাঞ্জন গুহর অপসারণ চাই। আমরা প্রথম দিন থেকে পার্টির কাছে দায়বদ্ধ। তৃণমূলের মতো জোচ্চোর চিটিংবাজদের আমরা চাই না। আমাদের কর্মীরা পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে। কতজন ঘর ছাড়া। ঘরে ফিরতে পারেনি। কতজন তো প্রাণের ভয়ে কার্যালয়েই পড়ে আছে। এদের সকলের দায়িত্ব পার্টিকে নিতে হবে। এর আগে অনেকবার লিখিত দিয়েছি, কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা।’

ঘটনা হচ্ছে এটাই যে এই ক্ষোভের সামনে দিলীপের অহং এতটাই খারাপ দেখিয়েছে যে রাজ্য বিজেপির নেতারাই এখন দিলীপের মুখ বন্ধের সেন্সর চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। এই দুরাবস্থার মুখে দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে নিজের অহং দেখানো কখনই মানবিকতা বা সুষ্ঠ মানসিকতার লক্ষ্মণ হতে পারে না এটা এখন মানছেন বিজেপির নেতারা।

সুত্র : এই মুহুর্তে

আরও পড়ুন ::

Back to top button