রাজ্য

স্টিল অথারিটি অব ইন্ডিয়ার দফতর স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ নবান্ন, দিল্লিকে চিঠি অর্থমন্ত্রীর

স্টিল অথারিটি অব ইন্ডিয়ার দফতর স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ নবান্ন, দিল্লিকে চিঠি অর্থমন্ত্রীর - West Bengal News 24

স্টিল অথারিটি অব ইন্ডিয়া (সেল)-এর কাঁচামাল সরবরাহকারী বিভাগ বা আরএমডি-র হেডকোয়ার্টার কলকাতা থেকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে চিঠি পাঠালেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

তাঁর সাফ দাবি, চলতি কোভিডের মধ্যে কেন্দ্রের এহেন সিদ্ধান্তে অনেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী কাজ হারাবেন। এ ছাড়া কলকাতায় কর্মরত শতাধিক স্থায়ী কর্মচারীকেও ট্রান্সফারের জেরে ভিনরাজ্যে পা বাড়াতে হবে। অতিমারীর মধ্যে পরিবার-পরিজন, ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাঁদের যাতায়াতে প্রবল ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্রের খবর অনুযায়ী গত ১০ জুন সেলের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে ওই দপ্তরটি কলকাতা থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়।

উক্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলি। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে আরও বড় ক্ষতির সম্ভাবনার কথা চিঠিতে লিখেছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর মতে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতে চলেছে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) এবং ইসকো।

কারণ, ৩২ বছর ধরে কলকাতায় থাকা কাঁচামাল সরবরাহের এই বিভাগটি তুলে ঝাড়খণ্ডের বোকারো ও ওড়িশার রাউরকেল্লার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে ওই দুই রাজ্যে সেলের বিভিন্ন কারখানা লৌহ আকর খনির সঙ্গে যুক্ত হলেও সেক্ষেত্রে ডিএসপি এবং ইসকো বঞ্চিত থাকবে।

কোনও খনির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ায় তাদের খোলা বাজার থেকে চড়া দামে লৌহ আকর কিনতে হবে। এই সূত্র ধরেই রাজ্যের মন্ত্রীর দাবি, গোটাটাই কেন্দ্রের পরিকল্পিত চক্রান্ত। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের শোধ নিতেই এমনটা করা হচ্ছে। চিঠির শেষে অবশ্য সুর নরম করে রাজ্যের শিল্পকে বাঁচাতে ও দুই প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আর্জি জানান তিনি।

শিল্পমহলের খবর, কলকাতায় আরএমডি যাত্রা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই সেটি সরানোর ভাবনা শুরু হয়। জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে এই ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেওয়ায় দিল্লি আর অগ্রসর হয়নি। বস্তুত ইস্পাত শিল্প ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ নতুন নয়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই মাশুল সমীকরণ নীতি চালু করে গোটা দেশে লৌহ আকর এক দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত করায় খনি থাকার বাড়তি সুবিধা হাতছাড়া হয় বাংলা ও বিহারের।

ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের সাক্ষী বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের লাগাতার চাপের মুখে বাংলাকে সন্তুষ্ট করতে ১৯৫৭-তে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা স্থাপন করে কেন্দ্র। অন্যদিকে, ১৯১৮- বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হয় বার্নপুরের কারখানা। পরে যা সরকার অধিগ্রহণ করে। সেলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে উপকৃত হবে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড। এর পিছনে রাজনীতির অঙ্ক থাকা অসম্ভব নয়, মনে করছে একাংশ।

ওডিশার মানুষ পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং স্ট্রিল মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ধর্মেন্দ্র প্রধানকে বিগত কয়েক বছর যাবত্‍ মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের মোকাবিলায় দলের মুখ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। আরএমডির সদর দপ্তর সরানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে কীভাবে রাজ্যের ইস্পাত কারখানা দুটি বিপদে পড়তে পারে তা ব্যাখ্যা করতে চিঠিতে বাংলার অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, এতদিন ধরে আরএমডি-র সুবাদে দুর্গাপুর ও বার্নপুরের কারখানা ৬৫০ টাকা প্রতি টনে যে কাঁচামাল পাচ্ছিল, এবার খোলা বাজারে সেটাই ৯ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে।

এর ফলে তাদের অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে এগোতে হবে। যা অচিরেই প্ল্যান্টগুলিকে ভয়াবহ আর্থিক মন্দার মুখে ঠেলে দেবে। অমিতবাবুর দাবি, বাংলার দু’টি কারখানাই সম্প্রতি লাভের মুখ দেখেছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে আরএমডি সরানো এবং প্ল্যান্টগুলিকে কোনও খনির আওতায় না আনার জোড়া ধাক্কা প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ জন কর্মীর পক্ষে বিপজ্জনক।

পাশাপাশি চিঠিতে অভিযোগের সুরে অমিত মিত্র এও জানান যে, কেন্দ্রের ঘোষণার প্রতিবাদ জানাতে সম্প্রতি সেলের কর্মী সংগঠনের কয়েকজন প্রতিনিধি দিল্লির ইস্পাত ভবনে নবনিযুক্ত চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নাকি সাফ জানান, খোদ ইস্পাত মন্ত্রী এই নির্দেশের সঙ্গে জড়িত। তাই তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন ::

Back to top button