জানা-অজানা

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি

একটা বাড়ি ঝর্ণার ওপর। কৃত্তিম ঝর্ণা না। প্রাকৃতিক ঝর্ণা সঙ্গে নিরেট বড় বড় পাথর। এর ওপরেই একটি বাড়ি। কল্পনা করে দেখুন তো একবার। কেমন রোমাঞ্চকর মনে হয় না?

এমনি একটি বাড়ি আছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায়। ১৯৩০ এর মাঝামাঝি সময়ে এ বাড়িটি নির্মাণ করেন সেসময়ের বিখ্যাত মার্কিন স্থপতি ফ্র্যাঙ্ক লিওড রাইট। প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং বেডরকের ওপর নির্মাণ করেন তিনি ‘ফলিং ওয়াটার’।

পিটসবার্গের এডগার্ড জুনিয়র কফম্যান নামে এক ব্যবসায়ী মার্কিন এ স্থপতিকে পাহাড়ের ওপরে একটি বাড়ি নির্মাণ করার প্রস্তাব করেন যেখান থেকে তিনি ঝর্ণা দেখতে পারবেন। খেয়ালী স্থপতি রাইট জবাব দিলেন, আমি চাই না আপনি শুধু ঝর্ণা দেখবেন। বরং আমি চাই আপনি ঝর্ণার সঙ্গেই থাকবেন। আর তখনই স্রোতস্বিনী ঝর্ণার ওপর এ দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন রাইট।

টানা কয়েক মাসের গবেষণা এবং কয়েক হাজার খসড়ার নকশার মধ্যে দিয়ে বাড়িটির নকশা চূড়ান্ত হয়। নকশা তৈড়িতে এ স্থপতিকে মাথায় রাখতে হয় গাছ, পাথর, নদী এবং ঝর্ণার। পুরো নির্মাণশৈলীতে পাওয়া যায় রাইটের সৃজনশীল এবং একগুয়ে ও খামখেয়ালী কাজের ছাপ।

বাড়ির মালিক যেন তার করা নকশার পরে পরিবর্তন করতে না পারেন তাই বাড়িটির বেশিরভাগ আসবাবই বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তার খামখেয়ালীর একটি গল্প বেশ প্রচলিত যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপত্য শিল্পে।

রাইটের নকশায় নির্মাণ করা একটি বাড়ির মালিক ছাদ থেকে পানি পরার অভিযোগে ফোন করেন তাকে। ফোনে তিনি জানান, ছাদ থেকে পানি পরার কারণে তাকে বারবার চেয়ার নিয়ে জায়গা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। জবাবে রাইট বলেন, আমার নকশায় যেখানে চেয়ারের অবস্থান ছিল আপনি সেখানেই চেয়ার রেখে বসুন। আপনি আমার নকশা মানকে কমিয়ে দিচ্ছেন।

১৯৩৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর টাইম ম্যাগাজিন আখ্যায়িত ‘মোস্ট বিউটিফুল জব ফলিং ওয়াটার’ নির্মাণে ব্যয় হয় সেসময়ের ১লাখ ৫৫ হাজার ডলার। যা বর্তমান সময়ে ২.৭ মিলিয়ন ডলারের সমান। আর পুরো প্রকল্পে রাইট পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৮০ হাজার ডলার। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে সংস্কার কাজেই বাড়িটির পিছনে ব্যয় হয় ১১.৫ মিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি

বাড়িটির মালিক এডগার পত্নী লিলিয়ানে ১৯৫২ সালে আত্মহত্যা করেন। এর তিন বছর পর মারা যান ডগার। এরপর ১৯৬৩ সালে তাদের সন্তান এডগার জুনিয়র বাড়িটিকে ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়া কনজারভেন্সী কর্তৃপক্ষকে দান করেন। তবে ১৯৮১ সালে এডওয়ার্ড জুনিয়র তার সহধর্মিণী পল মায়েনকে নিয়ে বাড়িটিতে একটি ক্যাফে এবং গিফট শপ চালু করেন। একজন সাধারণ দর্শনীর্থী হিসেবেও যে কেউ ঘুরে দেখতে পারে গাড়িটি। পিটসবার্গ থেকে ২০কি.মি দূরে অবস্থিত এ বাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮১ সালের পর এখন পর্যন্ত বাড়িটি পরিদর্শনে আসেন অন্তত ৫লক্ষ দর্শনার্থী।

সেসময়ে ইউরোপিয়ান ধাচের বাড়ি বানানোর রীতির বাইরে গিয়ে বানানো ‘ওয়াটার ফল’-কে আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্ট ‘আমেরিকান স্থাপত্য কাজের মধ্যে সর্বকালের সর্বসেরা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আমেরিকান আর্কিটেক্ট এসোসিয়েশনকে প্রত্যাখ্যান করা এ খামখেয়ালী স্বাধীনচেতা স্থপতি ১৯৫৯ সালে ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বলা হত ‘বয়স্ক শিক্ষানবিশ’। তিনি উত্তর দিতেন- ‘পৃথিবীর সবথেকে বয়স্ক শিক্ষানবীশ।

আরও পড়ুন ::

Back to top button