মেদিনীপুর: তিনি একাধারে বাচিক শিল্পী, নাট্যকর্মী, লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক, মানবাধিকার কর্মী এবং নিজে ক্যানসারজয়ী। মেদিনীপুরের বাসিন্দা ৬৭ বছরের দীপক বসুর জন্ম মধ্যপ্রদেশের কাটনি শহরে।
বাবা ছিলেন খড়্গপুর আইআইটি-র কর্মী। তাই স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে খড়্গপুরে। সত্তরের দশকে আইআইটি-র কর্মী আবাসনেই গড়ে তুলেছিলেন আবৃত্তি ও নাটকের অবৈতনিক প্রতিষ্ঠান ‘শিশুতীর্থ’। ১৯৭২ সালে কলেজে পড়ার সময়ে খড়্গপুরে গড়ে তুলেছিলেন নাটকের দল ‘মিলেনিয়াম’। ‘নীলকন্ঠের বিষ’, ‘কবর’, ‘মর্জিনা আবদুল্লা’র মতো মঞ্চ সফল বহু নাটকে দীপক অভিনয় করেছেন। ওই সময়ে দীপকের লেখা ‘মিউনিখ থেকে মহেঞ্জদরো’ নাটকটি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। তিনটি মঞ্চে ত্রি-মাত্রিক মঞ্চাভিনয়নের জন্য অভিনব নাটকটি সাড়া ফেলেছিল।
খড়্গপুর থেকে তাঁর সম্পাদনায় ‘রোদ্দুরে’, ও ‘ডুলুং’ নামে দু’টি সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশিত হত। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর দীপক অবশ্য একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরির সূত্রে ১৯৮৩ সাল থেকে বছর সাতেক চেন্নাইবাসী ছিলেন। সেখানেই প্রবাসী বঙ্গতনয়া দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়া। দীপার সঙ্গে ঘর বাঁধেন।
চেন্নাইয়ে থাকাকালীন সেখানকার বাঙালিদের নাটকের দল ‘ক্যাজ়ুয়াল ড্রামাটিক’-এর সঙ্গে যুক্ত হন। চেন্নাইয়ে থাকাকালীন সেখানে ‘শাহজাহান’, ‘অয়দিপাউস’ ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’, ‘একটি অবাস্তব গল্প’, ‘বর্ধমানের বর বরিশালের কনে’, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’-এর মতো অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। চেন্নাইয়ে সেখানকার প্রথম বাংলা সাহিত্যপত্রিকা ‘একলব্য’ সম্পাদনা করেন।
নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি সংস্থার চাকরির বদলি সূত্রে মেদিনীপুর শহরে ফেরেন। মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রস্মৃতি সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘মৃত্যুর চোখে জল’-এর মতো একাধিক মঞ্চ-নাটকে অভিনয় করেছেন। ২০০০ সালে বেসরকারি সংস্থার চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে একটি প্রকাশনা সংস্থায় যুক্ত হন। ২০১৬ সালে শেষবার মেদিনীপুরের মঞ্চে ‘জুতা আবিষ্কার’ নাটকে অভিনয় করেছেন।
২০১৮ সালে মেদিনীপুর শহরের একটি যাত্রাদলের প্রযোজনায় ‘সোনাইদিঘি’ যাত্রাপালায় ভাটুক ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করেন। মেদিনীপুরে নবপর্যায়ে ডুলুং-এর প্রকাশ শুরু করেন। ডুলুং-এর জন্য ১৯৯৪ সালে কলেজ স্ট্রিটের কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র পুরস্কারও পেয়েছেন দীপক। তাঁর ছেলে শুভদীপ বসুও একজন প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী।
শুভর সংস্থা ‘স্বর-আবৃত্তি’র অসংখ্য শ্রুতি নাটকে কন্ঠাভিনয় করেছেন দীপক। এখনও শ্রুতিনাটক করছেন। দীপক নিজে ক্যানসার জয়ী। ভেলোর সিএমসি-র জার্নালে ক্যানসার সংক্রান্ত তাঁর লেখা প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। ‘মেদিনীপুর ক্যান্সার কেয়ার’-এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদকও তিনি।