বিচিত্রতা

শ্রাদ্ধের শেষে কফিন থেকে উঠে আসেন মানুষ। এমনটাই রীতি এই দেশের

শ্রাদ্ধের শেষে কফিন থেকে উঠে আসেন মানুষ। এমনটাই রীতি এই দেশের

সাধারণত ৬০-এর আশেপাশে বয়সের মানুষেরাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অন্য দিকে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার কারণেই সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তির পথ খোঁজেন।

চিরজীবী হওয়ার স্বপ্ন আধুনিক প্রজন্মের একটা বড় অংশের কাছেই মূল্যহীন। যান্ত্রিক জীবন, সাফল্যের প্রতিযোগিতায় নিজেকে সঁপে দেওয়ার প্রবণতা— অনেক মানুষকেই জীবনবিমুখ করে তোলে। পরিণামে তাঁরা বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে দৈনিক আত্মহত মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক। প্রতি দিন এই দেশে গড়ে ৪০ জন মানুষ নিজের জীবনকে শেষ করে দেন। এই প্রবণতা কমানোর জন্য সরকারের তরফে সেই দেশে এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে মৃত্যু অভিজ্ঞতা কিংবা নকল শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের একটি প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের অধীনে একজন মানুষ নিজেই নিজের মৃত্যু-পরবর্তী সৎকারের আয়োজন করেন। আশা করা হয়, এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই জীবনমুখী হয়ে উঠবেন তিনি।

কীভাবে পালিত হয় এই নকল শ্রাদ্ধানুষ্ঠান? প্রথমে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিটির একটি ছবি ফ্রেমে সাজিয়ে তার সামনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একাধিক মোমবাতি, যেমনটা কোনও শ্রাদ্ধে মৃত ব্যক্তির ছবির সঙ্গে করা হয়। ছবির সামনে বসেই আত্মহত্যাকামী মানুষটিকে তাঁর নিজের উইল, পরিজনদের প্রতি বার্তা, কিংবা তাঁর কবরে যা লেখা থাকবে, তা লিখতে বলা হয়। অধিকাংশ মানুষ এই পর্বেই আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুবাসনা ত্যাগ করেন।

যাঁরা আর একটু শক্ত মনের, তাঁরা এগিয়ে যান অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্বের দিকে। সৎকারকর্মে পারদর্শী এক জন পুরোহিত এর পর এসে ওই ব্যক্তির হাত বেঁধে দেন। চোখে বেঁধে দেন একটি কাপড়। তার পর তাঁকে একটি মৃতদেহের মতোই শুইয়ে দেওয়া হয় কফিনের ভিতরে এবং কফিনের ডালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটা অন্ধকার ঘরে নিয়ে গিয়ে কফিনটি রেখে দেওয়া হয় আধ ঘন্টার জন্য। কফিনে শোওয়ানোর আগে মৃত্যুকামী মানুষটিকে বলা হয়, কফিনে শুয়ে তিনি যেন জীবনে তাঁর কৃতকর্মের কথা ভাবেন। সাধারণত অন্ধকার কফিনের ভিতরে শুয়ে নিজের যাপিত জীবন ও আত্মীয়-পরিজনদের কথা ভাবতে ভাবতেই অধিকাংশ মানুষ আত্মহত্যার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন বিগত কয়েক বছরে আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সাধারণত ৬০-এর আশেপাশে বয়সের মানুষেরাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অন্য দিকে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার কারণেই সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তির পথ খোঁজেন।

এমতাবস্থায় মানুষকে জীবনের দিকে ফিরিয়ে আনতে ভুয়ো শ্রাদ্ধের আয়োজন করে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসন।

আরও পড়ুন ::

Back to top button