বয়স ৮২-র কাছাকাছি। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শিশির অধিকারী বর্তমানে বর্ষীয়ান সাংসদ। আর এমন সময়েই অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসছে ভুরি ভুরি, চলছে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ। আর এর নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলের ‘বাবাকে বলো’ প্রচার। থানায় অভিযোগ দায়ের করেও সুরাহা মিলেনি, তাই এবার এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। যদিও এ বিষয়ে এখনও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যায়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে।
কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় গত ১১ জুন তৃণমূলে যোগ দিতেই তার বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে সরব হওয়ার শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন তিনি। পাল্টা শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে গত মঙ্গলবার বিধানসভায় বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশে তির্যক মন্তব্য করেন নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক।
তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘আমরা লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন হারিয়ে একটি কর্মসূচি নিয়েছিলাম। যেখানে বলা হয়েছিল কন্যাশ্রী না পেলে দিদিকে বলো। রূপশ্রী না পেলে দিদিকে বলো। এবার দেখছি দলত্যাগবিরোধী আইন নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অনেক কিছুই বলছেন। কিন্তু তাঁর বাবা শিশির অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের পরেও কেন তৃণমূল সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেননি? তাই বিরোধী দলনেতাকে বলব, আপনি বাবাকে বলো কর্মসূচি নিন।’ তারপরেই শাসকদলের নিচুতলার কর্মীরা ‘বাবাকে বলো’ লোগো তৈরি করে নেটমাধ্যমে প্রচার শুরু করেন।
যেখানে পদ্ম প্রতীকের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারীর ছবি ও মোবাইল নম্বর। সেই প্রচারে লেখা হয়, শুভেন্দু অধিকারী যখনই দলত্যাগ বিরোধী আইনের কথা বলবেন তখনই তাঁকে বলবেন ‘বাবাকে বলো’।
এরপর একের পর এক ফোন আসছে থাকায় বেজায় চটেছেন দিব্যেন্দু অধিকারী। তিনি শুক্রবার রাতেই এ নিয়ে কাঁথি থানায় হাজির হন। ওই লোগো নেট মাধ্যমে যারা ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। পরে অভিযোগ করেছিলেন, সাংসদ হওয়া সত্বেও বেশ কয়েক ঘণ্টা তাঁকে বসিয়ে রেখেছিল পুলিশ। তারপর অভিযোগ নেয়। যে ৫ জনের বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাংসদ দিব্যেন্দু, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি তাঁর। তাই এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছেন তিনি।
যদিও আগেই তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই ধরনের প্রচারের সমালোচনা করেছেন। দল কোনওভাবেই এই সমস্ত প্রচারকে সমর্থন করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। যদি কেউ শিশির অধিকারীর ব্যক্তিগত ফোন নম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
পাশাপাশি তিনি সব সমস্যার সমাধান বাতলে দিয়েছেন। কুণাল ঘোষের মতে, ‘শিশির অধিকারী বিজিবিতে যাওয়ার পরেও তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়েননি। তার ওপর তাঃর ছেলে বিরোধী দলনেতা প্রতিদিন দল বিরোধী আইন নিয়ে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। অথচ নিজের বাবাকে কিছু বলতে পারছেন না। আর সেই কারণেই এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিশির অধিকারীকে। তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
সূত্র : এই মুহুর্তে