ঝাড়গ্রাম

সুস্থ হয়ে ফিরল ‘পুচকু’, স্বাগত জানালেন ঝাড়গ্রামবাসী

স্বপ্নীল মজুমদার

সুস্থ হয়ে ফিরল ‘পুচকু’, স্বাগত জানালেন ঝাড়গ্রামবাসী - West Bengal News 24

ঝাড়গ্রাম: হৃৎপিণ্ডের সফল অস্ত্রোপচারের পরে বাড়ি ফিরল ‘পুচকু’। বেলুন দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে ঝাড়গ্রাম শহরে নিজের বাড়িতে ফিরল একমাসের সদ্যোজাত রণদীপ সেনগুপ্ত। তবে ঝাড়গ্রামবাসী শিশুটির নাম দিয়েছেন পুচকু। গত ২০ জুলাই হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ছ’ঘন্টা অস্ত্রোপচারের পরে শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবার বাসিন্দা পেশায় টোটোচালক সন্দীপ সেনগুপ্ত ও আশালতার একমাত্র সদ্যোজাত সন্তান রণদীপকে মঙ্গলবার স্বাগত জানালেন ঝাড়গ্রামবাসী।

গত ২৯ জুন গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সিজার করে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল পুচকু। কিন্তু জন্মের পরই শিশুটির হৃদপিণ্ডের সমস্যা ধরা পড়ে। ঝাড়গ্রাম ও কলকাতার চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান শিশুটি জন্মগত বিরল হৃদপিণ্ডের রোগে আক্রান্ত। শিশুটির টিজিএ (ট্রান্স পজিশন অফ গ্রেট আর্টারিস), রাইট ভেন্ট্রিকুলার হাইপার ট্রফি, আর্টরিয়াস আ্যট্রয়িাল সেপটাল ডিফেক্ট ছিল। হৃদপিণ্ডের এই ত্রুটি সারাতে অস্ত্রোপচার জরুরি।

সুস্থ হয়ে ফিরল ‘পুচকু’, স্বাগত জানালেন ঝাড়গ্রামবাসী - West Bengal News 24

শিশুটির জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় ১৬ জুলাই শিশুটিকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি করানো হয়। পরদিন সকালে শিশুটির পরিজনেরা একটি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে করে এক প্রাক্তন কাউন্সিলারের মাধ্যমে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু কিছুদূর যেতেই শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

দ্রুত শিশুটিকে হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ফেসবুকে পুচকুর চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে অনেকে পোস্ট করেন। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন শিক্ষক তমাল চক্রবর্তী, সিপিআই নেতা প্রতীক মৈত্র, বাছুরডোবা ইয়ং ইলেভন ক্লাবের সম্পাদক ভিকি দে, কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের ২০০০ সালের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রাক্তনীদের সংগঠন সহ বিভিন্ন ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা।

বনপ্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও উদ্যোগী হন। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় কয়েক ঘন্টার মধ্যে এক লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়। কলকাতা থেকে সিসিইউ পরিষেবা যুক্ত অ্যাম্বুল‍্যান্স আসে। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষের সহযোগিতায় পুলিশ এসকর্ট দিয়ে সিসিইউ অ্যাম্বুল‍্যান্সে করে শিশুটিকে হওড়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের দিনে শিশুটিকে ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দিতে ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা ক্রিকেটার সোমনাথ দাস, বেসরকারি সংস্থার কর্মী রোহিত সিনহা, শিক্ষক অনুপ ঠাকুরের মতো কয়েকজন হাওড়ার ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

শিশুটির বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড ছিল। হাওড়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা পাওয়া যায়।স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। সন্দীপ ও আশালতা বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রামবাসীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’’ সন্দীপ জানালেন, স্বাস্থ‍্যসাথী প্রকল্পের বরাদ্দ দ্রুত পাওয়ার ক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক চন্দন শতপথীও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।

সন্দীপ বলছেন, “আমার সামান্য রোজগারে সন্তানের জটিল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা ছিল না। ঈশ্বরের দূত হিসেবে ঝাড়গ্রামবাসী যেভাবে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছেন, তাতে আমি সবার কাছে চির কৃতজ্ঞ!”

আরও পড়ুন ::

Back to top button