বন্যার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন ৪৪ হাজারের বেশি জমির ফসল, সরকারের কাছে কৃষকদের সাহায্যের দাবি
দুর্বল নিম্নভাপের জেরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি। তার জেরেই ফুলে ফেঁপে উঠেছিল কংসাবতী, ক্ষীরাই, শিলাবতী। সেই সব নদীর জলেই ডুবেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ন অংশ। এখনও সেই জেলার বেশ কিছু জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সেই জল দাঁড়ানোর জেরে জেলায় এবার চাষের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছুঁতে চলেছে। কেননা জমি থেকে জল নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি দফতর।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে এবারের বন্যায় জেলার প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪৭৫ কোটি টাকা, যা আরও বাড়তে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের। জানা গিয়েছে, যে দুর্বল নিম্নচাপের জেরে বাংলায় টানা ৩দিন ধরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছিল তার জেরে শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই ২৮, ২৯ ও ৩০ জুলাই গড়ে ২৪৬ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরেই এখনও চাষের জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে রয়েছে।
জেলার মধ্যে ৮টি ব্লক সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ৮টি ব্লক হল কেশপুর, ঘাটাল, দাসপুর-১, দাসপুর-২, চন্দ্রকোনা-১, চন্দ্রকোনা-২, মেদিনীপুর সদর এবং গড়বেতা-১ ব্লক। এই ৮টি ব্লকের ৪৪,২৩৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে কমবেশি ১,৪৩৮টি মৌজার ঘরগেরস্থালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৪৪,২৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হচ্ছে এবারে। তার মধ্যে ৩,৫৪১ হেক্টরে বীজতলা লাগানো হয়ে গিয়েছিল।
পাশাপাশি ৩৬,৭৫৯ হেক্টর জমিতে ছিল খরিফ মরসুমের ধান, ৯০ হেক্টরে ছিল চিনাবাদাম, ৩৯০ হেক্টরে ছিল পাট। ৩,৪৫৫ হেক্টর জমিতে ছিল আনাজ-সহ অন্য ফসল। এইসবই নষ্ট হয়েছে। যার জেরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪৭৫ কোটি ৪৮ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। জমি থেকে জল পুরো নেমে গেলে এই ক্ষতির বহর আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মোট ক্ষয়ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।
জেলার কৃষিক্ষেত্রে এই ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা(প্রশাসন) দুলাল দাস অধিকারী জানিয়েছেন, ‘ব্লকগুলি থেকে কৃষিক্ষেত্রের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে। রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। এখনও কিছু জমিতে জল জমে রয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর আছে। দিন কয়েক টানা বৃষ্টি হয়েছে। যে জমিতে সচরাচর জল জমে না, এ বার সে জমিতেও জল জমেছে। তবে অনেকেরই শস্যবিমা করা রয়েছে। তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন। এরপর সরকার যেমন ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করবে, সেই মতো দেওয়া হবে।’
সুত্র : এই মুহুর্তে